জাতীয় দলে অস্থিরতা কমানোর ওষুধ কী
Published: 2nd, November 2025 GMT
মাঠে পারফরম্যান্স নেই, বাইরে সমালোচনার ঝড়। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, কাঠগড়ায় উঠছেন কোচিং স্টাফের সদস্যরাও। সব মিলিয়ে অস্থির এক সময়ই কাটছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তবে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় দলকে ঘিরে থাকা এই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে বিসিবি।
সেটির প্রথম ধাপ হিসেবে কাল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের জন্য অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে নাজমুল হোসেনের নাম। গত জুনে ওয়ানডে সংস্করণে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নিজেই টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব না করার ঘোষণা দেন নাজমুল। তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক—বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন না তিনি।
নাজমুল টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়তে পারেন, সেই সময় এমন খবর জানার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিসিবি। শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগের সংবাদ সম্মেলনে এ সংস্করণে নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন নাজমুল। টেস্ট দলের নতুন নেতৃত্বের আলোচনার শুরুতে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত নাজমুলকেই আবার দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত নিল বিসিবি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যযুদ্ধে যেভাবে জিতে যাচ্ছে চীন
মার্কিন–চীন বাণিজ্যযুদ্ধ আপাতত শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বিরোধ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তার ফল এখনো সেভাবে মিলছে না বা চীন সেভাবে সাড়া দিচ্ছে না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মনে হচ্ছে, এই বাণিজ্যযুদ্ধে চীন জিতে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেনর্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেই এ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে আলোচনার পর ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমাতে সম্মত হন। বিনিময়ে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল পাচার দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করে। তবে এখনো চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে কার্যকর গড় শুল্কহার ৪৭ শতাংশ। খবর সিএনএনের
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন কিছু নয়। সেই প্রথম জমানাতেই ট্রাম্প এই যুদ্ধ শুরু করেন। তাতে চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কমলেও যুক্তরাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্ক আরোপের পর থেকে চীনের অবস্থা কেমন? চলুন, তথ্য–উপাত্ত দেখে নেওয়া যাক।
বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমতির দিকে ছিল। গত কয়েক মাসে সেই পতন আরও তীব্র হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার, গত বছরের একই মাসে যা ছিল ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
কিন্তু চীন অন্যভাবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কমে গেলেও চলতি বছর চীনের মোট রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশশিক ১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসেও আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮ দশশিক ৩ শতাংশ। কেননা, অন্যান্য বাজারে চীনা পণ্যের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। চীন এখন শুধু রপ্তানির ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্য আনছে না, বরং আমদানিতেও নতুন উৎস খুঁজছে—আমেরিকান পণ্যের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি বাড়াচ্ছে দেশটি।
মার্কিন–চীন বাণিজ্য আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সয়াবিন। দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনায় এই সয়াবিনের বড় ভূমিকা আছে। কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের সয়াবিন আমদানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। এমনকি সেপ্টেম্বরে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক দানা সয়াবিনও আমদানি করেনি—অনেক বছরের মধ্যে এই প্রথম। এর বদলে দেশটি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়িয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে আর্জেন্টিনা সরকার সাময়িকভাবে সয়াবিন রপ্তানির ওপর শুল্ক স্থগিত করে। সেই সুযোগে চীন দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কেনে।
সি চিন পিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের আগেই গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দামের সূচক হিসেবে ব্যবহৃত শিকাগো সয়াবিন ফিউচারসের সূচক বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, দুই নেতার বৈঠকের পর চীন অবশ্য আবার সয়াবিন কেনার অঙ্গীকার করেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, চীন এ মৌসুমে ১ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কিনবে। সেই সঙ্গে আগামী তিন বছর গড়ে প্রতিবছর তারা ২ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন করে সয়াবিন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গরুর মাংস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। এত দিন চীন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংসের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। কিন্তু সম্প্রতি চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুর মাংস আমদানি কমিয়েছে। পরিমাণটাও উল্লেখযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চীন প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন বা ৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের গরুর মাংস আমদানি করেছে। কিন্তু এই সময় যুক্তরাষ্ট্র যত গরুর মাংস রপ্তানি করেছে, এটি তার মাত্র ৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ চীনের আমদানি কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
সয়াবিনের মতো এখানেও চীন বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গরুর মাংস আমদানির চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় দেশটি অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্টিনা থেকে গরুর মাংস কেনা বৃদ্ধি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের গরুর মাংস আমদানি ক্রমেই কমছে। চীনের শুল্ক প্রশাসনের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের গরুর মাংস আমদানি করেছে; গত বছরের একই মাসে এই পরিমাণ ছিল ১১০ মিলিয়ন বা ১১ কোটি ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের সমাপ্তি কবে হবে, তা কেউ বলতে পারে না। ট্রাম্প প্রশাসন সাময়িকভাবে কিছু ছাড় দিলেও চীনের প্রতিক্রিয়া কৌশলগতভাবে অনেক বেশি পরিণত ও দূরদর্শী। বেইজিং শুধু আমেরিকান পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমায়নি, বরং বিকল্প বাণিজ্য অংশীদার তৈরি করে বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করছে। ফলে বাণিজ্যযুদ্ধের কৌশলের দিক থেকে চীনই যে এগিয়ে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।