এবার সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ শতাংশ আসন কমিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অবকাঠামো ও জনবল-ঘাটতি আছে এমন কলেজে আসন কমেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হলো মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভুইয়া মেডিকেল কলেজ ও শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ। অবশ্য এসব কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
গত শিক্ষাবর্ষে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ছিল ৫ হাজার ৩৮০টি। এবার ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ১৪টি মেডিকেল কলেজের আসন কমানো হয়েছে ৩৫৫টি। ৩টি মেডিকেল কলেজের আসন বাড়ানো হয়েছে ৭৫টি। বাকি কলেজগুলোর আসন অপরিবর্তিত আছে। এভাবে সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন কমেছে ২৮০টি, বর্তমান যা ৫ হাজার ১০০ রয়েছে।
আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তিতে আবেদন শুরু, সরকারি মেডিকেলে আসন পুনর্বিন্যাস১১ নভেম্বর ২০২৫৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত শিক্ষাবর্ষে আসন ছিল ৬ হাজার ২৯৩টি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় ১০টিতে আসন কমিয়েছে, দুটিতে আসন বাড়িয়েছে এবং বাকিগুলোতে আসন ঠিক রেখেছে। এতে বেসরকারি মেডিকেলে ২৯২টি আসন কমেছে।
সব মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর আসন কমেছে মোট ৫৭২টি। ১০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অনেকে অভিযোগ করেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিকেল কলেজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বেসরকারি মেডিকেল নিয়ে সমালোচনা হলেও সরকারি মেডিকেলের মান নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক কম হয়। মেডিকেল শিক্ষার জন্য অবকাঠামো, দক্ষ জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দলিলে বলা হচ্ছে, বিগত সময়ে অবিবেচনাপ্রসূতভাবে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজসমূহে এসব কিছু না থাকায় প্রতিবছর যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি নিয়ে বের হচ্ছেন হাজার হাজার চিকিৎসক, যা আগামী দিনে স্বাস্থ্য খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫কেন আসন কমলস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মেডিকেল কলেজগুলোর পরিস্থিতি জানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার কাঠামোবদ্ধ মূল্যায়ন পদ্ধতি (ম্যাট্রিক্স) ব্যবহার করেছে। মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) মেডিকেল কলেজগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। আবার প্রতিটি কলেজকে নিজেকে নিজের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। এই দুটি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় আসন ও শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী এ বছর মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভুইয়া মেডিকেল কলেজ কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। মন্ত্রণালয় বলছে, এই কলেজের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল দরকার, আছে ৭০ শয্যার হাসপাতাল। কলেজটিতে অডিটরিয়াম, টিউটোরিয়াল কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লেকচার গ্যালারি, শিক্ষা উপকরণের ব্যাপক ঘাটতি আছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কলেজে নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা সপ্তাহে দু-তিন দিন ক্লাস নেন। শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জমা হয় না। প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির কারণে শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।
সব মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর আসন কমেছে মোট ৫৭২টি। ১০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।এর আগে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছিল। এই তালিকায় আছে: আইচি মেডিকেল কলেজ (ঢাকা), নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (ঢাকা), নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ (রংপুর) ও শাহ মাকদুম মেডিকেল কলেজ (রাজশাহী)।
যে ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন কমানো হয়েছে তার একটি রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ। এই কলেজের ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন আছে। মন্ত্রণালয় অনুসন্ধানে দেখেছে, কলেজটির নিজের নামে কোনো জমি নেই। দুটি একাডেমিক ভবন ভাড়া বাড়িতে। এই কলেজের জন্য ৪৫০ শয্যার হাসপাতাল দরকার। হাসপাতালে শয্যা আছে ৩৮৪টি। আরও নানা ঘাটতির কারণে মন্ত্রণালয় মনে করেছে, বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার সামর্থ্য কলেজটির নেই। তাই ১৫টি কমিয়ে আসনসংখ্যা ৭৫টি করা হয়েছে।
বাকি নয়টি কলেজেরও প্রায় একই ধরনের ঘাটতি আছে। এগুলোর মধ্যে আছে ঢাকার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরে ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ ও কিশোরগঞ্জের আ.
এ বছর একটি নতুন মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এটি ঢাকার জুরাইনের ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মেডিকেল কলেজ। কলেজটি এ বছর ৫০ জন দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে।
আরও তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এ বছর শুধু ৫০ জন করে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। এর মধ্যে আছে: সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ (বরিশাল), আহসানিয়া মিশন মেডিকেল কলেজ (উত্তরা, ঢাকা) ও ফজলুর রহমান মেডিকেল কলেজ (গেন্ডারিয়া, ঢাকা)।
আরও আছে ৭ কলেজদেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত মেডিকেল কলেজ আছে ৭টি। এর মধ্যে নতুন নেভি মেডিকেল কলেজে (চট্টগ্রাম) আসন ৫০টি। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা ১২৫। বাকি পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ। এগুলোর আসনসংখ্যা ৫০ করে। দুটি আর্মি মেডিকেলের আসন ১০টি করে বাড়ানোর কথা জানা গেছে মন্ত্রণালয় থেকে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কঠোরতা কম দেখা গেছে। একাধিক সরকারি মেডিকেলে ভর্তি এ বছর বন্ধ রাখা উচিত ছিল, যেমন দেখা গেছে বেসরকারি ক্ষেত্রে। সব মেডিকেলের মান ঠিক না হলে মানহীন চিকিৎসক আমরা পেতেই থাকব।’
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ হয়তো সঠিক ছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ছিল না। মানের প্রশ্নে সমঝোতা বা আপস করা ঠিক হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম ড ক ল কল জ ব সরক র র জন য র একট এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি মেডিকেলে কমল ২৮০ আসন, বেসরকারিতে কত
ছবি: সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি ৬৬টি মেডিকেল কলেজের আসন পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি ৬৬টি মেডিকেল কলেজের আসন পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। শিক্ষার পরিবেশ ও সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সরকারিতে ২৮০ এবং বেসরকারিতে ২৭৫টি আসন কমানো হয়েছে। আবার কয়েকটি মেডিকেলে আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারি মেডিকেলের কোনো কলেজে কত আসন কমল?ঢাকা মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
রংপুর মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ: ৫টি
হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ: ৫০টি
নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
মাগুরা মেডিকেল কলেজ: ২৫টি
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ২৫টি।
আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি বদলে গেল, প্রজ্ঞাপন জারি১০ নভেম্বর ২০২৫মেডিকেলের এই ১৪টি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৫৫টি আসন কমানো হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালী মেডিকেলে ২৫ করে ৭৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে। সে হিসাবে সরকারি ৩৭ মেডিকেলে এবার ২৮০টি আসন কমানো হয়েছে।
বেসরকারির কোনো কলেজে কত আসন কমল?অন্যদিকে কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেলে ২৭৫টি আসন কমানো হয়েছে। আবার কয়েকটিতে ৪৫টি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেসরকারি যেসব মেডিকেল কলেজে আসন কমেছে সেগুলো হলো—
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ: ৫০টি
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ: ১৫টি
সিটি মেডিকেল কলেজ: ৩০টি
শমরিতা মেডিকেল কলেজ: ১৫টি
মার্কস মেডিকেল কলেজ: ২০টি
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ: ১৫টি
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ: ১৫টি
ডেলটা মেডিকেল কলেজ: ১৫টি
ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর কলেজ: ৪০টি
প্রেসিডেন্ট কিশোরগঞ্জ আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ: ৪৫টি
আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তিতে আবেদন শুরু, সরকারি মেডিকেলে আসন পুনর্বিন্যাস৪ ঘণ্টা আগেআসন বৃদ্ধি কয়েকটির—কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্য খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ, খুলনা আসনসংখ্যা ৫০টির সঙ্গে আরও ৫টি বৃদ্ধি করে ৫৫, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম-এর আসনসংখ্যা ৬০টির সঙ্গে আরও ২০টি বৃদ্ধি করে ৮০টি, আর্মি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম-এর আসনসংখ্যা ৫০টির সঙ্গে আরও ১০টি বৃদ্ধি করে ৬০টি এবং আর্মি মেডিকেল কলেজ, যশোর-এর আসনসংখ্যা ৫০টির সঙ্গে আরও ১০টি বৃদ্ধি করে ৬০টি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনমানবিক বিভাগ থেকে পড়েও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শাহীন আক্তারের গল্প যেন অনুপ্রেরণার ৮ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫