প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির মিত্রদের মধ্যে অস্থিরতা
Published: 12th, November 2025 GMT
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড় নিয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে না আসায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, প্রার্থী ঘোষণায় যত দেরি হবে, ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচন প্রস্তুতিতে ততই বিপাকে পড়বেন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, শরিকদের আসন চূড়ান্ত করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবেন।
গত সোমবার রাতে বিএনটির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিএনপি ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। পরে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, কোন আসনে কে?০৩ নভেম্বর ২০২৫বিএনপি এখন পর্যন্ত আমাদের (গণতন্ত্র মঞ্চ) একজনকেও বলেনি যে আপনারা নমিনেশন পাবেন। তারা কাকে কোথায় ভাবছে, তার প্রস্তাব পেলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম।মাহমুদুর রহমান মান্না, সভাপতি, নাগরিক ঐক্যশরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, এখন নভেম্বর মাস চলছে। নির্বাচনের আগে সময় আছে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মনোনয়ন নিশ্চিত না করায় তাঁরা অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন। অনেকে নির্বাচনী এলাকায় সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। আবার জোটের প্রধান দল হিসেবে সম্ভাব্য আসনগুলোতে শরিক দলের নেতারা স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সে রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাঁরা বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের আসন নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। যাঁরা শরিকদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছেন, তাঁদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বসবেন। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলোর কাছ থেকে বিএনপি যে প্রার্থী তালিকা পেয়েছে, সেটি বেশ বড়। জোট ও দলগুলোকে তালিকা সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়েছে। সে আলোকে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের ১৪২ জনের প্রার্থী তালিকা সংক্ষিপ্ত করে ৫০ জনের নাম দিয়েছে। এভাবে অন্য দলগুলোও প্রার্থী তালিকা ছোট করে জমা দিয়েছে। সে তালিকা ধরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীর জিতে আসার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছেন।
আরও পড়ুন কিছু আসনে বিএনপির মনোনীতদের নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, বাদ পড়েছেন উল্লেখযোগ্য অনেকে০৫ নভেম্বর ২০২৫বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা নিজেরা শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রার্থিতার বিষয়টি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন।শরিকদের জন্য ২৩ আসন প্রায় চূড়ান্তবিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা নিজেরা শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রার্থিতার বিষয়টি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। বিগত আন্দোলনে শরিক দলগুলোর নেতাদের ভূমিকা, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজনীয়তা—এ বিষয়গুলো প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিচ্ছেন। সে হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের জন্য অন্তত ২৫টি আসন ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। এই হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেই।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির এমন একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে তাঁরা ২৩টি আসন চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের পাঁচটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে পাঁচটি, ১২–দলীয় জোটকে তিনটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (বিজেপি) দুটি, গণ অধিকার পরিষদকে দুটি ও এলডিপিকে দুটি আসন দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণফোরামকে একটি করে আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। তাদের কাউকে কাউকে প্রার্থিতার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হলেও এখনো নাম ঘোষণা করা হয়নি।
আরও পড়ুনমিত্রদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে হিসাব কষছে বিএনপি ১৫ অক্টোবর ২০২৫তবে প্রার্থিতা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে অভিযোগ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, নিজ এলাকা বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে তাঁকে ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আবার বগুড়ায় সেখানকার বিএনপির নেতারা নানা কথা ছড়াচ্ছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি তো এখন পর্যন্ত আমাদের (গণতন্ত্র মঞ্চ) একজনকেও বলেনি যে আপনারা নমিনেশন পাবেন। তারা কাকে কোথায় ভাবছে, তার প্রস্তাব পেলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম। এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত দল র ন ত দলগ ল র রহম ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ নূর হোসেনের পিতার মৃত্যুর পর কিছু কথা
গত ৫ মার্চ, শনিবার গভীর রাতে, শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা আর বুকের মধ্যে গভীর বেদনা নিয়ে নির্বাক মজিবুর রহমানের মৃত্যু হলো। ১৯৮৭ সালের গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের পিতা হলেন মজিবুর রহমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
বিগত বছরে ১ আগস্ট (২০০৪ সালে) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। একাধিক হাসপাতালে চিকিত্সার পর গত ৩ নভেম্বর মিরপুরের বাসায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আমরা গত বছরের ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেনকে স্মরণ করে তাঁর গুরুতর অসুস্থতার খবর ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোতে একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। তারপর তাঁর মৃত্যুবরণের সংবাদ ছাপলাম ৭ মার্চ। আমরা জানতাম, তাঁর জীবন আর দীর্ঘ হবে না। তাঁর মৃত্যু প্রায় আসন্ন। তারপরও মজিবুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।
আরও পড়ুনশহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা ১০ নভেম্বর ২০১৭বৃদ্ধ মজিবুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ কোনো গুরুত্ব পায়নি টেলিভিশন বা দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে। অথচ একসময় সেই গত শতাব্দীর আশির দশকে শহীদ নূর হোসেন আর তার পিতাকে নিয়ে কত না হৈচৈ আর মাতামাতি হয়েছিল। কত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে সভা-সমাবেশে।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বরে আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ২৪ বছরের যুবক নূর হোসেন। দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রে তার ছবি ছাপা হলো। সারা দুনিয়ার সংবাদ হলেন নূর হোসেন। নূর হোসেনকে নিয়ে কবিতাও লেখা হলো অনেক। গল্প আর নাটক হলো। পোস্টারের বিষয় হয়ে উঠলেন নূর হোসেন। আশির দশকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নূর হোসেন নতুন এক সাহস, এক প্রেরণা হয়ে উঠেছিল।
১০ নভেম্বর নূর হোসেনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে তার পরিবারও সংবাদ হয়ে উঠেছিল। দৈনিক, সাপ্তাহিক আর মাসিক পত্রিকায় তাদের নিয়ে অসংখ্য খবর বের হলো। নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের অনেক সাক্ষাত্কার নেওয়া হলো। ছোট-বড় নানা রকম সভা-সমাবেশ, আলোচনা, এমনকি শহীদ মিনারে বুদ্ধিজীবীদের মস্ত বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রধান অতিথি করা হলো। প্রচুর সম্মান দেওয়া হলো তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে। মজিবুর রহমান যারপরনাই খুশি ছিলেন সে দিনগুলোতে। নূর হোসেনের পিতা বৃদ্ধ মজিবুর রহমান গর্বিত হৃদয়ে পুত্রশোকের সান্ত্বনা খুঁজলেন।
কোনো কোনো পত্রিকায় খবর বের হয়েছিল, জুরাইনের গোরস্থানে তার কবর হয়েছে। এ খবর শুনে নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমান ১৩ নভেম্বর দৌড়ে গিয়েছিলেন সে জায়গায়। জুরাইনের কবরখোদকরা তাকে জানায়, ১২ নভেম্বর শেষরাতে, সময় রাত ৩টা হবে, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের গাড়িতে করে তিনটি লাশ আনা হয়েছিল। পুলিশ ছিল সঙ্গে।সে সময় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহযোগীরা নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের বনগ্রামের এক ঘরের গেরস্থালিতে গেলেন। শুধু যাননি জাতীয় পার্টি আর জামায়াতে ইসলামীর কেউ। সে ঘরে নেতাদের বসতে দেওয়ার মতো জায়গা ছিল না। তবু এমন সব ব্যক্তির আগমনে শহীদের পিতা-মাতা উচ্ছ্বাসে তাদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি তাদের বারবার বলেছেন, আমরা কিছু চাই না। আমাদের ছেলেকে আর কোনো দিন ফিরে পাব না। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ আমার ছেলের এ স্লোগান যদি পূরণ হয়, তাহলেই আমরা খুশি।
ঢাকার রাজপথে নূর হোসেন