ডিসি নিয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকতে পারেনি সরকার
Published: 12th, November 2025 GMT
বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কোনো কর্মকর্তাকে আসন্ন নির্বাচনে রাখা হবে না, ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানে থাকতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। দুজন কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) করা হয়েছে, যাঁরা আগের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার (এআরও) দায়িত্বে ছিলেন।
এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাকে প্রমার্জনা করে ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে, যিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক পদে পুরোপুরি দুই বছর দায়িত্ব পালন করেননি। অথচ ২০২২ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রণীত পদায়ন নীতিমালায় বলা আছে, ডিসি হতে হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উল্লিখিত পদে দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
দুজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁরা আগের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। একজনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে পদায়ন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।নির্বাচনের সময় মূলত ডিসিরাই রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বাদ দিতে গিয়ে যোগ্য ডিসি খুঁজে পেতে বিপাকে পড়ে সরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগের তিনটি নির্বাচনের কাউকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না রাখার সিদ্ধান্তটি দূরদর্শী ছিল না। কারণ, বিগত তিনটি নির্বাচনে বেশির ভাগ কর্মকর্তাই এবারও ছিলেন। এ শর্ত প্রতিপালন করা কঠিন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনি ও রোববার দুই দিনে দেশের ২৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ন করে সরকার। এর মধ্যে রোববার ১৪ জেলায় এবং আগের দিন ১৫ জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়। এই ২৯ জেলার মধ্যে একেবারে নতুন ডিসি করা হয় ২১ কর্মকর্তাকে। বাকি আটজন ডিসিই ছিলেন, তাঁদের জেলা পরিবর্তন করা হয়েছে।
পদায়নে এ শর্ত বাতিলের পক্ষে মত জানাচ্ছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, কেউ ডিসি হবেন, আবার কেউ বঞ্চিত হবেন কেন?জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিসিএস ২৭তম ও ২৮তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের দুজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁদের একজন ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে, অন্যজন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন।
এ দুজনকে ডিসি করায় প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে থাকতে পারেনি। তাহলে কেউ ডিসি হবেন, আবার কেউ বঞ্চিত হবেন কেন? ডিসি পদে পদায়নে এ শর্ত বাতিল করা উচিত বলে মত দেন তাঁরা।
এ ছাড়া বিসিএস ২৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁর ইউএনও, এডিসি পদে পুরোপুরি দুই বছরের অভিজ্ঞতা নেই। এ ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাকে প্রমার্জনা করা হয়েছে।
গত তিন নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করার জোরালো অভিযোগ ছিল। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবারের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুনআগের ভোটের সবাই বাদ, ‘যোগ্য’ নতুন ডিসি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার০১ নভেম্বর ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মাঠ প্রশাসনে বিশেষ করে ডিসি, এডিসি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক), ইউএনওসহ (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) বিচারিক দায়িত্বে এমন কাউকে পদায়ন করা হবে না, যিনি গত তিনটি নির্বাচনের কাজে যুক্ত ছিলেন। ন্যূনতম ভূমিকা থাকলেও তাঁকে এই নির্বাচনে দায়িত্বে রাখা হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইকোনমিক ক্যাডার ২০১৮ সালে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হয়। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে (সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব পদে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁরা সরাসরি ইউএনও, এডিসি বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। মাঠ প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা না থেকেও ডিসি হওয়া নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে জনপ্রশাসনে।
নির্বাচনের আগে আরও অন্তত পাঁচ থেকে আট জেলায় ডিসি পদে পদায়ন হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সেসব ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন কর মকর ত ক কর মকর ত দ র কর মকর ত র ত ত নট গত ত ন সহক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের বিজয়ের এক বছরের মধ্যেই সবখানে প্রতিরোধ
এক পার্কিং এলাকায় মুখোশ পরা আইসিই সদস্যদের গালাগাল করছেন যোগব্যায়ামের পোশাক পরা একজন শ্বেতাঙ্গ নারী। একজন পোপ বারবার অভিবাসীদের পক্ষে কথা বলছেন। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন, অঙ্গরাজ্য, নগর ও নাগরিকদের করা মামলার ঝড় উঠেছে। কঠোর ভর্ৎসনা করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক রায় দিচ্ছেন বিচারকেরা। একজন সিনেটর টানা ২৫ ঘণ্টা ধরে অবিরাম কথা বলছেন। আরেকজন তাঁর অপহৃত সংবিধানের কী হয়েছে, তা জানার জন্য এল সালভাদরে উড়ে যাচ্ছেন।
১৮ অক্টোবর ডেমোক্র্যাটদের বড় বড় নীল শহরের পাশাপাশি রিপাবলিকানদের ছোট ছোট লাল শহরেও সব মিলিয়ে ৭০ লাখের মতো মানুষ ‘রাজা চাই না’ আন্দোলনে শরিক হন। রচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় দিন।
চলতি বছরে টেসলার শোরুমগুলোর সামনে হওয়া বিক্ষোভ ব্র্যান্ডটির এমন ক্ষতি করে যে এর বৈশ্বিক বিক্রি কমে যায় এবং সিইও ইলন মাস্ক তাঁর সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ (ডিইওজি) থেকে নেওয়া চাকরিচ্যুতির কঠোর প্রকল্প থেকে পিছু হটেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা কখনো কখনো কেবল আইন, সত্য ও তথ্য মেনে চলার মাধ্যমেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কখনো তাঁরা হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে সত্য ফাঁস করছেন, কখনো প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন। যেমন গত আগস্টে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কর্মীরা ওয়াকআউট করে জ্যেষ্ঠ কর্মীদের বিক্ষোভে সংহতি জানান। ওই জ্যেষ্ঠ কর্মীরা স্বাস্থ্য ও মানবসেবামন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের টিকাবিরোধী নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন।
অভিবাসী, শরণার্থী এবং চেহারার কারণে রাস্তায়, শিকাগোর পাড়া-মহল্লায়, হোম ডিপো পার্কিং লটে, স্কুলের আশপাশে ও আদালতে হেনস্তার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে তাঁদেরই জন্য অসাধারণ সংহতি গড়ে উঠছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজ্য অ্যাটর্নিরা স্বতন্ত্র ও যৌথভাবে একের পর এক মামলা করছেন। ইলিনয় ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নররা লাগাতার সমালোচনায় ট্রাম্পকে ঝাঁজরা করে দিচ্ছেন। কংগ্রেসে বিল আটকে যাওয়ায় সৃষ্ট অচলাবস্থা নিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের দলীয় প্রচারণামূলক ভিডিও চালাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে বিমানবন্দরগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাসংক্রান্ত স্বাধীনতায় ছাড় দেওয়ার শর্তে অর্থনৈতিক প্রণোদনা পাওয়ার চুক্তি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে আমরা ট্রাম্প প্রশাসন এবং এর নীতির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ দেখছি, এগুলো তারই অংশ। এসব নিয়ে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে জরিপ হওয়া প্রয়োজন।
যখন কেউ আমাকে বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধই নেই, আমি ভাবি তারা কি এক ধাক্কায় সরকার ফেলে দেওয়ার মতো গেরিলা বিপ্লবের আশা করছে, নাকি পরিস্থিতির দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে না। কারণ, বাস্তবে নানা ধরনের ব্যাপক প্রতিরোধ ও বিরোধিতা রয়েছে, এগুলো বড় ধরনের প্রভাবও ফেলেছে। কখন এটি যথেষ্ট হবে, সেটি একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর তখনই দেওয়া যাবে, যখন এসবের ইতি হবে, যদি আদৌ তা হয়। এরপর কী ঘটে, সেটাও দেখতে হবে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রত্যাশা থেকেও বোধ হয় নিরাশা জন্মেছে। মানুষ ভেবেছে, স্বভাবতই একটা বদলের সূচনা হবে। কিন্তু ইতিহাসের মোড়বদল আর গতি যে কখনো অনুমান করা যায় না, সেই বাস্তবতার কথা মানুষ মাথায় রাখেনি।
প্রতিরোধ গড়ে উঠছে সর্বত্র, সব এলাকায় এবং সব ধরনের ভোটারদের মধ্যে। আছে নাগরিক সমাজ ও সরকারি কর্মচারীরা। রয়েছে মানবাধিকার, জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলো, যারা নির্বাচনের আগেই আটঘাট বেঁধে রেখেছিল আর নতুন প্রশাসন আসার পরই মাঠে নেমে পড়ে। আরও আছে ধর্মীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠান, সব স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সামরিক কর্মকর্তা, আইনজীবী ও বিচারক। আরও আছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, গ্রন্থাগারিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক, শিল্প-সংস্কৃতির জগতের মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত ১৮ অক্টোবরের বিক্ষোভের একটি চিত্র। ছবিটি নিউইয়র্ক থেকে তোলা