প্রথম দেখি ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল সকালে হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গাছের বাকল উল্টিয়ে কীটপতঙ্গ খুঁজতে। দ্বিতীয়বার দেখি ২০১৪ সালের ৬ জুন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের রেস্টহাউসের পাশের ন্যাড়া গাছটিতে শুঁয়াপোকা খুঁজতে। সেদিন অতি চঞ্চল কালো কপালের নীল পাখিটির যে আচরণ সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছিল, তা হলো এর উল্টো হয়ে গাছের ডালের নিচের দিকে হাঁটা। এরপর পাখিটিকে দেখি ২০১৬ সালের মার্চে হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে। আর ২০১৭ সাল থেকে ওকে নিয়মিত দেখছি সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী ও কোকিলমনিতে। কটকা অফিস পাড়ায় তো একবার দেখলাম ছানাপোনাসহ।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর নাইকন ফ্যান ক্লাবের উদ্যোগে ‘অভিযাত্রিক সুন্দরবন’ ব্যানারে ঢাকা থেকে খুলনার পথে রওনা হলাম। রাতে খুলনা পৌঁছে ফেমাস ট্যুর বিডির ‘দ্য বেঙ্গল অ্যাডভেঞ্চার’ লঞ্চে রওনা হলাম কচিখালীর উদ্দেশে। ভোরে লঞ্চ আন্ধারমানিক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে পৌঁছাল। শীতের হালকা আমেজ ও কিছুটা কুয়াশার ভাব। সকাল সাতটা নাগাদ লঞ্চ থেকে নৌকায় করে আন্ধারমানিক ঘাটে নামলাম। টাওয়ার ও হরিণের খাঁচায় খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বনের ভেতরে ঢোকার জন্য ওয়াকওয়ের দিকে এগোলাম। তবে ওয়াকওয়েতে যাওয়ার পথে কতগুলো মরা গাছের ডালে নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
নীলটুনি, মৌটুসি, লালগলা চটক, দুই প্রজাতির কাঠঠোকরা, বুলবুলি, সোনাকপালি হরবোলা, দোয়েল, বেনেবউ, কালোঘাড় বেনে বউ ইত্যাদি পাখি সকালের খাবারের সন্ধানে গাছের এ ডাল–ও ডাল করে বেড়াচ্ছে। কালোঘাড় বেনেবউয়ের ছবি তোলার সময় হঠাৎ ক্যামেরার ফ্রেমে চঞ্চল সেই নীল পাখির অবয়ব ভেসে উঠল। সেই চিরাচরিত ‘স্টাইল’, অর্থাৎ গাছের ডালের নিচের দিকে উল্টো হয়ে হেঁটে হেঁটে বাকলের নিচের কীটপতঙ্গ ও শুঁয়াপোকা খোঁজায় ব্যস্ত। বেনেবউয়ের ছবি তোলা বাদ রেখে মাত্র দুই সেকেন্ডে ওর আটটি ছবি তুলতেই ক্যামেরার ফ্রেম থেকে হারিয়ে গেল। ঠিক ছয় মিনিট পর আবার আরেকটি মরা গাছের ডালের বাকলে ওকে আবিষ্কার করলাম। এবার ৪৮টি ছবি তুলতে পারলাম। চঞ্চল পাখিটির বেশ কিছু সুন্দর ছবি নিয়ে ওয়াকওয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। সর্বশেষ ওকে দেখলাম এ বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে কটকা অফিস পাড়ায়।
গাছের ডালের নিচের দিকে উল্টো হয়ে হাঁটছে কালোকপাল বনমালী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবন ভ্রমণে নিখোঁজ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
সুন্দরবনের ঢাংমারী নদীতে নৌযানডুবির ঘটনায় নিখোঁজ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারী পর্যটক রিয়ানা আবজালের (২৮) মরদেহ দুই দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার জয়মনির ঘোল এলাকার সাইলো জেটিসংলগ্ন পশুর ও শ্যালা নদীর মোহনা থেকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ভাসমান অবস্থায় রিয়ানার মরদেহ উদ্ধার করেন।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, উদ্ধারকৃত মরদেহটি চাঁদপাই নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের পশুর ও ঢাংমারী নদীর মোহনায় পর্যটকবাহী একটি জারিবোট (ফাইবার ট্রলার) উল্টে গেলে রিয়ানা আবজাল নিখোঁজ হন। ওই নৌযানে নারী-শিশুসহ মোট ১৩ জন পর্যটক ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ সাঁতরে তীরে ওঠেন, কয়েকজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেন। তবে রিয়ানাকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনসুন্দরবন ঘুরতে গিয়ে নদীতে নৌকা উল্টে নারী পর্যটক নিখোঁজ০৮ নভেম্বর ২০২৫রিয়ানা ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের মেয়ে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পাইলট ছিলেন। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
বাংলাদেশে এসে পরিবারসহ সুন্দরবনের ঢাংমারী এলাকার ‘ম্যানগ্রোভ ভ্যালি’ নামের একটি ইকো-রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলেন রিয়ানা। গত শনিবার সকালে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জারিবোটে করে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথে অন্য একটি হাইস্পিড বোটের ঢেউয়ের তোড়ে তাঁদের নৌযানটি উল্টে যায়।