ময়মনসিংহে শ্বশুর বাড়িতে জামাতা-নাতী খুন
Published: 12th, November 2025 GMT
ময়নসিংহের হালুয়াঘাটে গভীর রাতে শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাতা ও নাতীনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জোড়া হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়নের আমিরখাকুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন- জামাতা রতন মিয়া (৩৫) ও তার মেয়ে নূরিয়া খাতুন (৭)।
রতন মিয়া প্বার্শবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় এলাকার খিশাকুড়ির আমির হোসেনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর উপজেলার রতনের সাথে বিয়ে হয় হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের আমিরখাকুড়া এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে জুলেখা খাতুনের। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন রতন।
এদিকে স্বামী সন্তানকে রেখে বছর দুই এক আগে দুবাই চলে যান জুলেখা। ২০২৪ সালে ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরে যান জুলেখা। সম্প্রতি ফের ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি। স্বামী রতন এবার তাকে বিদেশ না যেতে বলেন। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। রতনের পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রতন ও তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম হারুন বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
ঢাকা/মিলন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো এক ঝুমকোলতার কথা
ময়মনসিংহে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৪ একর জায়গাজুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহ নিয়ে ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিলাম চলতি বছরের ১০ মে। প্রকৃতিতে তখন বৈশাখের শেষ। খুব গরম পড়েছিল সেদিন। তারপরও নতুন কোনো উদ্ভিদের সন্ধান পাই কি না, কোনো উদ্ভিদে ফুল ফুটল কি না, তা দেখার কৌতূহলের কারণেই যাওয়া।
বাগানের বিভিন্ন পথ দিয়ে হাঁটছিলাম আর দুই পাশের উদ্ভিদ দেখছিলাম। হঠাৎ হাঁটাপথের এক জায়গায় গ্রিলের প্রবেশপথের গায়ে দেখা পেলাম উজ্জ্বল লাল রঙের আকর্ষণীয় একধরনের ঝুমকোলতা ফুলের। গ্রিলের পেছনে এক দেবদারুগাছের ডালপালা ঝুলে আছে। লতার গা আলো করে ফুটে আছে প্যাশন ফ্লাওয়ার। খুব ভালো লাগল। গরম আর ক্লান্তি গেলাম ভুলে। এই উদ্ভিদের ফুল এই প্রথম দেখলাম। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট। সুগন্ধ আছে এ ফুলের। তাই ইংরেজিতে এই ফুল পারফিউমড প্যাশন ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত। আর এর পাতা আঙুরের পাতার মতো বলে আরেক নাম গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora vitifolia, এটি Passifloraceae পরিবারের লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা গণে ৫০০-৫৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এর বেশির ভাগই লতানো উদ্ভিদ। প্যাসিফ্লোরা এডুলিসের ফল প্যাশন ফ্রুট হিসেবে জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়।
গ্রেপ লিভড প্যাশন ফ্রুট উদ্ভিদের কাণ্ড সরু। উদ্ভিদের পাতার গোড়ায় একজোড়া গ্রন্থি থাকে। পাতা চকচকে, চামড়ার মতো, গাঢ় সবুজ, তিনটি খণ্ডযুক্ত। এটি শক্তিশালী এক লতা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে শরৎ পর্যন্ত এতে উজ্জ্বল লাল ফুল ফোটে। ফুল ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। ফুলে লাল, সাদা বা হলুদ ফিলামেন্ট থাকে। এর ফুলের গঠন এমনভাবে তৈরি যে এটি হামিংবার্ড বা প্রজাপতির মাধ্যমে পরাগায়িত হয়।
কচি অবস্থায় নলাকার এই লতা লাল-বাদামি লোমে ঢাকা থাকে। পাতাগুলো তিন খণ্ডযুক্ত, ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। ফুলগুলো অত্যাশ্চর্য, উজ্জ্বল লাল, ব্যাস ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। ফুল কুঁড়ি অবস্থায় লাল শিরাসহ তিনটি উজ্জ্বল গেরুয়া রঙের ব্র্যাক্ট দিয়ে আবৃত থাকে। প্রস্ফুটিত হওয়ার পর তীব্র উজ্জ্বল লাল রঙের বৃতি ও পাপড়ি দেখা যায়। বৃত্যংশগুলোর একটি সূক্ষ্ম শীর্ষ থাকে। পরাগদণ্ড ও গর্ভদণ্ডগুলো লাল রঙের হয়।
ফল হলদে সবুজ। ফল ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। এই ফল সামান্য পাতলা লোমসহ সবুজ মাংসযুক্ত। ফলের মধ্যে অসংখ্য বীজ থাকে। এ ছাড়া ফলের গায়ে সাদা বিন্দু থাকে। ফল দেখতে ডিমের মতো।
এই উদ্ভিদের বহুবর্ষজীবী মূল রয়েছে। কাণ্ড বর্ষজীবী থেকে বহুবর্ষজীবী। উদ্ভিদ ৫-২০ মিটার লম্বা, মাঝেমধ্যে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা মাটির ওপর হামাগুড়ি দিয়ে চলে এবং অন্য গাছপালা বা গ্রিলকে আঁকশির সাহায্যে আঁকড়ে ধরে ওপরে উঠে যায়।
এই উদ্ভিদের ফুল যেমন বাগানের শোভা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি এর ফলও খাওয়া যায়। এর আদি নিবাস দক্ষিণ–মধ্য আমেরিকা (কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, পানামা) এবং উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ আমেরিকা (ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু)। এসব অঞ্চলে এর ভোজ্য ফলটি মাঝেমধ্যে বন থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে খাওয়া হয়। যদিও এই ফল ব্যাপকভাবে সমাদৃত নয়।
কাণ্ডের কাটিং এবং বীজ থেকে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি করা হয়। লতার গায়ে উদারভাবে ফুল ফোটায় কাটিং থেকে তৈরি উদ্ভিদ। বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে ফুল ফোটার নিশ্চয়তা নেই। তাই কাটিং পদ্ধতিই জনপ্রিয়।
গাছ থেকে পড়ে গেলে এর ফল টক হয়। এক মাস সময় নিয়ে পাকলে স্বাদ স্ট্রবেরির মতো হয়। সুগন্ধি ফলের কারণে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ছোট আকারে এই উদ্ভিদের চাষ করা হয়।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ