কামরায় বসে চুক্তি স্বাক্ষর করে নতুন বন্দোবস্ত হয় না: মুশতাক খান
Published: 2nd, November 2025 GMT
কোনো কামরায় বসে সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে এসে চুক্তি স্বাক্ষর করে নতুন বন্দোবস্ত হয় না বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুশতাক খান।
সবাই মিলে ফ্যাসিস্টকে নামাতে পেরেছে বলেই, পরদিন বসে নতুন সমঝোতায় চলে আসার চেষ্টাকে ভুল বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (সোয়াস) অধ্যাপক মুশতাক খান। তিনি বলেন, ‘আমি তখনই বলছিলাম, এটা হবে না। এটা চেষ্টা করাটা একটা ভুল ছিল। তার মানে এই নয় যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এই যুদ্ধ এখনো চলবে।’
আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনায় মুশতাক খান এ কথা বলেন।
মুশতাক খান আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, যে ভালোবাসা আছে অপরের জন্য, আমি চিনি না, জানি না, তার জন্য আমি রাস্তায় নেমে গেছি… তবে এটার থেকে লাফিয়ে গিয়ে বলা যে এখন আমরা সবাই ঐকমত্য হয়ে নতুন সমাজ করব, এটা একেবারেই অদ্ভুত চিন্তা।’
যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন মুশতাক খান।
মুশতাক খান আরও বলেন, সমাজে স্বার্থের বিরোধ আছে। ধনী ও মধ্যম শ্রেণি, মধ্যম শ্রেণি ও গরিব, লুটেরা আর যে লুটেরা নয়, যে রাজনীতি করে পয়সা বানায় আর যারা রাজনীতি করে পয়সা বানালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী বড় বড় ‘অলিগার্কদের’(ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি) আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান মুশতাক খান। তিনি বলেন, ক্ষমতার বিন্যাসকে আগে পরিবর্তন করতে হবে। টাকা পাচারকারীরা যদি পার পেয়ে যায়, তাহলে যতই দুই কক্ষ, তিন কক্ষ, পিআর করা হোক, তারা আবার সব সেট করে দিতে পারে।
আরও পড়ুননতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না করে নির্বাচনে যাওয়া ভুল হবে: মুশতাক খান০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, জনগণ ৭১-এর পরে সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি চব্বিশে করেছে। বড় রকমের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে বলে তারা মনে করেছিল। তবে এক বছর পরে দেখা গেল, এক বছর ধরে আলোচনা করে তেমন কিছু ঠিক করা যায়নি। যা ঠিক করা গেছে, তা যে বাস্তবায়ন করা যাবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই।
সভায় বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ প্রমুখ।
আরও পড়ুনআওয়ামী দুঃশাসন সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলেছে, এত দ্রুত সব কাজ করবে না১৮ আগস্ট ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম শত ক খ ন ন ম শত ক খ র জন ত বন দ ব
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন