লেনদেন স্বাভাবিক করার চেষ্টায় প্রশাসকেরা
Published: 12th, November 2025 GMT
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকেরা। গ্রাহকদের সঙ্গে সভা করে তাঁরা আমানত ফেরতের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রাহকেরা যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চাহিদামতো উত্তোলন করতে পারেন, সে উদ্যোগও নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো আয় যাতে তাঁদের সুবিধাভোগীরা সময়মতো পান, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংক পাঁচটিকে।
গত বুধবার ব্যাংক পাঁচটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর দুই দফায় প্রশাসক দলের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ব্যাংকগুলো গভর্নরকে জানায়, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি শাখায় টাকা তোলার অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া অন্যত্র স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে দুটি ব্যাংকের প্রশাসক দল গ্রাহকদের সঙ্গেও আলাদা সভা করেছে। এই দুটি ব্যাংকের প্রশাসকেরা ঢাকার বাইরে গিয়েও গ্রাহকদের সঙ্গে সভা করার পরিকল্পনা করছেন। এসব বৈঠকে প্রশাসকেরা গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানান। প্রশাসকেরা গ্রাহকদের বলেন, সরকার এখন ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে। তাই আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রশাসক দলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবে যেন ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা আর খারাপ না হয়। এ জন্য শুরু থেকেই পুরো ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি বুঝে নিতে বলা হয়। ব্যাংকগুলোতে দৈনিক ভিত্তিতে কত টাকা আদায় বা জমা হচ্ছে এবং কত টাকা উত্তোলিত হচ্ছে, সে হিসাব শুরু করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে কীভাবে একীভূত করা যায়, সে বিষয়েও কাজ শুরু করেছেন প্রশাসকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হবে ব্যাংকের প্রযুক্তিব্যবস্থা একীভূত করা। এতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, পাঁচ ব্যাংক তিন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন সেবা পণ্যও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে, নাকি এখনকার সফটওয়্যারের কোনোটি বেছে নেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর জনবল ও শাখা ব্যবস্থাপনা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ। আপাতত সব জনবল রেখে শাখাগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে—এমন পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আপাতত আমানত বিমা তহবিল থেকে গ্রাহকদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ওই প্রজ্ঞাপনে গ্রাহকেরা কখন থেকে টাকা তুলতে পারবেন, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হবে।
এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র হকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
মানবিক থেকে পড়েও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শাহীন আক্তারের গল্প যেন অনুপ্রেরণার
সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামে শৈশব কাটানো শাহীন প্রথম কম্পিউটারে হাতেখড়ি ২০০৫ সালে, স্কুলে সরকারের দেওয়া কম্পিউটারে গেম খেলার মাধ্যমে। সেই সময় থেকেই মনে জন্ম নেয় এক স্বপ্ন—একদিন কম্পিউটার নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার কারণে তিনি জানতেন না, কম্পিউটার বিষয়ে পড়তে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে থাকতে হয়। ফলে তিনি মানবিক বিভাগ থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন এবং কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না থাকার কারণে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তবু প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আগ্রহ ও আকর্ষণ কখনই কমেনি।
একদিন হঠাৎ ফেসবুকে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশন ওয়াক্ফ (আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ) আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর আবেদন করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাউন্ড ৪২-এ ‘এন্টারপ্রাইজ সিস্টেমস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিজাইন-সি#.নেট (Enterprise Systems Analysis & Design-C#) কোর্সে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। ১৪ মাসের কোর্স শেষে প্রোগ্রামের প্লেসমেন্ট সেলের সহায়তায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে নেক্সটেল কমিউনিকেশনে পেশাগত জীবন শুরু করেন। এখানে চাকরিরত থেকে ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। নিজের দক্ষতাকে আরও উচ্চতায় নেওয়ার জন্য তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লাইড পরিসংখ্যান অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স বিষয়ে আরও একটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি স্বাধীন মিউজিক লিমিটেড নামের একিট প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন।
তরুণদের শাহীন আক্তার বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে শেখার চেষ্টা করুন। সুযোগ কখন, কোথা থেকে আসবে, কেউ জানেন না; কিন্তু প্রস্তুত থাকলে সেটিই আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শাহীন আক্তার একজন প্রতিভাবান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক বেতনে স্বাধীন মিউজিক লিমিটেডে কাজ শুরু করেন। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই তাঁর মধ্যে ছিল।
নিজ অফিসে কাজ করছেন শাহীন আক্তার