রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ
Published: 12th, November 2025 GMT
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে আবু তাহের নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে হলে নির্যাতন, হুমকি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থীকে মতিহার থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আবু তাহের রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক সাহার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আবু তাহের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং হামলায় অংশ নেন। আন্দোলনের পর থেকে তিনিসহ অভিযুক্ত ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি গোপনে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন বিষয় প্রচার করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গতকাল পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পথে কয়েকজন শিক্ষার্থী আবু তাহেরকে আটকান। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও দুজন থাকলেও তাঁরা পালিয়ে যান। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ঘিরে ধরে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কৈফিয়ত চান এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না বলে জানান। একপর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবু তাহেরকে উদ্ধার করে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আবু তাহের ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই, তবে কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করেছেন। ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। পুলিশ আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তাহের সম্প্রতি ফেসবুকে আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচি নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক শিক্ষার্থীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কিছু মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লেনদেন স্বাভাবিক করার চেষ্টায় প্রশাসকেরা
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকেরা। গ্রাহকদের সঙ্গে সভা করে তাঁরা আমানত ফেরতের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রাহকেরা যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চাহিদামতো উত্তোলন করতে পারেন, সে উদ্যোগও নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো আয় যাতে তাঁদের সুবিধাভোগীরা সময়মতো পান, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংক পাঁচটিকে।
গত বুধবার ব্যাংক পাঁচটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর দুই দফায় প্রশাসক দলের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ব্যাংকগুলো গভর্নরকে জানায়, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি শাখায় টাকা তোলার অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া অন্যত্র স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে দুটি ব্যাংকের প্রশাসক দল গ্রাহকদের সঙ্গেও আলাদা সভা করেছে। এই দুটি ব্যাংকের প্রশাসকেরা ঢাকার বাইরে গিয়েও গ্রাহকদের সঙ্গে সভা করার পরিকল্পনা করছেন। এসব বৈঠকে প্রশাসকেরা গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানান। প্রশাসকেরা গ্রাহকদের বলেন, সরকার এখন ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে। তাই আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রশাসক দলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবে যেন ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা আর খারাপ না হয়। এ জন্য শুরু থেকেই পুরো ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি বুঝে নিতে বলা হয়। ব্যাংকগুলোতে দৈনিক ভিত্তিতে কত টাকা আদায় বা জমা হচ্ছে এবং কত টাকা উত্তোলিত হচ্ছে, সে হিসাব শুরু করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে কীভাবে একীভূত করা যায়, সে বিষয়েও কাজ শুরু করেছেন প্রশাসকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হবে ব্যাংকের প্রযুক্তিব্যবস্থা একীভূত করা। এতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, পাঁচ ব্যাংক তিন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন সেবা পণ্যও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে, নাকি এখনকার সফটওয়্যারের কোনোটি বেছে নেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর জনবল ও শাখা ব্যবস্থাপনা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ। আপাতত সব জনবল রেখে শাখাগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে—এমন পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আপাতত আমানত বিমা তহবিল থেকে গ্রাহকদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ওই প্রজ্ঞাপনে গ্রাহকেরা কখন থেকে টাকা তুলতে পারবেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হবে।
এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান। ইউনিয়ন ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তাঁদের সঙ্গে আরও চারজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পাঁচ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট ২৫ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।