সরকার বিএনপির চাপে ছোটে ডানে, জামায়াতের চাপে বাঁয়ে, এনসিপির চাপে ওপরে: এবি পার্টির চেয়ারম্যান
Published: 2nd, November 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত কোনো অবস্থান না দেখার কথা জানালেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তার কোনো প্রিন্সিপাল পজিশন নেই। বিএনপির চাপে উনি কতক্ষণ ডানে ছোটেন, জামায়াতের চাপে তিনি কিছুক্ষণ বাঁয়ে ছোটেন। এনসিপির চাপে উনি মাঝে মাঝে ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করেন।’
আজ রোববার রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মজিবুর রহমান। এই সভা যৌথভাবে আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। সভায় দল তিনটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথচলার অঙ্গীকার করে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রাষ্ট্র এখন সংকটে। সবকিছু গুছিয়ে আনার পরে এখন সংকট ঘনীভূত হয়েছে তিনটা জায়গায়। গণভোট আগে না, একসঙ্গে; নোট অব ডিসেন্টার কী হবে আর আগামী দিনের নির্বাচনটা কিসের নির্বাচন।
এই সংকটের জন্যও সরকারের চাপে পড়ে চলার নীতিকে দায়ী করেন মজিবুর রহমান। ‘আমাদের অনুরোধ হচ্ছে, আপনারা আপনাদের অবস্থান সঠিক করেন। আপনারাও যদি রাষ্ট্রের মালিক সাজেন, তাহলে হবে না। আপনাদেরকে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, মানুষের প্রয়োজনের কথাগুলো শুনতে হবে,’ সরকারের উদ্দেশে বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান।
আলোচনা সভায় উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে মজিবুর রহমান বলেন, ‘ওরাও রাস্তা বন্ধ করতে চায়। কারণ, কথা তো সত্য, রাস্তা বন্ধ না করলে দাবি আদায় হচ্ছে না। উপদেষ্টারা এদের সঙ্গে বসে কথা বলার সময় পায় না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তাদের সঙ্গে কথা বলে। কদিন পর উপদেষ্টাদের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হবে।’
সভায় আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আশা ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে। জনগণের কথা ভাবছে না।
‘বিপ্লব এখন বিলাসে পরিণত হয়েছে’ মন্তব্য করে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুইয়া বলেন, ‘ছেঁড়া স্যান্ডেল থেকে ফাইভ স্টার হোটেল কোনো বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল ওহাব মিনার, আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন