সিটা প্রকল্প যথাযথ পরিমার্জনের আহ্বান
Published: 1st, November 2025 GMT
বিদেশি ঋণের অপচয় রোধ, কার্যকর অটোমেশন ও সফটওয়্যার–শিল্পের বিকাশের স্বার্থে সিটা প্রকল্পের যথাযথ পরিমার্জনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৩২ শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ আহ্বান জানান।
স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি (সিটা) হলো একটি প্রকল্প, যা বাংলাদেশ সরকারের পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সিটা প্রকল্পে অহেতুক বিদেশভ্রমণ, ৩১৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৫ কোটি টাকায় বিদেশে প্রশিক্ষণ, অপ্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ২০০ কোটি টাকায় কেনা, যা প্রায় ৫ গুণ বেশি ব্যয় পরিকল্পনায় আছে। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্যর্থ এইভিএএসের (এনবিআর ভ্যাট অটোমেশন) জন্য ৩৭০ কোটি টাকা পুনরায় বরাদ্দ করা হচ্ছে। দেশের অনুপযোগী এসএপি প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে চালু কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ ই-জিপি আপগ্রেডেশনে বরাদ্দ ২৩৫ কোটি টাকা। এ ধরনের তুলনামূলকভাবে অগুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারে বিপুল বরাদ্দ অপ্রয়োজনে বিদেশি কোম্পানি ও পরামর্শকদের যুক্ত করার ইঙ্গিত দেয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত তিন হাজার কোটি টাকার সিটা প্রকল্পকে অপরিণামদর্শী ও বিদেশনির্ভর বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, প্রকল্পের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থের বড় অংশ বিদেশি সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে। দেশেই এসব কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে।
এতে বলা হয়, সিটা প্রকল্পের (একনেকে শর্ত যুক্তভাবে অনুমোদিত, ঋণচুক্তি বাকি) আওতায় দেশীয় কোম্পানিগুলোকে দুর্নীতিমুক্তভাবে নির্বাচন করে ৫০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার তৈরি করা যেত। এতে ৪ হাজার সফটওয়্যার প্রকৌশলীর ৫ বছরের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতো।
বিবৃতিদাতারা দেশের স্বার্থ ও সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থ অগ্রাধিকার দিয়ে সিটা প্রকল্পটি নতুন করে সাজানোর আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে সই করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা আকবর, মাইক্রোসফটের পার্টনার রিসার্চ ম্যানেজার সুমন নাথ, সোনালী ব্যাংকের সিআইটিও রেজওয়ান আল বখতিয়ার, বুয়েটের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক অনিন্দ্য ইকবাল, অধ্যাপক রিফাত শাহরিয়ার, ব্রেইন স্টেশন-২৩–এর সিইও রাইসুল কবির, বারিকই টেকনোলজিস লিমিটেডের সিইও আল আমিন সরকারসহ ৩২ শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সফটওয় য র প রকল প আহ ব ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে সরকারি চিকিৎসায় আস্থা ফেরাতে ডিসির উদ্যোগ
নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা না দিয়ে বহু রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন।
অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, শুধুমাত্র কিডনি, ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রেফার করা হয়। এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পর বিষয়টির প্রকৃত চিত্র জানতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) তিনি ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে একটি আধুনিক হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালুর পাশাপাশি তিনটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করেন।
হাসপাতালের তিনটি পৃথক স্থানে বসানো এই ডিজিটাল বোর্ডগুলোতে প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য দেখা যাবে—কতজন রোগী ভর্তি আছেন, কতজন রিলিজ পেয়েছেন, এবং কোন কারণে কতজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এই প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ রোগীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের আস্থাহীনতা ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “আমাদের কাছে বারবার অভিযোগ এসেছে—রোগীরা চিকিৎসা নিতে এলে তাদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা যখন হাসপাতালে ভিজিট করি, দেখি প্রতিটি বেডে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মাসে প্রায় ৬৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“তাহলে প্রশ্ন হলো—কেউ বলছে হাসপাতালে গেলেই রেফার করা হয়, কেউ বলছে সেবা দেওয়া হচ্ছে—আসল চিত্রটা কী? আমরা সেটিই জনসমক্ষে আনতে চেয়েছি।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিদিনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে কতজন রোগী এসেছেন, ভর্তি হয়েছেন, রেফার হয়েছেন, কেন রেফার করা হয়েছে, কতজন অপারেশনে গেছেন এবং কতটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।”
ডিসি জাহিদুল বলেন,“এই উদ্যোগের মাধ্যমে হাসপাতাল নিয়ে যে ভুল ধারণা ও সন্দেহ ছিল, তা দূর হবে। সরকার সাধারণ মানুষের জন্য হাসপাতাল তৈরি করেছে—মানুষ সেখানে এসে সেবা নেবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আজকের এই ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে আমরা চাই, আর যেন কোনো বিভ্রান্তি বা সন্দেহের অবকাশ না থাকে। মিডিয়া কর্মী হোন বা রোগীর স্বজন সবাই সহজেই জানতে পারবেন প্রতিদিন কতজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বা রিলিজ পেয়েছেন।”
হাসপাতালের বিভিন্ন চলমান সমস্যায় তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “দ্রুতই ৩০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য। স্বাস্থ্য বিভাগ ও আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন,“আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এই মাসে প্রায় ২০০ রোগীর বড় অপারেশন হয়েছে।
তবে কিছু রোগীকে রেফার করতেই হয়, কারণ এখানে হার্ট, ব্রেইন ও কিডনি বিভাগের ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি। হাসপাতালটির বয়স প্রায় ৪০ বছর।
৫০০ শয্যার অনুমোদন কার্যকর হলে এই বিভাগগুলো চালু করা হবে। তখন আর রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করতে হবে না।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড চালু হওয়ায় হাসপাতাল ও রোগীদের মধ্যে আস্থার সংকট দূর হবে এবং সেবার মান আরও উন্নত হবে।
এ সময় সিভিল সার্জন ডা. এ. এফ. এম. মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, এবং ডাক্তার ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।