চট্টগ্রামের ফয়’স লেক কিংবা ঢাকার বিভিন্ন আধুনিক শপিং মলে গেলে ‘ড্যান্স ড্যান্স রেভল্যুশন’ নামের আর্কেড গেম দেখা যায়। স্ক্রিনে দেখানো ডানে-বাঁয়ে, ওপরে-নিচে চিহ্ন দেখে বিশেষ বোর্ডের ওপরে নাচতে হয় এই ভিডিও গেমে। এই ভিডিও গেম খেলার ইতিহাসে এক অনন্য নজির গড়েছেন হাঙ্গেরির গেমার স্যাবলচ চেপে নামের এক তরুণ। টানা ছয় দিন ধরে ড্যান্সভিত্তিক ভিডিও গেম ড্যান্স ড্যান্স রেভল্যুশন খেলে তিনি গড়েছেন দীর্ঘতম ভিডিও গেম ম্যারাথনের নতুন বিশ্বরেকর্ড।

হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে থাকা ৩৪ বছর বয়সী এই তরুণ অনলাইনে পরিচিত গ্রাসহপার নামে। গেম খেলার ম্যারাথনে টানা ১৪৪ ঘণ্টা নেচেছেন তিনি। এ সময় তিন হাজারের বেশি গানে নেচেছেন তিনি। সেই সঙ্গে খরচ করেছেন প্রায় ২২ হাজার ক্যালরি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইতিমধ্যে তাঁর এই পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দিয়েছে নতুন রেকর্ড হিসেবে। স্যাবলচ জানান, এমন একটি চ্যালেঞ্জের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রায় ছয় মাস। নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের পাশাপাশি অনুসরণ করেছেন বিশেষ খাদ্যতালিকা। তিনি বলেন, ড্যান্স ড্যান্স রেভল্যুশন খেলা আমার কাছে সব সময়ই আনন্দের। এই চ্যালেঞ্জ আমার জন্য পরিপূর্ণ আনন্দের ছিল।

জাপানি কোম্পানির তৈরি ড্যান্স ড্যান্স রেভল্যুশন গেম প্রথম বাজারে আসে ১৯৯৮ সালে। আর্কেড গেম হিসেবে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। পরে গেমটির ঘরোয়া সংস্করণও তৈরি হয়। এ গেমে খেলোয়াড়দের নাচের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সুরের তালে পর্দায় প্রদর্শিত নির্দেশনা অনুযায়ী পা ফেলতে হয়। গেমটি এখন অনেক দেশে শরীরচর্চার উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুলে এটি শারীরিক অনুশীলনের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এমনকি ২০০৪ সালে নরওয়ে গেমটিকে আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া ইভেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সাম্প্রতিক বছরে গেমটি ই-স্পোর্টস অঙ্গনেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তের খেলোয়াড় এখন এতে অংশ নিচ্ছেন। ভিডিও গেমার স্যাবলচ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গেমার ক্যারি সুইডেকি তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ২০১৫ সালে সুইডেকি জাস্ট ড্যান্স গেম খেলে টানা ১৩৮ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে আগের বিশ্বরেকর্ড করেন। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী স্যাবলচ চেপে ভিডিও গেমে এর আগেও একাধিক রেকর্ড গড়েছেন। ২০২১ সালে তিনি নারুটিমেট্টো আকুসেরু ২ গেম খেলে ২৮ ঘণ্টা ১১ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে গড়েন দীর্ঘতম নারুটো গেম ম্যারাথনের রেকর্ড। একই বছরে টেট্রিস ইফেক্ট গেমে ৩২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট ৩২ সেকেন্ড খেলে গড়েন দীর্ঘতম পাজল গেম ম্যারাথনের রেকর্ড। ২০২৩ সালে গ্রান তুরিজমো–৭ গেম ৯০ ঘণ্টা খেলে তিনি যোগ করেন আরও তিনটি রেকর্ড। সেটি ছিল দীর্ঘতম রেসিং সিমুলেটর ম্যারাথন।

ছোটবেলা থেকেই স্যাবলচের ডাকনাম গ্রাসহপার। সব সময় লাফিয়ে লাফিয়ে খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন বলে এমন নাম। প্রায় দুই দশক ধরে ড্যান্স ড্যান্স রেভল্যুশন খেললেও এবারের ম্যারাথন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। গিনেসের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টা খেলার পর তিনি ১০ মিনিট বিরতির সুযোগ পেতেন। স্যাবলচ সেই সময় জমিয়ে রেখে মাঝেমধে৵ এক থেকে দুই ঘণ্টা ঘুমাতেন। টানা ছয় দিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে বিশ্বরেকর্ড গড়লেও চেপে এখানেই থেমে থাকতে চান না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যদি আমার রেকর্ড ভাঙতে পারে, আমি অবশ্যই নাচের মঞ্চে মুকুট রক্ষায় আবার ফিরে আসব৷

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘতম র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্প–সহনীয় ভবন বানাতে যা যা মাথায় রাখবেন

থাকার জন্য হোক বা ব্যবসা–বাণিজ্যের কাজে, ভবন বানালে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। মজবুত ও নিরাপদ ভবন বানাতে সঠিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। ভবন নির্মাণের সময় মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারিভাবে জাতীয় ভবন নির্মাণ নীতিমালা তো মানতেই হবে, সেই সঙ্গে ভবনটি যথাযথ নিরাপদ ও মজবুত হচ্ছে কি না, সে ভাবনাও মাথায় রাখতে হবে।

ভূমিকম্পের ক্ষতি কেমন হয়

দুর্বলভাবে তৈরি ভবনের কারণেই ভূমিকম্পে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে বন্যা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অতীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নানা দুর্যোগ দেখা গেছে।

গত শতাব্দীতে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে বলা যায়, বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাধারণভাবে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল ১২৫-১৭৫ বছর ও ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০-৩০০ বছর অনুমান করা হয়।

সেই হিসাবে বাংলাদেশে নিকট ভবিষ্যতের যেকোনো সময় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ২০১০ সালের হাইতি ও চিলির ভূমিকম্পের তুলনা করলে ভূমিকম্পের ঘটনায় কাঠামোগত ব্যর্থতার কারণে মানবিক ক্ষতি বেশি হতে দেখা যায়।

সে বছর হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। যার প্রধান কারণ ছিল দুর্বলভাবে নির্মিত ভবন। একই বছর চিলিতে আঘাত হানে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প, যাতে ২৮০ জন প্রাণ হারায়। চিলির ভবনগুলো নির্মাণে শক্তিশালী কৌশল ব্যবহার করা হয়।

২০২৩ সালে তুরস্কে ভূমিকম্পে ভবনধসের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্বলভাবে ভবন নির্মাণের কারণে সেসব এলাকায় দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু বেশি হয়।

আরও পড়ুনআগুন লাগলে কী করবেন২২ জুন ২০১০বাংলাদেশের ভয়সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে ২০১৩ সালে

সম্পর্কিত নিবন্ধ