জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রচার দলের নেপথ্যে থাকা কে এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা
Published: 12th, November 2025 GMT
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে (দলীয় বাছাই) নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে জয়ী হলেন দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী সন্তান, বয়সে তরুণ জোহরান মামদানি। তারপর ৪ নভেম্বর মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শুধু নিউইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক চমক তৈরি করলেন তিনি। তখন সবার দৃষ্টি ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয় প্রচার আর তাঁর প্রতি তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশলের দিকে।
তবে জোহরানের এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন এক কৌশলী চিন্তাশীল মানুষ। তিনিও অভিবাসী পরিবারের সন্তান, বয়সে তরুণ, তবে জন্ম যুক্তরাষ্ট্রেই। তাঁর নাম জারা রহিম। বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারে তাঁর জন্ম। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ডিজিটাল কৌশলকে দারুণভাবে ব্যবহার করে কাজ করে চলেছেন।
জারা রহিম গত ফেব্রুয়ারি থেকে জোহরানের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এমন এক পরামর্শ দেন, যা জোহরানের পুরো নির্বাচনী প্রচারের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত মেয়রের এক উপদেষ্টা বলেছিলেন, জোহরান মামদানিকে জারা রহিম পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের বানানো কল্পিত নিউইয়র্ককে ভুলে যাও, প্রকৃত নিউইয়র্ক নগর নিয়ে প্রচার চালাও।’
জারার এই ধারণাই তৈরি করে দেয় এক তৃণমূল আন্দোলন, যেখানে ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে সেসব ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়, যাঁদের নিউইয়র্ক নগরের রাজনীতি এত দিন উপেক্ষা করে এসেছে।
মেট্রোতে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে জারা রহিম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইয়র ক ন ন উইয়র ক র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
দাড়ি রেখে ইতিহাসে স্থান করে নিতে চলেছেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্ক সিটি এবার শুধু প্রথম মুসলিম মেয়রই পাচ্ছে না। জোহরান মামদানি হচ্ছেন শহরের প্রথম দক্ষিণ এশীয়, প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মেয়র; সঙ্গে এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ মেয়রও।
অভিষেকের আগে যদি হঠাৎ চুল-দাড়ি কাটার বড় কোনো সিদ্ধান্ত না নেন, তবে জোহরান হবেন ১৯১৩ সালে মারা যাওয়া উইলিয়াম জে গেনরের পর নিউইয়র্কের প্রথম শ্মশ্রুমণ্ডিত মেয়র। যদিও শতভাগ নিশ্চিত করে বলা কঠিন যে এরপর কোনো মেয়রের মুখে দাড়ি ছিল না। তবে মেয়রদের অফিশিয়াল প্রতিকৃতি ঘেঁটে দেখা যায়, সবাই ছিলেন দাড়ি–গোঁফ ছাড়া। শুধু ডেভিড ডিঙ্কিন্সের গোঁফ ছিল ব্যতিক্রম।
জোহরানের দাড়ি দেখতে জে গেনরের মতো হলেও তার বিশেষত্ব একেবারেই ভিন্ন। গেনর যখন ১৯০৯ সালে নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর। তাঁর ধূসর-সাদা, ছাঁটা দাড়ি আর সিল্কের টুপি তাঁকে এক পরিণত মানুষ হিসেবে তুলে ধরত।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন ১৯ ঘণ্টা আগেতখনকার সংস্কৃতিও ছিল অন্য রকম। গেনরকে নিয়ে ১৯৫১ সালের এক জীবনীতে বলা হয়, সে সময় যাঁরা পূর্ণ ‘ভ্যানডাইক’ দাড়ি রাখতেন, তাঁদের অনেকে সমাজে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। এ দাড়ি তাঁকে একজন সফল ব্যবসায়ী, ওয়াল স্ট্রিটের মধ্যস্থতকারী কিংবা অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবেই উপস্থাপন করত।
২০১৩ সালে একটি প্রবন্ধে জোহরান লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক বছর আগেই দাড়ি রাখতে শুরু করেন তিনি। মূলত এটা ছিল দেশে প্রচলিত সেই ধারণার বিরুদ্ধে একধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ, যা অনেক সময় প্রকাশ্যে বলা হয় না, কিন্তু অনেকেই মেনে নেন—‘বাদামি গায়ের রং আর দাড়ি? মানে সন্ত্রাসী!’অন্যদিকে জোহরান এখন ৩৪ বছরের তরুণ, মিলেনিয়াল প্রজন্মের প্রতিনিধি। তাঁর দাড়ি যেন পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামো বদলে দেওয়ার অঙ্গীকারের প্রতীক। এ অর্থে তাঁর দাড়ি বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স কিংবা কিছুটা বয়স্ক ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের দাড়ির মতোও নয়।
আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে ভোট দিয়েছেন ৯৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার১১ নভেম্বর ২০২৫ওই দুই ব্যক্তি (ভ্যান্স ও ট্রাম্প জুনিয়র) শ্বেতাঙ্গ আর জোহরান একজন বাদামি চামড়ার মুসলিম। যুক্তরাষ্ট্রে শ্মশ্রুমণ্ডিত বাদামি মুসলমান হওয়া মানে কী, সেটি তিনি খুব ভালোভাবেই বোঝেন। নিজের ভাবমূর্তি বা জনমত গঠনের কৌশলও তিনি ভালোই জানেন।
১৯১৩ সালে মারা যাওয়া নিউইয়র্কের শ্মম্রুমণ্ডিত মেয়র উইলিয়াম জে গেনরের প্রতিকৃতি