দেখতে অনেকটাই দেশি খলশে মাছের মতো। কিন্তু আকারে এর চেয়ে খানিকটা বড়। খাল-বিল আর ডোবার পানিতে জাল ফেললেই এখন উঠে আসছে এ মাছ। স্থানীয় জলাশয়ে হঠাৎ কোথা থেকে এ মাছ এল—এটি সবার অজানা। আগ্রাসী মাছটির বংশবিস্তার বাড়াচ্ছে শঙ্কা। কারণ, এ মাছ অন্য মাছের বংশবিস্তারের জন্য হুমকি।

চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের বিভিন্ন মাছের আড়ত আর হাট-বাজারে প্রায়ই দেখা মেলে এ মাছের। স্থানীয়ভাবে মাছটি হাইব্রিড খলশে নামে পরিচিত। দামে সস্তা হওয়ায় মাছটি নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এই মাছের নাম ‘স্নেকস্কিন গুরামি’। তবে এটি ‘থাই গুরামি’ নামেই পরিচিত। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওসের স্থানীয় মাছ এটি। দেশে ২০১২ সালে প্রথম মেঘনা নদীতে এটি চিহ্নিত হয়। এটি পানির কম অক্সিজেনেও টিকে থাকতে পারে। দেশে সাধারণত অ্যাকুয়ারিয়ামে এ মাছ রাখা হয়। স্থানীয় মাছের বংশবিস্তারের জন্য এ মাছ হুমকির। দ্রুত বংশবিস্তার করায় অন্য মাছের জায়গা এটি দখল করে ফেলে।

দামে কম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে মাছটির চাহিদা বাড়ছে। গত সোমবার সকালে সরেজমিনে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজার মাছের আড়তে দেখা যায়, অন্যান্য মাছের সঙ্গে নিলামে এই মাছ বিক্রি করছেন আড়তদারেরা। পাইকারিতে এক মণ মাছের দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা। সে হিসাবে কেজিতে দাম পড়ে মাত্র ৮০ টাকা।

উপজেলার সততা মাছের আড়তের মালিক শুকলাল দাস প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার মতো ফেনী নদী–সংলগ্ন মিরসরাইয়ের বেশ কিছু ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। তখন বন্যার পানির সঙ্গে এ মাছ ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে এলাকার জলাশয়ে পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় এ মাছ বিক্রি হয়।

দেশের অন্য মাছ রক্ষায় এটির চাষ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা উচিত। পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তরেরও সতর্ক হওয়া উচিত। অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য মাছ আমদানির অনুমতি দেওয়ার আগে সেসব মাছের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। তা না হলে এভাবেই ধীরে ধীরে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হবে।মো.

মঞ্জুরুল কিবরিয়া, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ

উপজেলার মিঠাছড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা কুমোদ জলদাশ প্রথম আলোকে বলেন, পুকুর, খাল-বিল ও ডোবা-জলাশয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় বলে এ মাছের জোগান বেশি। আবার কাটা কম থাকায় অনেকে শিশুদের জন্য এ মাছ কিনে নিচ্ছেন। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ এ মাছের ক্রেতা। কারণ, এটিই বাজারের সবচেয়ে সস্তা মাছ।

একই মতামত স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মলিয়াইশ গ্রামের বাসিন্দা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ২০২৪ সালের বন্যার পর এখানকার ডোবা, জলাশয়, ধানের মাঠ—সব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে মাছটি। জীবনী শক্তি বেশি হওয়ায় প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারা মাছটি গ্রাম-গঞ্জে বেশ সহজলভ্য।

পাইকারিতে প্রতি কেজি গুরামি মাছ সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সোমবার উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু বিপর্যয়ে এক দশকে ২৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত

জলবায়ু সংকট নিরসনে ব্রাজিলের বেলেম শহরে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০। সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। আজ সোমবার এ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে জলবায়ুর সংকটের ভয়াবহতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু সংকটের জেরে গত ১ দশকে ২৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ব্রাজিলে এবারের জলবায়ু সম্মেলন চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনের দায়িত্বে রয়েছেন ব্রাজিলের কূটনীতিক আন্দ্রে কোরেরা দো লাগো। সম্মেলন ঘিরে নানা আশাবাদ থাকলেও শুরুর দিনে শঙ্কার একটি কথা শুনিয়েছেন তিনি। কোরেরা বলেছেন, জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোই এই সংকট নিরসনের লড়াইয়ে আগ্রহ হারিয়েছে।

জলবায়ু সংকটের কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ বছর ২৫ কোটি হিসাবে প্রতিদিন বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘরবাড়ি ত্যাগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে কপ৩০ প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

‘নো স্কেপ-২: দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ বা ‘পালানোর পথ নেই-২: আগামীর দিশা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা, ঝড়, খরা ও তীব্র তাপমাত্রার মতো আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ও সংঘাত বাড়ছে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে আঘাত হানা বিভিন্ন দুর্যোগ, যেমন বন উজাড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বাস্তুসংস্থান ধ্বংস, খাবার ও পানির নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে।

সংঘাত ও জলবায়ুর কারণে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে—এমন দেশের সংখ্যা ২০০৯ সাল থেকে তিন গুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এরপরও দুর্দশাগ্রস্ত ও সংঘাতে জর্জর যেসব দেশে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে, ওই দেশগুলো প্রয়োজনের চার ভাগের এক ভাগ জলবায়ু সহায়তা পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা না রেখেও বাস্তুচ্যুতদের অনেক সময় দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।

দেশে দেশে দুর্যোগ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে শরণার্থী ও অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষের চার ভাগের তিন ভাগ এমন সব দেশে বাস করছে, যেগুলো উচ্চ বা চরম জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ে আক্রান্ত। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ইউএনএইচসিআর যতবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, তার তিন ভাগের এক ভাগের কারণ ছিল বন্যা, খরা, দাবানলসহ অন্যান্য চরম আবহাওয়া-সংক্রান্ত ঘটনা।

উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের মে মাসে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের রিও গ্রানদে দো সুল রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার কথা বলা হয়েছে। ওই বন্যায় ১৮১ জনের মৃত্যু হয়। বাস্তুচ্যুত হয় ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের ৪৩ হাজার শরণার্থী ছিল। এর আগের বছরে এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় মোচা।

আফ্রিকার দেশ চাদে ১৪ লাখের বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী বসবাস করে। শুধু ২০২৪ সালেই বন্যার কারণে দেশটিতে ১৩ লাখের বেশি মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ও আশ্রয়শিবির ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সুদানের শরণার্থীরা প্রতিদিনের ১০ লিটারের কম পানি পাচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে আফ্রিকার ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ডের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

১. গত ১০ বছরে প্রতিদিন বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
২. সংঘাত ও জলবায়ুর কারণে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে—এমন দেশের সংখ্যা ২০০৯ সাল থেকে তিন গুণ হয়েছে।
৩. ২০৪০ সাল নাগাদ চরম জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে পড়া দেশের সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৬৫ হতে পারে।

যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০৪০ সাল নাগাদ চরম জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে পড়া দেশের সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৬৫–তে পৌঁছাতে পারে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ গাম্বিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সেনেগাল ও মালির ১৫টি শরণার্থীশিবির বছরে প্রায় ২০০ দিন বিপর্যয়কর তাপমাত্রার মুখে পড়তে পারে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘চরম জলবায়ুর প্রভাব থেকে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে তহবিলে কাটছাঁট। আমরা যদি স্থিতিশীলতা চাই, তাহলে মানুষ যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। বাস্তুচ্যুত হওয়া থামাতে জলবায়ু তহবিল সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’

পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে এগিয়ে চীন

আজ শুরু হওয়া কপ৩০ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ১৯৪ দেশের প্রতিনিধিরা। প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছিল, সে বিষয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা। একই সঙ্গে কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা যায় এবং দরিদ্র দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।

তবে এসব লক্ষ্য পূরণের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে ব্রাজিলের কূটনীতিক আন্দ্রে কোরেরা দো লাগো বলেন, জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো এই সংকট নিরসনের লড়াইয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। তবে ভালো করছে চীন। দেশটি সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করলেও পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। অন্য দেশগুলোকে এটি অনুসরণ করতে হবে।

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে কাসিম উদ্দিনের। সম্প্রতি নদের এই চরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ২৯ অক্টোবর কুড়িগ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কোর্স সংযোজন: ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’কোর্স গেল বদলে
  • সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থের বিকল্প সংস্থান খোঁজা জরুরি: ওরলা মারফি
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স
  • গতবার আলোচনায় ছিলেন, এবার উধাও সাত্তার ভূঁইয়া ও আমিনীর ছেলে
  • সাংবাদিকতার সত্য, সাংবাদিকতার সাহস
  • জলবায়ু বিপর্যয়ে এক দশকে ২৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত
  • তিস্তা আন্দোলনের মশালমিছিলও চালানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের নামে
  • সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন সিআইডির