ইসলামে দারিদ্র্য দূরীকরণের ৮টি ব্যবহারিক উপায়
Published: 2nd, November 2025 GMT
দারিদ্র্য মানুষের জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র্য যখন ঘিরে ধরে, তখন শুধু অর্থের অভাবে সীমিত থাকে না; বরং জীবনের মান, নিরাপত্তা ও সুযোগও নষ্ট করে ফেলে। কোরআনে এ সমস্যার উল্লেখ এসেছে বারবার।
যেমন সুরা কুরাইশে বলা হয়েছে, ‘কুরাইশের অভ্যাসের জন্য, শীত ও গ্রীষ্মের সফরের অভ্যাসের জন্য, তারা যেন এই ঘরের প্রভুর ইবাদত করে, যিনি তাদের ক্ষুধায় খাদ্য দিয়েছেন এবং ভয় থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।’ (সুরা কুরাইশ, আয়াত: ১-৪)।
নবীজি (সা.
ইসলামি ফিকহে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা, এর মাত্রা এবং সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এ লেখায় আমরা ইসলামে দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়গুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরব।
দারিদ্র্য কীদারিদ্র্যের সংজ্ঞা দেশ ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। সবচেয়ে কঠিন রূপ হলো চরম দারিদ্র্য, যখন মানুষের পেট ভরার মতো খাবারও থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে নবীজি (সা.) ভিক্ষা করার পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভিক্ষা জায়েজ তিন ধরনের মানুষের জন্য—চরম দরিদ্র, প্রচণ্ড ঋণগ্রস্ত ও গুরুতর রক্তপণে আক্রান্ত ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১,৬৪০)
মালিকি, শাফিঈ ও হাম্বলি ফকিহরা বলেন, দারিদ্র্য মানে মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব, যেমন খাদ্য, বাসস্থান ও পোশাক। কোরআনে দারিদ্র্যের দুটি রূপের কথা বলা হয়েছে—বর্তমানে বিদ্যমান দারিদ্র্য, ‘তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমরা তোমাদের ও তাদের জন্য রিজিক দেব।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৫১)
এবং ভবিষ্যতের দারিদ্র্যের ভয়, ‘তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমরা তাদের ও তোমাদের জন্য রিজিক দেব।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৩১)
দারিদ্র্যের একটি আধ্যাত্মিক কারণ হলো হালাল উপার্জন থেকে বিচ্যুতি। কোরআন বলে, ‘যদি জনপদের লোকেরা ইমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমরা তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবী থেকে বরকতের দ্বার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল, তাই আমরা তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৯৬)
এ ছাড়া দারিদ্র্য একটি পরীক্ষাও, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
আরও পড়ুনইসলামে অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনন্য নীতি০৬ অক্টোবর ২০২৫জীবনযাত্রার মান হ্রাসের মাত্রাজীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ার দুটি প্রধান কারণ হলো বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। বেকারত্ব দুই ধরনের:
বাধ্যতামূলক বেকারত্ব: যখন কেউ কাজ করতে চায়, কিন্তু পায় না। যেমন তার পেশা অপ্রচলিত হয়ে যাওয়া বা দক্ষতার অভাব।
স্বেচ্ছা বেকারত্ব: যখন কেউ কাজ করতে পারে, কিন্তু বিশ্রাম নিতে চায়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধারণত জীবনযাত্রার মান বাড়ায়। কিন্তু প্রবৃদ্ধি হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হয় না। তাই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণের নীতি জরুরি। শুধু বিনিয়োগ বা রপ্তানি বাড়ালেই হবে না, সম্পদ ও আয়ের ন্যায্য বণ্টন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ এবং দরিদ্রদের জন্য সরাসরি সহায়তা দরকার।
অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবদারিদ্র্য ও দারিদ্র্যের অনুভূতি এক নয়। মূল্যস্ফীতি বা মুদ্রার মান কমে গেলে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়। ফলে পণ্য ও সেবার চাহিদা কমে, উৎপাদন খরচ বাড়ে, উৎপাদন কমে, শ্রমিকদের আয় কমে এবং দাম আরও বাড়ে। এই দুষ্টচক্র মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যের অনুভূতি বাড়ায়।
হে আদম সন্তান, রিজিকের সংকীর্ণতার ভয় করো না, আমার ভান্ডার পূর্ণ, কখনো শেষ হবে না।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২,৪৬৫অর্থনীতিবিদেরা বলেন, দারিদ্র্য সমাজের আইনি সম্পর্কে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ায়। তাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ন্যায্য বণ্টন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
ইসলামে দারিদ্র্য দূর করার উপায়ইসলাম দারিদ্র্য দূরীকরণে দুটি প্রধান দিক নির্দেশ করে—আকিদা (বিশ্বাস) ও কারণ গ্রহণ।
এক. আকিদার দিক
ইসলাম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি দেয়। এর চারটি মূল দিক:
পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান: ইসলাম বলে, সম্পদ আল্লাহর, মানুষ এর তত্ত্বাবধায়ক। ‘তোমরা তা থেকে ব্যয় করো, যাতে তিনি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক করেছেন।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ৭)
‘আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে তাদের দাও।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩৩)।
রিজিকের উৎসে বিশ্বাস: আল্লাহই রিজিকের মালিক। ‘আকাশে তোমাদের রিজিক ও যা প্রতিশ্রুত আছে। আকাশ ও পৃথিবীর প্রভুর কসম, এটি সত্য, যেমন তোমরা কথা বল।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ২২-২৩)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, রিজিকের সংকীর্ণতার ভয় করো না, আমার ভান্ডার পূর্ণ, কখনো শেষ হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২,৪৬৫)।
দোয়া ও ইস্তিগফার: ক্ষমা প্রার্থনা রিজিক বাড়ায়। ‘আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের প্রচুর বৃষ্টি পাঠাবেন, সম্পদ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করবেন এবং বাগান ও নদী দেবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)
ইমান ও তাকওয়া: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাকওয়া রিজিকের পথ খুলে। নবীজি (সা.) দারিদ্র্য ও কুফর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি কুফর ও দারিদ্র্য থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৪৪)
দারিদ্র্য কখনো কখনো কুফরের দিকে নিয়ে যায়, তাই শক্তিশালী ইমান জরুরি।
আরও পড়ুনদারিদ্র্যের ক্ষতিকর প্রভাব, ইসলামের সমাধান২৪ অক্টোবর ২০২৫দুই. ব্যবহারিক উপায়
ইসলাম দারিদ্র্য দূরীকরণে ৮টি ব্যবহারিক উপায়ের কথা বলে:
১. কঠোর পরিশ্রম: কাজ করা ও জীবিকার জন্য পৃথিবীতে চলাফেরা। ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সহজ করেছেন। তাই এর বিস্তৃত পথে চলো এবং তাঁর রিজিক থেকে খাও’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১৫)।
২. হিজরত: ভালো জীবিকার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া। নবীজি (সা.) ও সাহাবারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
৩. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার: আল্লাহর দেওয়া সম্পদের সঠিক ব্যবহার। ‘তিনি পৃথিবীতে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৯)।
৪. সাশ্রয়ী ব্যয়: অপচয় এড়ানো। ‘খাও, পান করো, কিন্তু অপচয় করো না’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৩১)।
৫. সঞ্চয় ও বিনিয়োগ: সম্পদ সংরক্ষণ ও উৎপাদনমূলক কাজে লাগানো।
৬. হালাল উপার্জন: রিবা, প্রতারণা, জুয়া বা শ্রমিকদের বঞ্চনার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। ‘তোমাদের জন্য হালাল ও পবিত্র জিনিস খাও’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭২)।
৭. জাকাত ও সাদকা: জাকাত সম্পদের ২ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। নবীজি (সা.) মুয়াজ ইবনে জাবালকে ইয়েমেনে পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘ধনীদের কাছ থেকে জাকাত নাও এবং তা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করো’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৭২)। জাকাত সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমায়।
৮. আত্মীয়দের সহায়তা: ধনী আত্মীয়দের দরিদ্র আত্মীয়দের সাহায্য করতে হয়। ‘তোমরা নিকটাত্মীয়কে তার প্রাপ্য দাও, দরিদ্র ও মুসাফিরকেও’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ২৬)।
প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণের নীতি জরুরি। শুধু বিনিয়োগ বা রপ্তানি বাড়ালেই হবে না, সম্পদ ও আয়ের ন্যায্য বণ্টন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ এবং দরিদ্রদের জন্য সরাসরি সহায়তা দরকার।সমাজে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদের চেয়ে মানবিক। এটি শুধু কাজের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনকে বৈধ বলে। কারণ, পুঁজি নিজে থেকে আয়ের উৎস নয়। জাকাত ও ওয়াক্ফের মতো ব্যবস্থা সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করে। ওয়াক্ফ ইতিহাসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্রদের সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রও প্রয়োজনে সম্পদ জাতীয়করণ বা কর আরোপ করতে পারে সামাজিক কল্যাণের জন্য, যেমন স্বাস্থ্য বা শিক্ষার জন্য।
দারিদ্র্য ও বেকারত্ব একে অপরের সঙ্গে জড়িত। ইসলাম কাজের প্রতি উৎসাহ দেয়, মানুষের দক্ষতা বাড়ায় এবং সমাজের বৈষম্য কমায়। দারিদ্র্য কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি অত্যাচার, অজ্ঞতা ও রোগের সঙ্গে যুক্ত। তাই ইসলামি সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়।
ইসলাম দারিদ্র্য দূরীকরণে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক পথ দেখায়। আকিদা মানুষকে আশা দেয়, আর কারণ গ্রহণ তাকে কাজে উদ্বুদ্ধ করে। জাকাত, সাদকা ও ওয়াক্ফের মতো ব্যবস্থা সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। ইসলাম শুধু দারিদ্র্য দূর করে না; বরং প্রত্যেকের জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পথ তৈরি করে।
আরও পড়ুননিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে৩০ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র দ র য দ র করণ র দ র দ র য দ র কর ইসল ম দ র দ র য ত ম দ র জন য জ বনয ত র র ব যবহ র ক প রব দ ধ ও ত কওয আল ল হ সহ য ত সন ত ন দর দ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন