একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংককে যারা ‘সমস্যাগ্রস্ত’ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ২ নভেম্বর একই মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংককে সমস্যাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং খেলাপি ঋণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেসব ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার করার কথাও বলা হয়েছে অর্থ বিভাগের চিঠিতে।

চিঠিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করার কথা উল্লেখ করা হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গতকাল সচিবালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাব।’

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বেসরকারি মালিকানাধীন এই পাঁচ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। ব্যবস্থাও নেবে তাই বাংলাদেশ ব্যাংক।

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক করা হচ্ছে। এ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। নতুন ব্যাংকটির চেয়ারপারসন হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাবনাজমা মোবারেক, সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ

পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা দুজনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল আলম নিজেই। এসআইবিএলের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবাসী নিজাম চৌধুরী, ব্যাংকটির বাকি পরিচালকেরা ছিলেন এস আলমের আত্মীয়স্বজন ও কর্মচারীরা। আর ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আগে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম। পরে এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.

সেলিম উদ্দিনকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হবে। তবে সরকারি মালিকানাধীন হলেও তা পরিচালিত হবে বেসরকারিভাবে। আর কর্মীদের বেতন হবে বাজারভিত্তিক, আমানতকারীরা মুনাফাও পাবেন বাজারদর অনুযায়ী।

গভর্নর সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘পাঁচ ব্যাংকে যে জনবল আছে, তারা সবাই থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখা কোথায় স্থানান্তর করা যায়, তা যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারও চাকরি যাবে না। ভবিষ্যতে একীভূত ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলে তখন চাহিদা অনুযায়ী জনবল সমন্বয় করা হবে।’

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার বিপরীতে ব্যাংক পাঁচটির সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, এসআইবিএলের ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোনো কিছু পাঠালে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম এস আলম পর চ ল এক ভ ত আলম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংককে যারা ‘সমস্যাগ্রস্ত’ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ২ নভেম্বর একই মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংককে সমস্যাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং খেলাপি ঋণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

যেসব ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার করার কথাও বলা হয়েছে অর্থ বিভাগের চিঠিতে।

চিঠিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করার কথা উল্লেখ করা হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গতকাল সচিবালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাব।’

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বেসরকারি মালিকানাধীন এই পাঁচ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। ব্যবস্থাও নেবে তাই বাংলাদেশ ব্যাংক।

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক করা হচ্ছে। এ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। নতুন ব্যাংকটির চেয়ারপারসন হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাবনাজমা মোবারেক, সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ

পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা দুজনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল আলম নিজেই। এসআইবিএলের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবাসী নিজাম চৌধুরী, ব্যাংকটির বাকি পরিচালকেরা ছিলেন এস আলমের আত্মীয়স্বজন ও কর্মচারীরা। আর ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আগে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম। পরে এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সেলিম উদ্দিনকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হবে। তবে সরকারি মালিকানাধীন হলেও তা পরিচালিত হবে বেসরকারিভাবে। আর কর্মীদের বেতন হবে বাজারভিত্তিক, আমানতকারীরা মুনাফাও পাবেন বাজারদর অনুযায়ী।

গভর্নর সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘পাঁচ ব্যাংকে যে জনবল আছে, তারা সবাই থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখা কোথায় স্থানান্তর করা যায়, তা যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারও চাকরি যাবে না। ভবিষ্যতে একীভূত ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলে তখন চাহিদা অনুযায়ী জনবল সমন্বয় করা হবে।’

একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার বিপরীতে ব্যাংক পাঁচটির সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, এসআইবিএলের ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোনো কিছু পাঠালে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ