পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো ও ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের দাবি
Published: 2nd, November 2025 GMT
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো এবং সেনা ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করা বাঙালিরা। ‘অশান্ত পাহাড় সার্বভৌমত্বের হুমকি, জাতীয় নিরাপত্তায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব দাবি জানান তাঁরা।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’ এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সাবেক সেনা কর্মকর্তারাসহ রাজনীতিবিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার দেশ যদি সুরক্ষিত না থাকে, দেশের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে কিসের গণভোট আর কিসের নির্বাচন? সব দুর্যোগের সময় আপনাদের পাশে যে সেনাবাহিনী দাঁড়ায়, সেই সেনাবাহিনীর প্রতি এত এত অবহেলা কেন? একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হিসেবে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কারণ, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে এই সরকার দারুণভাবে অবমূল্যায়ন করেছে। তো আমার অনুরোধ থাকবে, সরকার এদিকে খেয়াল দেবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোনো অবহেলা করা যাবে না। ওখানে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য যা প্রয়োজন, ক্যাম্প বাড়ানো, সেনা বাড়ানো; তা করতে হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক খেলা চলবে না।’
সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক থোয়াই চিং মং শাক বলেন, ‘আমাদের এই পাহাড়ে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা যেমন শহীদ হন, আবার একইভাবে বাংলাদেশের নাগরিক বাঙালি, অবাঙালিরাও শহীদ হন। আমরা কেন সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছি, এই রাষ্ট্র কী করেছে এত বছর?’
পাহাড়ে নিরাপত্তার জন্য সেনা ক্যাম্প বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে থোয়াই চিং মং শাক বলেন, ‘আমাদের দাবি দুটি দাবি হচ্ছে ১৯০০ সালে পাহাড় নিয়ে করা ব্রিটিশ আইন বাতিল করতে হবে। কারণ, পাহাড়ে বাঙালি ও অবাঙালিদের ভেতর দ্বন্ধ-সংঘাত, অবিশ্বাস তৈরির জন্য দায়ী এই আইন। দ্বিতীয়ত ১৯৮৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদ যে আইন রয়েছে, এই আইনকেও বাতিল করতে হবে। কারণ, এই আইনের মাধ্যমে আমরা এখনো বিভাজিত হয়ে আছি।’ উপজাতি, আদিবাসী, সেটেলার ইত্যাদি শব্দগুলো বাদ দিয়ে বাঙালি, অবাঙালি বলার আহ্বান জানান সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক থোয়াই চিং মং শাক।
সাবেক মেজর ও জনতার দলের মুখপাত্র দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘ইন্ডিয়ায় এই মুহূর্তে সাতটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে, তারা নিজেদের আন্দোলন দমানোর জন্য প্রচণ্ড রকম কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে, আর একই সঙ্গে বাংলাদেশেও যেন একটা এ রকম বিচ্ছিন্নতাবাদী গন্ডগোল চলতে থাকে, সে জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে নানা কাণ্ড করছে। ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, আজও সীমান্তের ওপারে কিছু এনজিও ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক এই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে যা ক্রস বর্ডার হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার এর আধুনিক রূপ।...আমাদের সার্বভৌমত্বের এই দুর্বল অংশ বা সফট ভালনারেবিলিটি যেটা আছে, এটাকে এখনই যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ আসতে যাচ্ছে।’
গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ‘আমি রীতিমতো বাকরুদ্ধ, কীভাবে পাহাড় থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা চিন্তা করেন? যেখানে সেনা ক্যাম্প আরও বাড়ানো দরকার, সেখানে তারা সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করছে। আমি আজ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আহ্বান জানাব যে আপনি অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের এই পার্বত্য অঞ্চলে সেনা ক্যাম্প নয়, আমরা সেখানে স্থায়ী ক্যান্টনমেন্ট চাই। সেখানে ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করতে হবে। এখানে কোনো ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ, আমেরিকান আধিপত্যবাদ, পাশ্চাত্যের কোনো আধিপত্যবাদ এই বাংলার মাটিতে চলতে পারে না।’
এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান একটি ভিডিও উপস্থাপন করেন। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নানা ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘পাহাড়ে সেনাসদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করে দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করে যান। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁরা ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন। পরিবার থেকে দূরে থাকেন। অথচ তাঁদের জন্য হিল ভাতা মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। পৃথিবীর কোনো সেনাবাহিনীতে এমন অবমূল্যায়ন নেই। আমরা অবিলম্বে পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করা সেনাসদস্যদের জন্য হিল ভাতা বাড়ানোর দাবি জানাই।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে। সেখানে আমাদের কোনো শ্রেণি বলতে নেই। সেখানে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন আর পার্বত্য মন্ত্রী বলেন বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, সব জায়গায় হেডম্যান কারবারি তাদের বসিয়ে রেখে আমাদের সেখানে শাসন আর শোষণের হাতিয়ার বানিয়েছে। সেখানে অবাঙালি উপজাতি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা লোকজন ব্যবসা করলে কোনো কর দিতে হয় না, আর আমাদের সেখানে কর দিতে হয়। অর্থাৎ আমাদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ন টনম ন ট কর মকর ত আম দ র স র জন য র আহ ব অব ঙ ল ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫