পাহাড়ের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেখানে বাস করত দুই বোন—তুইচংগী ও নোয়েংগী। তুইচংগী বড়। নোয়েংগী ছোট। দুজনের খুব ভাব। টইটই করে ঘুরে বেড়ায় পুরো গ্রাম। ভোর হলেই ছোটে পাহাড়ে। ফুল কুড়িয়ে বেড়ায়।
মালা গেঁথে এক বোন পরিয়ে দেয় অন্য বোনের খোঁপায়। একজন অন্যজনকে ছেড়ে খাওয়াও মুখে তোলে না। ছোট বোনের মন খারাপ তো বড় বোনের মুখও ভার!
একবার ঘটল এক ঘটনা। তখন জুম চাষের সময়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ফসল বুনছে সবাই। তা দেখে নোয়েংগী ও তুইচংগীরও জুম চাষের ইচ্ছা জাগে। পাহাড়ের গায়ে তারাও বীজ বুনবে আর এত্ত এত্ত ফসল তুলবে ঘরে।
একদিন পাহাড়ের গহিন অরণ্যে চলে গেল দুই বোন। জংলা গাছ কেটে কেটে জমি তৈরির কাজে লেগে গেল তারা।
চৈত্র মাস। প্রচণ্ড গরম। কাজ করতে করতে ছোট বোন নোয়েংগীর খুব পিপাসা পেল। আশপাশে কোথাও কোনো জলাশয় নেই। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে।
ছোট বোনের হাল দেখে বড় বোন তুইচংগী ছটফট করে। পানির খোঁজে গহিন অরণ্যে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। কিন্তু কোথাও পানির সন্ধান পায় না। তাহলে, কীভাবে বাঁচাবে আদরের বোন নোয়েংগীকে? উপায় না পেয়ে বোনের পাশে বসে তুইচংগী কাঁদতে শুরু করল।
কিন্তু বড় বোন তুইচংগী কোথায়? চারদিকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত সে। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে হয়, এখানে তো কোনো নদী ছিল না! পানি না পেয়েই তো সে জ্ঞান হারিয়েছিল। তাহলে! এই নদী এল কোথা থেকে!হঠাৎ! কোথা থেকে যেন নেমে এলেন এক বৃদ্ধ। চুল-দাড়ি সব তাঁর ধবধবে সাদা। আলোকিত হয়ে উঠল বন। বৃদ্ধা তুইচংগীর কান্না থামালেন। তারপর কানে কানে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন। এরপর আকাশে মিলিয়ে গেলেন।
তুইচংগীর মুখে হাসি ফুটল। মনে মনে মন্ত্রটি উচ্চারণ করতেই সে মানুষ থেকে নদী হয়ে গেল।
এদিকে পানির কলকল শব্দে আর ঝিরঝিরে বাতাসে চোখ মেলে তাকাল নোয়েংগী। নদীর পানি পান করে প্রাণে বাঁচল সে।
কিন্তু বড় বোন তুইচংগী কোথায়? চারদিকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত সে। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে হয়, এখানে তো কোনো নদী ছিল না! পানি না পেয়েই তো সে জ্ঞান হারিয়েছিল। তাহলে! এই নদী এল কোথা থেকে!
নোয়েংগীর বুঝতে বাকি রইল না, নিশ্চয়ই কোনো দৈববলে তার বোন তাকে বাঁচানোর জন্য নদী হয়ে গেছে। বোনকে না পেয়ে মনের দুঃখে সে নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে শুরু করল।
তার চোখের পানি গড়িয়ে নদীতে পড়তে থাকে। বাড়তে থাকে পানি। ভাটির দেশে বন্যা দেখা দেয়।
অসময়ে এমন বন্যা দেখে ভাটি অঞ্চলের রাজা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। পানসি সাজিয়ে উৎস খুঁজতে বের হন তিনি।
একদিন রাজা এসে পৌঁছান সেই পাহাড়ের নিচে। দেখলেন, একটি মেয়ে নদীর তীরে বসে কাঁদছে। তার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে নদীতে। রাজা তাকে কান্না থামাতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু নোয়েংগীর কান্না থামে না।
অবশেষে রাজা বললেন, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তাঁর দেশের মানুষ বিপদে পড়বে, তারা সবাই ভেসে যাবে।
ধীরে ধীরে শান্ত হলো নোয়েংগীর মন। তার সব কথা মন দিয়ে শুনলেন রাজা। নোয়েংগীকে মা–বাবার কাছে পৌঁছে দিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলেন।
এদিকে দুই মেয়ের অপেক্ষা করতে করতে মা–বাবা পাগলপ্রায়। একদিন তাঁরাও মেয়েদের খুঁজতে বের হন। খুঁজতে খুঁজতে কোন দূরদেশে চলে গেছেন তাঁরা, গ্রামের কেউ জানে না।
যাওয়ার কোনো জায়গা রইল না নোয়েংগীর। কোনো উপায় না দেখে রাজা তাকে নিয়ে রাজ্যে ফিরে গেলেন।
নোয়েংগীর বুদ্ধি আর গুণে মুগ্ধ সবাই, রাজাও। একদিন সবার পরামর্শে তিনি নোয়েংগীকে রানি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কয়েক বছর পর রাজপরিবারে জন্ম নিল ফুটফুটে এক রাজপুত্র। তিন রানি তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন।রাজার ছিল তিন রানি। তাঁদের সন্তান ছিল না। রানিরা নোয়েংগীকে গ্রহণ করতে পারলেন না। তাকে নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট দিতে থাকেন। রাজবাড়িতে এভাবেই সুখ-দুঃখে কেটে গেল অনেকগুলো বছর।
নোয়েংগীর বুদ্ধি আর গুণে মুগ্ধ সবাই, রাজাও। একদিন সবার পরামর্শে তিনি নোয়েংগীকে রানি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কয়েক বছর পর রাজপরিবারে জন্ম নিল ফুটফুটে এক রাজপুত্র। তিন রানি তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন।
রাজপুত্র একদিন বড় হবে। মাকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে তিন রানিকে তখন কি ক্ষমা করবে রাজপুত্র? ভবিষ্যতের ভয়ে তিন রানি ভয়ংকর এক বুদ্ধি আঁটলেন।
রাজপুত্রকে তাঁরা ফেলে দিয়ে এলেন নদীতে। তিন রানির কূটকৌশলে রাজা জানতেও পারলেন না রাজপুত্রের জন্মের কথা।
এদিকে যে নদীতে রাজপুত্রকে ফেলে দেওয়া হলো, সেটি তার মায়ের বোন, মানে খালা—তুইচংগী। অনেক আদরে রাজপুত্রকে কোলে তুলে নিল সে। নদী মায়ের বুকে হেসে-খেলে গান গেয়ে বড় হতে থাকল সে।
এদিকে রাজপুত্রকে হারিয়ে দিশাহারা নোয়েংগী। তিন রানির ভয়ে রাজাকে কিছু জানাতে পারে না সে। শোকে-দুঃখে দিন যায়, মাস যায়, অনেক বছরও কেটে যায়।
রাজপুত্র এখন যুবক। একদিন মা তুইচংগী তাকে শোনায় দুই বোনের কাহিনি। রাজপুত্রের জন্মের কাহিনি। আর শোনায় তিন রানির অপকর্মের কথা।
নদী মা রাজপুত্রকে আদর করে বলে, তোমার সামনে কঠিন পরীক্ষা। নিজের বুদ্ধি দিয়ে জয়ী হওয়ার সময় এখন। রাজার কাছে গিয়ে তোমার পরিচয় দাও। মাকে তিন রানির যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করো।
আরও পড়ুনরানির গোপন প্রণয় ও আধফোটা ফুল৩০ অক্টোবর ২০২৫নদী মাকে ছেড়ে যেতে মন চায় না তার। কিন্তু নদী মায়ের নির্দেশ সে অমান্য করতে পারে না।
একদিন ভাটির দেশের রাজদরবারে হাজির হয় রাজপুত্র। রাজার সামনে দাঁড়ায় সে।
রাজা জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে যুবক?
রাজপুত্র উত্তর দেয়, মহারাজ, আমি আপনার সন্তান।
উত্তর শুনে রাজার হুংকার, আমার রাজ্যে মিথ্যাবাদীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সত্যি করে বলো তুমি কে?
রাজপুত্র নদী মা তুইচংগীর কাছ থেকে শোনা তার জীবনের কাহিনি রাজাকে শোনায়। রাগে-দুঃখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। যুবকের বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তায় তাকে অবিশ্বাস করতে পারেন না রাজা।
এদিকে অন্দরমহল থেকে রাজপুত্রের কথা শুনে ছুটতে ছুটতে দরবারে আসে রানি নোয়েংগী। রাজপুত্রকে জড়িয়ে ধরে। এবার সে আর তার কষ্ট চেপে রাখতে পারল না। কাঁদতে কাঁদতে তিন রানির সব অপকর্মের কথা জানাল রাজাকে।
হতবিহ্বল রাজা তিন রানিকে তক্ষুনি শাস্তি দিলেন। পাঠালেন বনবাসে। রাজপুত্র মা-বাবাকে পেয়ে পরম সুখে দিন কাটাতে লাগল। কিন্তু নদী মাকেও একটুও ভুলে গেল না। যখন খুশি তখন সে ছুটে যায় তার কাছে। যাবেই তো। নদী মা-ও যে তারই মা।
এ কারণেই লুসাই পাহাড় থেকে উদ্ভূত কর্ণফুলী নদীরই শাখা নদী তুইচং কেবল নদী নয়, লুসাই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে অতি পবিত্র স্থান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নদী মা তুইচংগী
পাহাড়ের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেখানে বাস করত দুই বোন—তুইচংগী ও নোয়েংগী। তুইচংগী বড়। নোয়েংগী ছোট। দুজনের খুব ভাব। টইটই করে ঘুরে বেড়ায় পুরো গ্রাম। ভোর হলেই ছোটে পাহাড়ে। ফুল কুড়িয়ে বেড়ায়।
মালা গেঁথে এক বোন পরিয়ে দেয় অন্য বোনের খোঁপায়। একজন অন্যজনকে ছেড়ে খাওয়াও মুখে তোলে না। ছোট বোনের মন খারাপ তো বড় বোনের মুখও ভার!
একবার ঘটল এক ঘটনা। তখন জুম চাষের সময়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ফসল বুনছে সবাই। তা দেখে নোয়েংগী ও তুইচংগীরও জুম চাষের ইচ্ছা জাগে। পাহাড়ের গায়ে তারাও বীজ বুনবে আর এত্ত এত্ত ফসল তুলবে ঘরে।
একদিন পাহাড়ের গহিন অরণ্যে চলে গেল দুই বোন। জংলা গাছ কেটে কেটে জমি তৈরির কাজে লেগে গেল তারা।
চৈত্র মাস। প্রচণ্ড গরম। কাজ করতে করতে ছোট বোন নোয়েংগীর খুব পিপাসা পেল। আশপাশে কোথাও কোনো জলাশয় নেই। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে।
ছোট বোনের হাল দেখে বড় বোন তুইচংগী ছটফট করে। পানির খোঁজে গহিন অরণ্যে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। কিন্তু কোথাও পানির সন্ধান পায় না। তাহলে, কীভাবে বাঁচাবে আদরের বোন নোয়েংগীকে? উপায় না পেয়ে বোনের পাশে বসে তুইচংগী কাঁদতে শুরু করল।
কিন্তু বড় বোন তুইচংগী কোথায়? চারদিকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত সে। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে হয়, এখানে তো কোনো নদী ছিল না! পানি না পেয়েই তো সে জ্ঞান হারিয়েছিল। তাহলে! এই নদী এল কোথা থেকে!হঠাৎ! কোথা থেকে যেন নেমে এলেন এক বৃদ্ধ। চুল-দাড়ি সব তাঁর ধবধবে সাদা। আলোকিত হয়ে উঠল বন। বৃদ্ধা তুইচংগীর কান্না থামালেন। তারপর কানে কানে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন। এরপর আকাশে মিলিয়ে গেলেন।
তুইচংগীর মুখে হাসি ফুটল। মনে মনে মন্ত্রটি উচ্চারণ করতেই সে মানুষ থেকে নদী হয়ে গেল।
এদিকে পানির কলকল শব্দে আর ঝিরঝিরে বাতাসে চোখ মেলে তাকাল নোয়েংগী। নদীর পানি পান করে প্রাণে বাঁচল সে।
কিন্তু বড় বোন তুইচংগী কোথায়? চারদিকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত সে। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে হয়, এখানে তো কোনো নদী ছিল না! পানি না পেয়েই তো সে জ্ঞান হারিয়েছিল। তাহলে! এই নদী এল কোথা থেকে!
নোয়েংগীর বুঝতে বাকি রইল না, নিশ্চয়ই কোনো দৈববলে তার বোন তাকে বাঁচানোর জন্য নদী হয়ে গেছে। বোনকে না পেয়ে মনের দুঃখে সে নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে শুরু করল।
তার চোখের পানি গড়িয়ে নদীতে পড়তে থাকে। বাড়তে থাকে পানি। ভাটির দেশে বন্যা দেখা দেয়।
অসময়ে এমন বন্যা দেখে ভাটি অঞ্চলের রাজা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। পানসি সাজিয়ে উৎস খুঁজতে বের হন তিনি।
একদিন রাজা এসে পৌঁছান সেই পাহাড়ের নিচে। দেখলেন, একটি মেয়ে নদীর তীরে বসে কাঁদছে। তার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে নদীতে। রাজা তাকে কান্না থামাতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু নোয়েংগীর কান্না থামে না।
অবশেষে রাজা বললেন, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তাঁর দেশের মানুষ বিপদে পড়বে, তারা সবাই ভেসে যাবে।
ধীরে ধীরে শান্ত হলো নোয়েংগীর মন। তার সব কথা মন দিয়ে শুনলেন রাজা। নোয়েংগীকে মা–বাবার কাছে পৌঁছে দিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলেন।
এদিকে দুই মেয়ের অপেক্ষা করতে করতে মা–বাবা পাগলপ্রায়। একদিন তাঁরাও মেয়েদের খুঁজতে বের হন। খুঁজতে খুঁজতে কোন দূরদেশে চলে গেছেন তাঁরা, গ্রামের কেউ জানে না।
যাওয়ার কোনো জায়গা রইল না নোয়েংগীর। কোনো উপায় না দেখে রাজা তাকে নিয়ে রাজ্যে ফিরে গেলেন।
নোয়েংগীর বুদ্ধি আর গুণে মুগ্ধ সবাই, রাজাও। একদিন সবার পরামর্শে তিনি নোয়েংগীকে রানি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কয়েক বছর পর রাজপরিবারে জন্ম নিল ফুটফুটে এক রাজপুত্র। তিন রানি তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন।রাজার ছিল তিন রানি। তাঁদের সন্তান ছিল না। রানিরা নোয়েংগীকে গ্রহণ করতে পারলেন না। তাকে নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট দিতে থাকেন। রাজবাড়িতে এভাবেই সুখ-দুঃখে কেটে গেল অনেকগুলো বছর।
নোয়েংগীর বুদ্ধি আর গুণে মুগ্ধ সবাই, রাজাও। একদিন সবার পরামর্শে তিনি নোয়েংগীকে রানি হিসেবে গ্রহণ করলেন। কয়েক বছর পর রাজপরিবারে জন্ম নিল ফুটফুটে এক রাজপুত্র। তিন রানি তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন।
রাজপুত্র একদিন বড় হবে। মাকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে তিন রানিকে তখন কি ক্ষমা করবে রাজপুত্র? ভবিষ্যতের ভয়ে তিন রানি ভয়ংকর এক বুদ্ধি আঁটলেন।
রাজপুত্রকে তাঁরা ফেলে দিয়ে এলেন নদীতে। তিন রানির কূটকৌশলে রাজা জানতেও পারলেন না রাজপুত্রের জন্মের কথা।
এদিকে যে নদীতে রাজপুত্রকে ফেলে দেওয়া হলো, সেটি তার মায়ের বোন, মানে খালা—তুইচংগী। অনেক আদরে রাজপুত্রকে কোলে তুলে নিল সে। নদী মায়ের বুকে হেসে-খেলে গান গেয়ে বড় হতে থাকল সে।
এদিকে রাজপুত্রকে হারিয়ে দিশাহারা নোয়েংগী। তিন রানির ভয়ে রাজাকে কিছু জানাতে পারে না সে। শোকে-দুঃখে দিন যায়, মাস যায়, অনেক বছরও কেটে যায়।
রাজপুত্র এখন যুবক। একদিন মা তুইচংগী তাকে শোনায় দুই বোনের কাহিনি। রাজপুত্রের জন্মের কাহিনি। আর শোনায় তিন রানির অপকর্মের কথা।
নদী মা রাজপুত্রকে আদর করে বলে, তোমার সামনে কঠিন পরীক্ষা। নিজের বুদ্ধি দিয়ে জয়ী হওয়ার সময় এখন। রাজার কাছে গিয়ে তোমার পরিচয় দাও। মাকে তিন রানির যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করো।
আরও পড়ুনরানির গোপন প্রণয় ও আধফোটা ফুল৩০ অক্টোবর ২০২৫নদী মাকে ছেড়ে যেতে মন চায় না তার। কিন্তু নদী মায়ের নির্দেশ সে অমান্য করতে পারে না।
একদিন ভাটির দেশের রাজদরবারে হাজির হয় রাজপুত্র। রাজার সামনে দাঁড়ায় সে।
রাজা জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে যুবক?
রাজপুত্র উত্তর দেয়, মহারাজ, আমি আপনার সন্তান।
উত্তর শুনে রাজার হুংকার, আমার রাজ্যে মিথ্যাবাদীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সত্যি করে বলো তুমি কে?
রাজপুত্র নদী মা তুইচংগীর কাছ থেকে শোনা তার জীবনের কাহিনি রাজাকে শোনায়। রাগে-দুঃখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। যুবকের বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তায় তাকে অবিশ্বাস করতে পারেন না রাজা।
এদিকে অন্দরমহল থেকে রাজপুত্রের কথা শুনে ছুটতে ছুটতে দরবারে আসে রানি নোয়েংগী। রাজপুত্রকে জড়িয়ে ধরে। এবার সে আর তার কষ্ট চেপে রাখতে পারল না। কাঁদতে কাঁদতে তিন রানির সব অপকর্মের কথা জানাল রাজাকে।
হতবিহ্বল রাজা তিন রানিকে তক্ষুনি শাস্তি দিলেন। পাঠালেন বনবাসে। রাজপুত্র মা-বাবাকে পেয়ে পরম সুখে দিন কাটাতে লাগল। কিন্তু নদী মাকেও একটুও ভুলে গেল না। যখন খুশি তখন সে ছুটে যায় তার কাছে। যাবেই তো। নদী মা-ও যে তারই মা।
এ কারণেই লুসাই পাহাড় থেকে উদ্ভূত কর্ণফুলী নদীরই শাখা নদী তুইচং কেবল নদী নয়, লুসাই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে অতি পবিত্র স্থান।