জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন গ্রাহকেরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন। এতে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় এই কর্মসূচি চলছিল।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবার আন্দোলন শুরু হবে।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে রেখেছেন। এতে উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ। আন্দোলনকারীরা টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। সেটা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। তারপরও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো নারী–পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাঁদের টাকা ফেরতের সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। প্রায় তিন বছর ধরে টাকা উদ্ধারের জন্য দিনের পর দিন এমন কোনো কর্মসূচি নেই যে হাজারো গ্রাহক করেননি। কিন্তু সবকিছুর পরও আমাদের টাকা ফেরত পাচ্ছি না। প্রশাসন আমাদের টাকা উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয় না। এবার টাকা না নিয়ে ঘরে ফিরব না। আগামী রোববার থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টা এখানে অবস্থান নেব।’

আরও পড়ুনসমবায় সমিতির নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবিতে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও২১ ঘণ্টা আগে

বক্তারা জানান, ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁরা। এভাবে জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি, দ্বিতীয় দিনের মতো ঘেরাও কর্মসূচি চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। এর কোনো সমাধান আমাদের কাছে নেই।’

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, ‘আন্দোলন ছেড়ে কেউ ঘরে যাব না। শত শত মানুষ আন্দোলনে থাকলেও এখনো প্রশাসনের কোনো তৎপরতা আমরা লক্ষ করছি না। এবার আমরা শপথ নিয়েছি, বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরব না। আন্দোলন এভাবেই চলতে থাকবে।’

২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদলের মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ব ত য় দ ন র মত ম দ রগঞ জ ঘ র ও কর উদ ধ র আম দ র গ র হক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো উপজেলা পরিষদ ঘেরাও, সমিতি থেকে টাকা ফেরতের দাবি

জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন গ্রাহকেরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন। এতে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় এই কর্মসূচি চলছিল।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবার আন্দোলন শুরু হবে।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে রেখেছেন। এতে উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ। আন্দোলনকারীরা টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। সেটা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। তারপরও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো নারী–পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাঁদের টাকা ফেরতের সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। প্রায় তিন বছর ধরে টাকা উদ্ধারের জন্য দিনের পর দিন এমন কোনো কর্মসূচি নেই যে হাজারো গ্রাহক করেননি। কিন্তু সবকিছুর পরও আমাদের টাকা ফেরত পাচ্ছি না। প্রশাসন আমাদের টাকা উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয় না। এবার টাকা না নিয়ে ঘরে ফিরব না। আগামী রোববার থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টা এখানে অবস্থান নেব।’

আরও পড়ুনসমবায় সমিতির নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবিতে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও২১ ঘণ্টা আগে

বক্তারা জানান, ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁরা। এভাবে জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি, দ্বিতীয় দিনের মতো ঘেরাও কর্মসূচি চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। এর কোনো সমাধান আমাদের কাছে নেই।’

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, ‘আন্দোলন ছেড়ে কেউ ঘরে যাব না। শত শত মানুষ আন্দোলনে থাকলেও এখনো প্রশাসনের কোনো তৎপরতা আমরা লক্ষ করছি না। এবার আমরা শপথ নিয়েছি, বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরব না। আন্দোলন এভাবেই চলতে থাকবে।’

২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদলের মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ