চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গৃহকর এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এ কারণে চলতি অর্থবছরে সিটি করপোরেশনকে গৃহকর পরিশোধ করেনি সংস্থাটি। এতে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি গৃহকর পরিশোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) দিয়েছিল ১৪৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরগুলোতে পরিশোধ করত ৪৫ কোটি টাকা করে। কিন্তু সিটি করপোরেশন এবার ১৬০ কোটি টাকা দাবি করলেও বন্দরের মতে, বার্ষিক গৃহকর হচ্ছে ৪৫ কোটি টাকা। যা তারা একসঙ্গে আগেই পরিশোধ করেছে। এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে গৃহকর জটিলতা নিষ্পত্তির জন্য গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ সদস্যের কমিটি যৌথ জরিপ করে গৃহকর চূড়ান্ত করার কথা। তবে আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও গৃহকর চূড়ান্ত করা হয়নি। এ অবস্থায় আজ রোববার উভয় পক্ষ আবার গৃহকর নির্ধারণের বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৃহকর আদায় হয়েছে ৭১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আদায়ের হার ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ১০২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে গত বছরই সবচেয়ে বেশি গৃহকর আদায় হয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ৩০৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

যৌথ জরিপ কমিটি গঠন করা হলেও এখনো বন্দরের গৃহকর চূড়ান্ত করা হয়নি। কীভাবে চূড়ান্ত করা হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। রোববার আবার বসবে। এর মধ্যে কিসের ভিত্তিতে বন্দরের গৃহকর চূড়ান্ত করা হবে, তা নির্ধারণ করার কথা রয়েছে।এস এম সরওয়ার কামাল, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস গৃহকর। আদায় কমে যাওয়ায় মোট রাজস্ব আয়েও তার প্রভাব পড়েছে। গত বছর যেখানে এই সময়ে গৃহকরসহ বিভিন্ন খাত থেকে আয় হয়েছিল ১৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এবার তার পরিমাণ মাত্র ১১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরে সিটি করপোরেশন বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বার্ষিক গৃহকর দাবি করে ১৬০ কোটি টাকা। ছাড় পাওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ১৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এবারও বন্দরের কাছে বার্ষিক ১৬০ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি দেওয়া দিয়েছিল সিটি করপোরেশন।

এরপর গৃহকর নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আবার সামনে আসে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনের দাবি অনুযায়ী গৃহকর পরিশোধ করেনি। উল্টো চিঠি দিয়ে জানায়, বন্দরের জন্য নির্ধারিত বার্ষিক গৃহকর ৪৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ১৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নির্ধারিত গৃহকর পরিশোধের পরেও অতিরিক্ত থাকবে ৫৫ কোটি টাকা। গৃহকর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে দুই সংস্থা পাঁচ সদস্যের যৌথ জরিপ কমিটি গঠন করে গত আগস্টে। এই কমিটি বন্দরের গৃহকর হার নির্ধারণ করবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস গৃহকর। আদায় কমে যাওয়ায় মোট রাজস্ব আয়েও তার প্রভাব পড়েছে। গত বছর যেখানে এই সময়ে গৃহকরসহ বিভিন্ন খাত থেকে আয় হয়েছিল ১৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এবার তার পরিমাণ মাত্র ১১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ জরিপ কমিটি গঠন করা হলেও এখনো বন্দরের গৃহকর চূড়ান্ত করা হয়নি। কীভাবে চূড়ান্ত করা হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। রোববার আবার বসবে। এর মধ্যে কিসের ভিত্তিতে বন্দরের গৃহকর চূড়ান্ত করা হবে, তা নির্ধারণ করার কথা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় বন্দরের বার্ষিক গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬০ কোটি টাকা। কিন্তু অপসারিত মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বন্দরের আবেদনের পর গৃহকর ধার্য করেন ৪৫ কোটি টাকা। এই হারে গৃহকর পরিশোধ করে আসছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবে বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬০ কোটি টাকা করে গৃহকর আদায়ের জন্য তৎপর হন। এ জন্য গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন বন্দর কর্তৃপক্ষকে বকেয়া ১১৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ এপ্রিল ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে বন্দর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র ষ ক গ হকর র পর ম ণ ১৬০ ক ট গ হকর ন গঠন কর ৪৫ ক ট য় হয় ছ হয় ছ ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকল্পের তিন মাসের খরচ বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর পর্যালোচনা করে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

আগামী রোববার থেকে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে আছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে ইআরডি।

চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। প্রথম তিন মাসে মাত্র ৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

এবারের এডিপিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা দেশীয় উৎস থেকে এবং ৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে। বাকি ৮৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশি সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাত্র ৫ হাজার ৭৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা বিদেশি সহায়তার মাত্র ৬ শতাংশের মতো। এর মানে হলো, অর্থবছরের চার ভাগের এক ভাগ সময় পেরিয়ে গেলেও বিদেশি সহায়তা খরচে হতাশাজনক চিত্র মিলছে।

ইতিমধ্যে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কীভাবে হবে, তা নিয়ে ইআরডি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পাঁচ দফা নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো হলো—এক. প্রকল্পের আর্থিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ক্রমপুঞ্জিভূত খরচ ইত্যাদির সঙ্গে অবশিষ্ট প্রাপ্যতার সামঞ্জস্য রেখে বরাদ্দ চাহিদা দিতে হবে। দুই. প্রকল্পের ব্যয়ের বিদেশি ঋণ, অনুদান ইত্যাদি আলাদা করে পাঠাতে হবে। চার. অনুমোদন ছাড়া সংশোধিত এডিপিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। চার. ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রেরণের সময় বিশেষ সতর্কতা ও যৌক্তিকতা অবলম্বন করতে হবে। চার. কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে বা প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হলে সরকারি আদেশের কপি পাঠাতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার
  • শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
  • তিন মাসে বিদেশি ঋণ এসেছে ১১৫ কোটি ডলার, শোধ ১২৮ কোটি ডলার
  • রেমিট্যান্স ২৯ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম
  • প্রকল্পের তিন মাসের খরচ বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ