রাশিয়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে টিকটকে একটি বড়ি নিয়ে নানা ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। বলা হয়, এটি খুব দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম। এ বড়ির নাম মলিকিউল।

‘মলিকিউল সেবন করো এবং খাবারের কথা ভুলে যাও’ কিংবা ‘তুমি কি ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে ঢিলেঢালা পোশাকে আর বসে থাকতে চাও?’—এমন নানা শিরোনামে ছেয়ে গেছে রুশ তরুণ-তরুণীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিউজফিড।

নিউজফিডে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, রেফ্রিজারেটরে নীল রঙের বাক্স সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হলোগ্রাম আঁকা বাক্সের গায়ে লেখা—মলিকিউল প্লাস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা তাঁদের ওজন কমানোর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে শুরু করলে মলিকিউলের বিক্রি হু হু করে বেড়ে যায়। কিন্তু দ্রুতই প্রকাশ পেতে থাকে এ বড়ির অন্ধকার দিক।

সেন্ট পিটার্সবার্গের ২২ বছর বয়সী তরুণী মারিয়া অনলাইনে জনপ্রিয় এক বিক্রেতার কাছ থেকে মলিকিউল কেনেন। দিনে দুটি করে বড়ি খাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর মুখ শুকিয়ে যায়। তিনি পুরোপুরি ক্ষুধা হারিয়ে ফেলেন।

মারিয়া বলেন, ‘আমার কিছুই খেতে বা পান করতে ইচ্ছা করত না। আমি প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে থাকতাম, নিজের ঠোঁট কামড়াতাম ও গাল চিবোতাম।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা তাঁদের ওজন কমানোর অভিজ্ঞতা জানাতে শুরু করলে মলিকিউলের বিক্রি হু হু করে বেড়ে যায়।

দুই সপ্তাহের মধ্যে মারিয়ার উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও বিষণ্নতা বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, ‘বড়িগুলো আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছিল।’

মারিয়া এ ধরনের ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। অন্য টিকটক ব্যবহারকারীরাও চোখের মণি প্রসারিত হওয়া, হাত কাঁপা ও অনিদ্রার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। কমপক্ষে তিন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।

গত এপ্রিলে সাইবেরিয়ার চিতা শহরের এক স্কুলছাত্রীকে অতিমাত্রায় মলিকিউল সেবনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই তরুণী গ্রীষ্মের আগেই দ্রুত ওজন কমাতে চেয়েছিলেন।

অন্য এক স্কুলছাত্রীর মা বলেন, তাঁর মেয়ে একসঙ্গে কয়েকটি বড়ি খেয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিল। মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর বারবার বিভ্রম ও প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে তার এক বন্ধুকে অনলাইন থেকে এ বড়ি কিনে দিতে বলেছিল। কারণ, স্কুলে ওজন নিয়ে তাকে ঠাট্টা করা হতো।

মলিকিউলের বাক্সে ‘প্রাকৃতিক উপাদান’ হিসেবে লেখা থাকে ড্যান্ডেলিয়ন রুট ও ফেনেল সিডের নির্যাস। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে রুশ পত্রিকা ইজভেস্তিয়ার সাংবাদিকেরা অনলাইনে কেনা বড়িগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠালে তাতে নিষিদ্ধ উপাদান সিবুট্রামিন পাওয়া যায়।

সিবুট্রামিন মূলত ১৯৮০-এর দশকে বিষণ্নতা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে বাজারে আসে। গবেষণায় দেখা যায়, এটি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও ওজন কিছুটা কমায়।

সিবুট্রামিন মূলত ১৯৮০-এর দশকে বিষণ্নতা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে বাজারে আসে। গবেষণায় দেখা যায়, এটি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও ওজন কিছুটা কমায়।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সিবুট্রামিন নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ অনেক স্থানেই এটি অবৈধ।

রাশিয়ায় চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া সিবুট্রামিন কেনাবেচা অপরাধ। তবু অসংখ্য ব্যক্তি ও ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যাপকভাবে এটি কেনাবেচা করছে।

২০ দিন সেবনের উপযোগী মলিকিউলের দাম ছয়-সাত পাউন্ড (আট-নয় ডলার)। এটি রাশিয়ার বাজারে ওজন কমানোর জনপ্রিয় ইনজেকশন ওজেম্পিকের তুলনায় অনেক সস্তা। ওজেম্পিকের এক মাসের ইনজেকশনের দাম ৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ড (৫০ থেকে ২১০ ডলার)।

সেন্ট পিটার্সবার্গের হরমোনবিশেষজ্ঞ জেনিয়া সলোভিয়েভা বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিজে থেকে এই ওষুধ সেবন করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

রাশিয়ায় ইতিমধ্যে অনেকে মলিকিউল বেচাকেনার অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের জন্য এটির অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এপ্রিলে সরকার-সমর্থিত সংগঠন ‘সেফ ইন্টারনেট লিগ’ তরুণদের মধ্যে মলিকিউলের বাড়তি ব্যবহার নিয়ে সতর্কবার্তা দিলে কয়েকটি বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস এটি সরিয়ে ফেলে। অল্প কিছুদিনেই এটি নতুন নামে বাজারে আনা হয়। নাম দেওয়া হয় অ্যাটম। তবে এটির বাক্স দেখতে মলিকিউলের মতোই।

আরও পড়ুনওষুধ খেয়ে কি দ্রুত ওজন কমানো যায়?০৯ জানুয়ারি ২০২৪

রাশিয়ায় সম্প্রতি একটি আইন পাস হয়েছে। তাতে আদালতের আদেশ ছাড়াই ‘অবৈধ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট’ বিক্রির ওয়েবসাইট বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্রেতারা এখন এগুলো ‘স্পোর্টস নিউট্রিশন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

টিকটকে দেখা যায়, কেউ কেউ এখন বিস্কুট, বৈদ্যুতিক বাতিসহ অন্যান্য পণ্যের মোড়কে মলিকিউল বিক্রি করছেন। কিছু বিক্রেতা আইন পাস হওয়ার পরও প্রকাশ্যে এটি বিক্রির চেষ্টা করছেন।

এদিকে অনলাইনে খাদ্যাভ্যাসজনিত মানসিক ব্যাধি (ইটিং ডিজঅর্ডার) নিয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিউনিটি এখন মলিকিউলের প্রচারের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। তারা নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগ ও গোপন সংকেত ব্যবহার করে ওষুধটির প্রচার চালাচ্ছে।

জেনিয়া সলোভিয়েভা সতর্ক করে বলেন, যেসব তরুণ-তরুণী আগে থেকেই খাদ্যাভ্যাসজনিত ব্যাধিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য মলিকিউল বিশেষ ক্ষতিকর।

আরও পড়ুনওজন কমানোর ফুড সাপ্লিমেন্ট কি কার্যকর ও নিরাপদ?২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওজন কম ন র তর ণ তর ণ র জন য ব যবহ ওজন ক

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ