চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেদিন ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে জেলার প্রায় ৬৭ হেক্টর জমির পুকুর তলিয়ে গিয়ে কমপক্ষে ৩৯ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যার দাম ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

শাহীনূর রহমান বলেন, ‘‘গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টি হলে ভোলাহাট ছাড়া বাকি চার উপজেলার বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪০০ পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মাছ ভেসে চলে গেছে।’’

আরো পড়ুন:

পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস

মোহনা থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন উপকূলের জেলেরা

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে আছে এবং করণীয় সম্পর্কে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেক পুকুর পাড়ে চাষি জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছে। এর কারণে সেই পুকুরের মাছ ভেসে যেতে পারেনি।’’

রবিবার (২ নভেম্বর) জেলা মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ৪০ হেক্টর জমির পুকুর পানিতে তলিয়ে ৩৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এই উপজেলায় মাছ চাষির ক্ষতি হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। 

নাচোল উপজেলায় ২১ হেক্টর জমির পুকুর তালিয়ে আড়াই মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। 

শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫ হেক্টর পুকুর ভেসে গেছে। এতে দেড় মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গোমস্তাপুর উপজেলায় ১ দশমিক ১ হেক্টর পুকুর ভেসে গিয়ে ৮০০ কেজি পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে। এই উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য চাষি রবিউল আওয়াল বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে মাহাডাঙ্গা বিলে ১০ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছিলাম। আগে থেকেও এই বিলে অনেক মাছ ছিল। ভারী বৃষ্টিতে বিল ভেসে গেছে। আমার ২০-২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’ 

তিনি আরো জানান, মহাডাঙ্গা বিলের আশপাশের অন্তত ১৫টি পুকুর বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। সেই সকল মাছ চাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। 
 

ঢাকা/শিয়াম/বকুল  

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন ম ছ প ইনব বগঞ জ র উপজ ল উপজ ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি

স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।

‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।

এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

ক্যানসার কীভাবে হয়

স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদের

ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।

নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’

প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।

সচেতনতা জরুরি

নন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ