মামলায় ঝুলে গেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন
Published: 2nd, November 2025 GMT
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এক বছরের বেশি সময় ধরে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় আছে। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করেছিল সরকার। তিনি উদ্যোগ নিয়েও নির্বাচন করতে পারেননি। এরই মধ্যে সেই প্রশাসকের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। দেড় মাস পদটি শূন্য থাকার পর নতুন করে একজন অতিরিক্ত সচিবকে এফবিসিসিআইয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে তিনি এখনো দায়িত্ব নেননি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ, চাঁদার হার কমানো এবং মনোনীত পরিচালক নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন বোর্ড গঠন যথাযথ হচ্ছে না, এমন দাবিতে একাধিক ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন। এমন চারটি রিট মামলার কারণে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়েছে। দুই দফায় নির্বাচন বোর্ড পুনর্গঠন করেও নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক একাধিক নেতা জানান, সংগঠনটির নির্বাচন প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।
বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধন ছাড়া এই অচলাবস্থা কাটবে না। নতুন প্রশাসক নিয়োগেও অবস্থার উন্নতি হবে না। দীর্ঘদিন ধরে এফবিসিসিআইয়ে নেতৃত্ব না থাকায় নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই। দেড় মাস ধরে প্রশাসক পদ শূন্য থাকায় ফেডারেশনের মতিঝিল কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও কমেছে।
নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক পরিচালক মো.
গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ে সরকার নিযুক্ত প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর ফেডারেশনের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্য আবুল কাশেম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের ব্যর্থতায় এমনটা হয়েছে। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালাটি সংশোধন করে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয়। তাতে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধিমালাটি সঠিকভাবে সংশোধন করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে তৎপর হন সদস্যদের একাংশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদ থেকে মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাঁকে ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নির্বাচিত পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা—এই ব্যানারে যাঁরা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, পরে তাঁরাই এফবিসিসিআইয়ের বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ গঠন করেন। তাঁরা মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল, পর্ষদের সদস্যসংখ্যা কমানোসহ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব দেন। পরে অক্টোবরে বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১২টি সংস্কার প্রস্তাব পাঠান প্রশাসক। গত মে মাসে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়। তত দিনে প্রশাসকের আট মাস মেয়াদ চলে যায়।
নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ১৮ জুন তফসিল ঘোষণা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ৭ সেপ্টেম্বর সরাসরি ভোটে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ২ জন সহসভাপতি এবং ৩০ জন পরিচালক নির্বাচন হবে। পরে অবশ্য বাণিজ্য সংগঠনের দাবির মুখে নির্বাচনের সময় ৪৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
মামলা চলমান থাকলেও নির্বাচন করা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে নতুন প্রশাসক নির্বাচন বোর্ড পুনর্গঠন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবেন। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছেহাফিজুর রহমান, সদ্য সাবেক প্রশাসক, এফবিসিসিআইএফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে টানা সর্বোচ্চ দুবার থাকা যাবে। এরপর একবার বিরতি দিয়ে আবার নির্বাচন করা যাবে। এই নিয়ম ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার এমন বিধানটি নির্বাচনের তফসিলেও রাখা হয়। তাতে সর্বশেষ গত দুই পর্ষদে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এই বিধানের কারণে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হন। তারপর থেকেই বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধনের দাবির পাশাপাশি নির্বাচন থামাতে মামলামুখী হন তাঁরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন বেআইনি—এমন অভিযোগে উচ্চ আদালত রিট মামলা করেন আলাউদ্দিন আল মাসুম নামে একজন ব্যবসায়ী। সাধারণ পরিষদের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিবন্ধন ফি ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করায় রিট মামলা করেন আরেক ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুদ। এ ছাড়া অতীতে দুবার পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দেওয়ার বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ। আর মনোনীত পরিচালক নিয়োগে আইন ও বিধিমালায় ভিন্ন পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ফেডারেশনের সাবেক উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ।
জানা যায়, এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বারসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সংগঠনের আপত্তির মুখে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে কী কী সংশোধন করা হবে, সেটিও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছেন। তাঁদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেডারেশনের নির্বাচন করতে হবে। তার আগে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সংশোধন দরকার। তারপর বাণিজ্যসচিব অনুরোধ করলে ব্যবসায়ীরা মামলা তুলে নেবেন।
এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়। তার পর থেকে ফেডারেশন ভবনে যাননি তিনি। গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খানকে নতুন করে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁকেও ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। নতুন প্রশাসক আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিতে পারেন বলে জানান ফেডারেশনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সদ্য সাবেক প্রশাসক হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলা চলমান থাকলেও নির্বাচন করা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে নতুন প্রশাসক নির্বাচন বোর্ড পুনর্গঠন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য স গঠন ব ধ ম ল এফব স স আইয় র স হ ফ জ র রহম ন দ শ র ব যবস ব যবস য় দ র স প ট ম বর প রক র য় ত সময় র র সদস য গঠন কর র জন য প রথম চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার ওয়াপদার মোড় এলাকার মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া মহাসড়কে বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন।
পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকেছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগ–সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা কমিটিগুলো বাতিলের পাশাপাশি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মিনহাজুর রহমান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রইসুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব নাজিম উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলাটি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষ ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং অন্যটি উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার অনুসারী। তাঁরা দুজন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
২৩ অক্টোবর রাতে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌরসভার ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া।
আজ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সড়কের ওপর বসে দাবির সমর্থনে বক্তব্য দেন স্থানীয় বিএনপির পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এতে সড়কের আটকে পড়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পরে বেলা দুইটার দিকে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে ঘোষিত কমিটি দুটি বাতিল না করা হলে কঠোর আন্দোলন ও সব সড়ক অবরোধ করা হবে।