প্রকৌশলী নাজিব কায়সার উদ্ভাবন করেছেন ব্যতিক্রমী এক রেল কাটিং যন্ত্র, যা স্বল্প খরচে তৈরি করা হয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই যন্ত্রটি রেললাইন কাটা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সময় ও খরচ দুই-ই কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে বিভাগের দৈনন্দিন মেরামত কাজে ব্যয়বহুল আমদানিকৃত যন্ত্রের বিকল্প হিসেবে নাজিব কায়সারের যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন। তিনি ১১ দিনে মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে মেশিনটি তৈরি করেন, যা দিয়ে মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডেই রেললাইন কাটা সম্ভব। প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের এই মেশিনটিতে বিভিন্ন আকারের কাটিং ডিস্কও ব্যবহার করা যায়।

বর্তমানে যন্ত্রটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে বিভাগীয় সদর দপ্তরে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি সফলভাবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী নাজিব কায়সার।

তিনি বলেন, “এই যন্ত্র রেললাইন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে গতি আনবে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রমকে আরো সহজ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করবে।”

তিনি আরো বলেন, “রেলওয়ের মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই এ উদ্ভাবনের ধারণা তার মাথায় আসে। বিদেশ থেকে আমদানি করা কাটিং মেশিনগুলোর দাম যেমন বেশি, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণও জটিল। তাই স্বল্প খরচে দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর একটি সমাধান তৈরির উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করি। সফল পরীক্ষার পর এই যন্ত্রটি সরকারি উদ্যোগে ঈশ্বরদী রেলওয়ে ওয়ার্কশপে বৃহৎ পরিসরে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

বাংলাদেশের অনেক স্থানে এখনো ব্রিটিশ আমলের পুরোনো রেললাইন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সময়ের সঙ্গে ফাটল ধরা বা ভেঙে যাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত মেরামত নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর কাটিং মেশিন অপরিহার্য। পূর্বে রেললাইন কাটতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগত, জার্মানির উন্নত যন্ত্রে সময় লাগে কয়েক মিনিট। কিন্তু নাজিব কায়সারের উদ্ভাবিত দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রে একই কাজ সম্পন্ন করা যায় মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডে।

উদ্ভাবনটি একদিকে যেমন দেশীয় প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৌশল খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশাবাদী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

নাজিব আশা প্রকাশ করে জানান, দেশে তৈরি এই রেল কাটিং যন্ত্র শুধু রেলওয়ে নয়, শিল্পক্ষেত্রের নানা কাজেও ব্যবহার করা যাবে। স্থানীয়ভাবে এমন প্রযুক্তি তৈরি হলে দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে।

নাজিবের চমৎকার উদ্ভাবনকে সাধুবাদ জানিয়ে রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এ ধরনের উদ্ভাবন বাংলাদেশের প্রকৌশল খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং তরুণ প্রকৌশলীদের সৃজনশীল উদ্যোগে অনুপ্রাণিত করবে।

১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারি রাজশাহীতে নাজিমুল হক ও লুতফেয়ারা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন নাজিব কায়সার বিন্দু। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। 

প্রকৌশলী নাজিব ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।

ঢাকা/মাহাফুজ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উদ ভ ব প রক শ র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ