কয়েক দিন ধরে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। গতকাল সকালে সর্বত্র তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। ধর্মেন্দ্রর মেয়ে এষা দেওল ও স্ত্রী হেমা মালিনী এক পোস্টের মাধ্যমে কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুর গুজবের ইতি টেনেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন যে ধর্মেন্দ্রর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আজ সকালে তাঁকে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ধর্মেন্দ্র.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মব ভায়োলেন্সের মধ্যে ‘ডাকাত পড়েছে’ শোর তুলে ডেমরায় হত্যা করা হয়েছিল যুবদল নেতাকে

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়—এলাকায় ডাকাত পড়েছে। এরপর পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় এক ব্যক্তিকে। পরে তদন্ত করে পুলিশ জানিয়েছে, আসলে ডাকাত পড়েনি; বরং সেদিন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি, যিনি যুবদলের নেতা ছিলেন।

রাজধানীর ডেমরায় গত বছরের ৯ আগস্ট এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত সাঈদ আহমেদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে গত ৩০ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। এখন মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশে তিন দিন পুলিশের কার্যক্রম ছিল না। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় ‘মব ভায়োলেন্স’ ঘটে। এরই মধ্যে ৯ আগস্ট বিকেলে সরকারের পতন উপলক্ষে বিজয় মিছিল করেন স্থানীয় যুবদলের নেতা–কর্মীরা। সেই কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যায় সাঈদ ডেমরার ওরিয়েন্টাল স্কুলের মোড় এলাকা থেকে বাসায় ফেরার পথে আক্রান্ত হন।

সাঈদের মামা আপেল মাহমুদ প্রথম আলোকে জানান, ২০-২৫ জনের একটি দল সাঈদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।

সাঈদের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম বিথীর করা মামলার অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবদুল মোমিন বলেছেন, পুরোনো শত্রুতার জেরে সাঈদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই খুন হন সাঈদ আহমেদ।উপপরিদর্শক আবদুল মোমিন, ডিবি

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওরিয়েন্টাল স্কুলের কাছে পৌঁছামাত্রই সাঈদকে মারতে মারতে আল ফালাহ স্কুলের গলির ভেতর নেওয়া হয়। সেখানে আসামিরা তাঁকে আবার মারধর করেন। ওই সময় স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজ চলছিল। আসামি শুক্কুর আলী নামাজে ছিলেন। নামাজ শেষ হওয়ামাত্রই আরেক আসামি বিল্লাল হোসেন মসজিদের ইমামের কাছ থেকে মাইক নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে। আপনারা সবাই এসে দেখে যান।’ বিল্লাল ও শুক্কুর মসজিদ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাঈদকে মারধর করেন। আসামি জাকির ঘটনার সময় সাঈদের কাছে থাকা আইফোন-১৪ প্রোম্যাক্সসহ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।

আরও পড়ুনডেমরায় যুবদলের নেতাকে কুপিয়ে হত্যা১০ আগস্ট ২০২৪

খবর পেয়ে সাঈদের স্ত্রী ও মা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা অনেক কাকুতি-মিনতি করলেও আসামিদের আটকাতে পারেননি। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাঈদের মাথার বিভিন্ন অংশসহ ডান চোখে গুরুতর জখম হয়। একপর্যায়ে তাঁর হাত-পায়ের রগও কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১০টায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয় লোকজন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল সাঈদ আহমেদকে, তাঁর হাত-পায়ের রগও কেটে দেওয়া হয়। সাঈদের স্ত্রী ও মায়ের কাকুতি-মিনতিতেও হামলাকারীরা থামেনি।

ঘটনার পরদিন ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের ২০-২৫ জনকে আসামির তালিকায় রেখে ডেমরা থানায় হত্যা মামলা করেন সাঈদের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম। চতুর্থ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর মামলার দায়িত্ব নেন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আবদুল মোমিন।

আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুক্কুর আলী হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। অন্যরা বর্তমানে কারাগারে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সাঈদের এলাকার। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। তাঁরা অপরাধী, এটাই বড় পরিচয়। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই খুন হন সাঈদ।’

এদিকে আসামিদের কয়েকজনের আইনজীবী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মক্কেলরা এ মামলার সঙ্গে জড়িত নন। ঘটনার বিষয়ে ওনারা কিছুই জানতেন না। শত্রুতা থেকে এই মামলায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।’

বাদীর এজাহারে চারজন আসামির ভূমিকা উল্লেখ করলেও অন্যদের বিষয়ে কিছু বলেননি জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এজাহারে নাম থাকায় পুলিশও অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম দিয়েছে। একজন ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে আগে কোনো সাধারণ ডায়েরিও ছিল না। অভিযোগপত্র আসায় এখন তাঁদের জামিনও বাতিল হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করব।’

মামলার অভিযোগপত্রসহ এসব বিষয়ে বাদী সাদিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল প্রথম আলো। তবে তিনি এখন কিছু বলতে চাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ