মানব-ইতিহাসের প্রাচীন সমস্যা বৈষম্য। এর রয়েছে নানান রূপ, কাঠামো ও ধরন। জাতিগত ও পরিচয়বাদী বৈষম্য সম্ভবত সবচেয়ে পুরোনো রূপ। বৈষম্যের কুযুক্তি হিসেবে জাতিগত বিবেচনার বাইরেও অনেক সময় ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চলসহ নানা মানদণ্ড হাজির করা হয়। 

এসব মানদণ্ডের শিকড় থাকে সমাজের পরতে পরতে, নিত্যদিনের নানা বয়ানে ও বিশ্বাসের গভীরে। ফলে বহু মনীষার স্বপ্ন আর বহু সাহসী মানুষের চেষ্টা ও উদ্যোগের পরেও জাতিগত ও পরিচয়বাদী বৈষম্য খুব বেশি কমেনি। তীব্রতার কমবেশ থাকলেও সব মহাদেশে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বৈষম্যের নতুন-পুরোনো সব ধরন জারি রয়েছে। 

বৈষম্য কমানোর চেষ্টা অনেকদিনের

তবে বৈষম্য কমানোর চেষ্টাও বৈষম্যের সমান বয়সী। গত বছর বাংলাদেশেও বৈষম্যবিরোধী একটা গণ-অভ্যুত্থান হয়ে গেল; দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে যা বেশ অভিনব ঘটনা। তবে সেই অভ্যুত্থানও বাংলাদেশে জাতিগত বৈষম্যের তীব্রতা কমাতে পারল কি? বছর পেরোতেই আমরা কিন্তু দেখছি সমাজের নানা অংশকে ‘অপর’ করে তোলা এবং তাদের প্রতি জুলুমের সুরাহা না হওয়া। 

অর্থনৈতিক বৈষম্যের ছবিই বেশি চোখে পড়ে; পরিচয়বাদী জুলুম চলে সামাজিক আলো-আঁধারির মধ্যে। কিন্তু জাতিগত বৈষম্য অর্থনৈতিক বৈষম্যের চেয়েও বাড়তি কিছু। সবার সঙ্গে একই জনপদে জীবনযাপনের অনেক কিছুর অংশীদার হয়েও কোনো কোনো গোষ্ঠী বিশেষ ভিন্নতার কারণে ‘অপর’ শ্রেণিতে পড়ে যেতে পারে। এই অপরায়ণকে ন্যায্যতা দিতে নানা মতাদর্শেরও প্রচার চলে। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধরনই এমন করে রাখা হয় যে বিশেষ জাতি বা ধর্ম বা লিঙ্গের সদস্যদের ‘সংখ্যাগুরু’ বা ‘সবল’দের সমান কাতারে আসার উপায় থাকে না। রাজনৈতিক কাঠামোটাই এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন সংখ্যায় স্বল্পরা রাষ্ট্রীয় পরিসরে সামনের সারিতে আসতে না পারে; বরং তাদের জাতীয় ঐক্যের সমস্যা আকারে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা দেখা যায়। ইদানীং ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করে এ রকম জাতিবাদী বিদ্বেষ আন্তমহাদেশীয় চেহারা নিচ্ছে। 

এ রকম জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ববাদের প্রধান এক ভিত্তি হলো জাতীয়তাবাদী অহং। আবার জাতীয়তাবাদী নিজেও অনেক সময় নির্বাহী ক্ষমতার লাগাম পেয়ে শ্রেষ্ঠত্ববাদের দাবি নিয়ে হাজির হয়। এ দুইয়ের মিলন যখন সমাজের স্তরে স্তরে প্রাতিষ্ঠানিকতা পেতে থাকে, তখন সেটা ফ্যাসিবাদের চেহারা নেয়। ফ্যাসিবাদ বিশেষ বিশেষ আদর্শ, বিশ্বাস, প্রতীক ও স্লোগান ব্যবহার করে সমাজে ভেদরেখা বাড়ায়, যার প্রকাশ সহিংসও হতে পারে। বলা বাহুল্য, এসব পেরোনোর চেষ্টাও সব সমাজেই ছিল এবং আছে। বাংলাদেশেও আছে। ২০২৪ সালের আগস্টে সেই চেতনা কত তীব্র ছিল, আমরা তা দেখেছি। তখন শিক্ষার্থীসমাজের প্রত্যাশা ছিল ধর্মীয়, বর্ণগত, জাতিগত ও লিঙ্গীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশ আবার অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হয়ে উঠবে। পুরোনো নেতৃত্ব, পুরোনো রাজনীতির ভুলগুলো সংশোধন করা হবে। হলো কি সেটা? 

লেখক আহমদ ছফা মুক্তিযুদ্ধের পর লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াকে পথ দেখাবে।’ অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা দেশ গঠনে সামনের দিনে ঢাকা নেতৃত্ব দেবে, এখানে একটা রেনেসাঁ বা জাগরণ ঘটবে। তাতে অনুপ্রাণিত হবে আশপাশের নিপীড়িত জাতিগুলোও। পারল কি বাংলাদেশ সেদিকে দুই কদম এগোতে? চব্বিশ পেরিয়ে পঁচিশের শেষলগ্নে দাঁড়িয়ে কী দেখছি আমরা? কী পেলাম বা পেতে যাচ্ছি আমরা? 

জুলাই সনদে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষিত কি হয়েছে

বহুল আলোচিত জুলাই সনদে এমন কী আছে, যা এ দেশে জাতিগত সংখ্যালঘু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দলিত বা নারীদের বঞ্চনার অবসান ঘটাবে? এসব গোষ্ঠীকে পিছিয়ে রাখার ‘ঐতিহ্য’ বদলাতে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গীকার আছে কি সেখানে? 

যে জুলাই সনদের প্রাথমিক অধ্যায়ে ছিল অনেকগুলো সংস্কার কমিশন। ১১টি কমিশন গঠিত হয়েছিল। তার মধ্যে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কমিশন ছিল সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা বিষয়ে। এ দুই কমিশনে ১৮ জন সদস্য ছিলেন। একজনও কি ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে রাখা যেত না? আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ১০ সদস্যের প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনেও এ রকম কারও ঠাঁই হয়নি। এমনও হতে পারত, কমিশনের সদস্য না করা হলেও কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে এ রকম জনগোষ্ঠীগুলোর বঞ্চনা লাঘবে প্রত্যাশিত পদক্ষেপের সুপারিশ করে তাদের জাতীয়
সংস্কার প্রচেষ্টায় শামিল করা হয়েছে। সে রকম কিছু কি হলো? 

দেশে দলিতদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বঞ্চনার পাশাপাশি তারা অচ্ছুতধর্মী সমস্যায়ও ভোগে। এই আদিম বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে তারা বৈষম্যবিরোধী আইন চায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কি বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারত না? 

১৯৫৪ সালেও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯ আসনে পৃথক নির্বাচনব্যবস্থায় ৭২ জন ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অথচ এখন স্বাধীন দেশে জাতীয় নির্বাচন শেষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধি থাকেন গড়ে ২০ জনের মতো। নির্বাচন সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনীতিবিদদের অন্তত জনসংখ্যার হিস্যা অনুযায়ী এসবের সংশোধনমূলক কিছু পথ দেখাতে পারত। 

সবাই বলছে আমরা ‘দ্বিতীয় রিপাবলিকে’ আছি! দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রথম রিপাবলিকের চেয়ে ঠিক কী কী কারণে আলাদা? বৈষম্য ও বঞ্চনার পুরোনো গুদামগুলো পর্দা দিয়ে আড়াল করে রেখে কি বাংলাদেশ আদৌ নতুন কোনো বন্দোবস্ত গড়তে পারল? সমাজের নিচু তলায় কান পাতলে নিশ্চয়ই আমরা তার উত্তর পাব। 

দ্বিতীয় রিপাবলিকে দলিত কলোনিগুলো, দূর পাহাড়ের গ্রামগুলো, মূক-বধিরের মতো গুটিয়ে থাকা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাড়াগুলোকে সমমর্যাদা আর পূর্ণ নিরাপত্তাবোধে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে যা দরকার ছিল, গত ১৫ মাসে তার উল্টো অনেক ব্যাপার ঘটে গেছে।

ঢাকার ফার্মগেটের দেয়ালে গ্রাফিতি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক জ ত গত ব র প বল ক এ রকম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোটে ৪টির বেশি প্রশ্ন রাখার চিন্তা সরকারের

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে গণভোটে চারটির বেশি প্রশ্ন রাখার চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল একমত, সেগুলো নিয়ে একটি প্রশ্ন হবে। আর সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসহ যেসব মৌলিক প্রস্তাবে বড় দল বিশেষ করে বিএনপির ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে আলাদা কয়েকটি প্রশ্ন থাকবে। সব মিলিয়ে গণভোটে চার-পাঁচটি প্রশ্ন রাখা হতে পারে। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সরকার আশা করছে, এভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেবে।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।

সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাব খসড়া আদেশের তফসিলে রাখা হয়েছে। একটি আদেশ জারি করে গণভোট করার সুপারিশ ছিল ঐকমত্য কমিশনের। সেখানে একটিই প্রশ্ন রাখার সুপারিশ ছিল।

৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি সংবিধান-সম্পর্কিত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রস্তাবে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ভিন্নমতের বিষয়টি রাখা হয়নি।

সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাব খসড়া আদেশের তফসিলে রাখা হয়েছে। একটি আদেশ জারি করে গণভোট করার সুপারিশ ছিল ঐকমত্য কমিশনের। সেখানে একটিই প্রশ্ন রাখার সুপারিশ ছিল। সেটি হলো, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং এর তফসিলে থাকা সংস্কার প্রস্তাবগুলো সমর্থন করেন কি না। গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) না রাখায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিএনপি। তারা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চায়। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সুপারিশ নিয়ে ইতিবাচক হলেও আগে গণভোট চায়। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে কিছু পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভিন্নমত থাকা ১৮টি সংস্কার প্রস্তাবের সব কটি তিন-চারটি প্রশ্নের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। তা সম্ভব না হলে কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হতে পারে।প্রশ্নগুলো কী হতে পারে

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টি প্রস্তাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দল একমত। এগুলো নিয়ে গণভোটে একটি প্যাকেজ প্রশ্ন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখানে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে এই ৩০টি সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না। এর বাইরে ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বড় ধরনের মতবিরোধ আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব। এগুলো নিয়ে গণভোটে আলাদা তিন-চারটি প্রশ্ন করার চিন্তা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মতবিরোধ থাকা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন। গণভোটে আলাদা একটি প্রশ্ন করা হবে, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন চান কি না। আরেকটি প্রশ্ন রাখা হতে পারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেভাবে প্রস্তাব করেছে, সেভাবে বাস্তবায়ন চান কি না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ ও ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে হবে গণভোট।

ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) নিয়োগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে আলাদা একটি প্রশ্ন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হোক তা চান কি না, এমন একটি প্রশ্ন রাখা হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভিন্নমত থাকা ১৮টি সংস্কার প্রস্তাবের সব কটি তিন-চারটি প্রশ্নের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। তা সম্ভব না হলে কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ ও ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে হবে গণভোট। গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে সংসদ সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, তা আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন।আসিফ নজরুল, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টাআইন উপদেষ্টা যা বললেন

আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে, এ ধরনের প্রত্যাশা আমরা করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যাশা করেই আমরা বসে থাকিনি। আমরা নিজেদের মতো কাজ করেছি। সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, তা আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন।’

গতকাল বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইনগত সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ সংশোধন বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ে এটা আলোচনা করছি। সব দলের প্রত্যাশার প্রতি সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের এবং জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সেটাই আমরা করতে যাচ্ছি।’

এর আগে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা। বক্তব্যে তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন এত আলোচনা করেছে, অথচ সংস্কার নেই, পণ্ডশ্রম হয়েছে, এমন দোষ দেওয়া হচ্ছে। অপপ্রচারের মাত্রা এমন জায়গায় চলে গেছে যে ২৫ লাখ টাকা খাবারের বিল বানিয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। সবকিছুতে সীমা থাকা উচিত।

সংস্কার বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্রের বিরোধিতার মুখে পড়ার কথাও বলেন আইন উপদেষ্টা। পুলিশ সংস্কার কমিশন আইনের খসড়া তৈরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই আইন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করার কথা ছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেওয়ার পর তারা এটি প্রস্তুত করেছে। আইনটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল যে কমিশন তিনজন আইজিপির নাম প্রস্তাব করবে এবং সরকার সেই তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে আইজিপি পদে নিয়োগ দেবে। যখন আইনটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে পাঠানো হয়, তখন আমলাতন্ত্র প্রচণ্ডভাবে আইনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ