সিভিতে অতিরিক্ত এআই ব্যবহার করছেন, সাবধান...
Published: 2nd, November 2025 GMT
চাকরিপ্রার্থীরা দিন দিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি থেকে শুরু করে কভার লেটার লেখার ক্ষেত্রেও এআইয়ের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সিভিতে অতিরিক্ত এআই ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্ধভাবে এআইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা চাকরি পাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
চাকরিসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ক্যারিয়ার গ্রুপ কোম্পানিজ–এর ২০২৫ মার্কেট ট্রেন্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীরা প্রায় ৬৫ শতাংশ আবেদনপত্রের কোনো না কোনো পর্যায়ে এআই ব্যবহার করছেন। তবে এর ফলে অনেক আবেদনপত্রের ভাষা ও কাঠামো একেবারে একই রকম হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫অন্ধভাবে এআইয়ের ওপর নির্ভরশীলতার ঝুঁকি
ক্যারিয়ার–বিষয়ক পরামর্শদাতা আমেরিকার দ্য ক্যারিয়ার রেভেন–এর প্রতিষ্ঠাতা জেন ডেলরেনজো বলেন, অনেক এআই টুল ‘হ্যালুসিনেশন’ বা কল্পিত তথ্য তৈরি করে। এর ফলে সিভি চাকরির বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে এমন তথ্য যুক্ত হয়, যা সত্য নয়। একজনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একজন নারী একাধিক চাকরিতে আবেদন করার জন্য এআই দিয়ে নিজের সিভি বদলে পাঠিয়েছিলেন। পরে দেখা যায়, এআই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেখিয়েছে এবং ভুল তথ্য যোগ করেছে।
ডেলরেনজো বলেন, ইন্টারভিউতে ডাক পেলে আতঙ্কিত হয়ে যেতেন। আপনার সিভির প্রতিটি পয়েন্ট ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হতে হবে। যদি আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, তা সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে।
ক্যারিয়ার–বিষয়ক সাবেক পরামর্শদাতা জেসি ক্যাস কারলিন বলেন, কখনো কখনো প্রার্থীরা ভুলবশত অনলাইন ফর্মে এআইয়ের প্রম্পট রেখেই পাঠিয়ে দেন। একবার এক প্রার্থী প্রশ্নের জবাবে লিখেছিলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে আমার কোনো অনুভূতি নেই।’
আরও পড়ুনবিমানবাহিনীতে বেসামরিক পদে বিশাল নিয়োগ, পদ ৩০৮২০ অক্টোবর ২০২৫এআই আপনার আবেদনপত্রকে আরও পরিশীলিত করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়োগকর্তারা সংযোগ স্থাপন করতে চান একজন বাস্তব ব্যক্তির সঙ্গে, কোনো অ্যালগরিদমের সঙ্গে নয়।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মাথায় রেখে স্থাপনার নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স্থাপত্য শাখার নোবেল হিসেবে খ্যাত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী এই স্থপতি বলেছেন, “একজন শিল্পী একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আর তার শিল্পকর্ম তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখে।”
শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিন’ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বিটুইন ইরোশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি’ শিরোনামে উপস্থাপনায় মেরিনা তাবাসসুম তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জীবন্ত শিল্প। একজন স্থপতির দায়িত্ব শুধু কাঠামো তৈরি নয়, বরং এমন কিছু সৃষ্টি করা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ ও সময়ের সঙ্গে কথা বলে।”
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, “আমাদের কাজ যেন এই মাটির বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে।”
তিনি যোগ করেন, “চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। তাদের জীবনযাপন ও বাসস্থানকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে স্থাপত্যের নতুন ধারণা প্রয়োগ জরুরি।”
মেরিনা তাবাসসুম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনযোগ্য ঘর তৈরিতে তার দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নকশা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, বরং মানুষের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করা। চরাঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুললেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আরকিকানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্থাপত্য আজ বিশ্বে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে। মেরিনা তাবাসসুমের মতো স্থপতিরা আমাদের গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”
পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্থপতি মৌসুমী আহমেদ। স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদের সঞ্চালনায় পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর জয়নাব ফারুকী আলী, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল ও প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক।
সমাপনী বক্তব্যে বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, “দেশের স্থাপত্য ও সিরামিক শিল্প একে অপরের পরিপূরক। শিল্প, শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত স্থপতি, প্রকৌশলী, সিরামিক শিল্প উদ্যোক্তা, শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাসুদ