দিনাজপুরে টানা তিন দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, রবিবারের (২ নভেম্বর) পর থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।  

আরো পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে

দিনাজপুরে বৃষ্টিতে আমন ধানের ক্ষতি, দুশ্চিন্তায় কৃষক

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) থেকে দিনাজপুর জেলায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু হয়। শীতও পড়তে শুরু করেছে। মানুষ প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তবে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃষ্টি এবং ঝড়ে ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে ক্ষতি হয়েছে। আর কয়েক দিন পর ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। ইতোমধ্যে অনেকে কাটা শুরু করেছে।

নিম্ন আয়ের মানুষ ভ্যান-রিকশাচালক, কুলি-মজুর ও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছে। এই বর্ষায় কাজ না করতে পেরে সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। 

জেলা শহরের রিকশা চালক রহিম উদ্দিন বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। থামার ভাব দেখছি না। কামাই নাই। যাত্রী পাচ্ছি না। তাহলে চলব কী করে?’’

জেলার হিলি বন্দর শহরের ভ্যানচালক মমিনল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার ভ্যানে ছাদ নেই। লোকজন ওঠে না। বৃষ্টির কারণে সব এলোমেলো। দিন চলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’’  

একজন পথচারী বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ির বাহিরে বের হওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও সংসারের তো চাহিদা আছে। বৃষ্টিতে ভিজে কী আর কাজ করা যায়?’’ 

দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, কয়েক দিন ধরে এই অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া বইছে। গরমের তীব্রতা অনেক কমে গেছে। গত পরশুদিন (৩১ অক্টোবর) জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। শনিবার (১ নভেম্বর) এবং আজ (২ নভেম্বর) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মাঝে-মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি, আজ-কালের মধ্যে আকাশ পরিষ্কার হবে।’’ 

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কয় ক দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি

স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।

‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।

এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

ক্যানসার কীভাবে হয়

স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদের

ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।

নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’

প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।

সচেতনতা জরুরি

নন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ