প্রায় ৪ বছর অপেক্ষার পর ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল (তৃতীয়বারের মতো) গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে মোট শূন্য পদ ছিল ১ হাজার ৭১০টি। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৭৬ জন। অর্থাৎ ৩৪টি পদ শূন্য থাকছে। একই দিনে প্রকাশিত ৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ফলাফলেও ১৫টি পদে কোনো প্রার্থী মনোনীত হয়নি। দুটি বিসিএস মিলিয়ে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৪৯টি পদে শূন্য রয়ে গেছে।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, কিছু কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় এসব পদে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ১টি পদের বিপরীতে প্রায় ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, সেখানে কীভাবে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুনচাকরি বদলাবেন—এ তিনটি দিক না ভেবে সিদ্ধান্ত নয়৮ ঘণ্টা আগে৪৪তম বিসিএসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া

৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২৭ মে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থী। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল তিন ধাপে প্রকাশ করে পিএসসি। রিপিট ক্যাডার-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়।

প্রথম দফায় ১ হাজার ৭১০ পদের বিপরীতে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। পরবর্তী দুই দফায় সামান্য পরিবর্তন আসে। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফায় গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৭৬ জন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে, ফলে ৩৪টি পদ শূন্য থাকে।

পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এসব শূন্য পদ মূলত কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারে। নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন।

আরও পড়ুন৪৪তম বিসিএস: তৃতীয়বার চূড়ান্ত ফল, সুপারিশপ্রাপ্ত ১৬৭৬, যোগ্য প্রার্থী নেই ৩৪ পদে৪ ঘণ্টা আগে৪৯তম বিসিএস: শিক্ষা ক্যাডারের জন্য আয়োজন

৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ২০২৫ মূলত শিক্ষা ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের জন্য আয়োজন করা হয়। এই পরীক্ষায় ৬৮৩টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী। এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১ হাজার ২১৯ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রার্থী অংশ নেন। গতকাল প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি ক্যাডার পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫টি পদে কোনো মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি।

পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করলে কাউকে সুপারিশ করার সুযোগ নেই। যেমন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক পদে বিএড বা এমএড সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। যাঁদের সেই সনদ নেই, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মনোনীত হতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটি পদে প্রার্থীরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলেও নির্ধারিত অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের শর্ত পূরণ করতে পারেননি। এ জন্য মনোনয়ন বাতিল করতে হয়েছে।’

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৬৬৮, যোগ্য প্রার্থী নেই ১৫ পদে১৮ ঘণ্টা আগেপ্রার্থীদের প্রশ্ন

অন্যদিকে অনেক প্রার্থী মনে করেন, শূন্য পদ রয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রশ্ন তোলে নিয়োগপ্রক্রিয়ার মানদণ্ড নিয়ে। ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থী বলেন, ‘একটি পদের বিপরীতে যখন ১০ থেকে ১৫ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে, তখন “যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি” কথাটা মানা কঠিন। এর পেছনে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ত্রুটি থাকতে পারে।’

৪৪তম বিসিএসের আরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি বিসিএস প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও প্রতিযোগিতামূলক। মৌখিক পরীক্ষায় অনেক সময় মূল্যায়ন মানদণ্ড একরকম থাকে না। যোগ্যতা যাচাইয়ের নামে কিছু পদ খালি রাখাটা প্রার্থীদের প্রতি অন্যায্য।’

কমিশনের ব্যাখ্যা

তবে পিএসসি বলছে, বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও ডিজিটাল। বিশেষ করে ৪৬তম বিসিএস থেকে উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘সার্কুলার ইভাল্যুয়েশন সিস্টেম’ চালু হওয়ায় যাচাইয়ের মান বেড়েছে। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সোহেল রহমান বলেন, ‘আমরা চাই যোগ্য প্রার্থীকেই সুপারিশ করতে। নিয়োগ শর্ত পূরণ না হলে তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের শর্ত মনতে হয়। এতে অনেক সময় সব পদ পূরণ করা সম্ভব হয় না।’

আরও পড়ুনট্রাফিক সহায়কের খণ্ডকালীন চাকরি, শিক্ষার্থীদের সুবিধার থেকে শঙ্কা বেশি ১১ নভেম্বর ২০২৫শূন্য পদ পূরণে নতুন নীতিমালা প্রয়োজন

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, শূন্য পদ পূরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসির বর্তমান নীতিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন। নীতিমালা প্রার্থী বান্ধব হতে হবে, যাতে শূন্য পদ না থকে। পিএসসি সূত্র জানায়, যেসব পদের জন্য প্রার্থী পাওয়া যায় না, পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সেই পদ পূরণের সুযোগ রাখা হবে।

পিএসসি বলছে, নতুন কমিশন ‘ওয়ান বিসিএস, ওয়ান ইয়ার’ রোডম্যাপের পাশাপাশি নিয়োগের মান উন্নয়নেও কাজ করছে। তাঁদের লক্ষ্য—প্রতিটি পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করা, কিন্তু কোনোভাবেই যোগ্যতার মানদণ্ড শিথিল না করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ ক পর ক ষ য় চ ড় ন ত ফল ফল পদ র ব পর ত স প র শ কর ল প রক শ প রক শ ত শ ন য পদ প রক র য় প এসস র পদ প র য গ যত র জন য ন নয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৯তম বিসিএস: শিক্ষা ক্যাডারের জন্য চূড়ান্ত ফল শিগগিরই

৪৯তম বিসিএসের (বিশেষ) লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৯ নভেম্বর। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এই বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৬৮৩টি শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, এ বিসিএসে মোট ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ হাজার ২১৯ জন। শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২১ জুলাই এবং লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০ অক্টোবর।

আরও পড়ুন২০২৬ সালের সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি১৯ ঘণ্টা আগে

পিএসসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনিক কোনো জটিলতা না থাকলে শিগগিরই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা সম্ভব। কমিশন আশা করছে, ফল প্রকাশের পর নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে, যাতে প্রার্থীরা সময়মতো দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। এই বিসিএস মূলত শিক্ষা ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের জন্য আয়োজন করা হয়েছে।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছরের নভেম্বর মাসে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং পরের বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একটি বার্ষিক রোডম্যাপ তৈরি করেছে।

আরও পড়ুনট্রাফিক সহায়কের খণ্ডকালীন চাকরি, শিক্ষার্থীদের সুবিধার থেকে শঙ্কা বেশি ৩ ঘণ্টা আগে

এ সময় পিএসসি একই সঙ্গে তিনটি সাধারণ বিসিএসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬ হাজার ৫৫৮ প্রার্থী। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১০ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ২২ জন নন-ক্যাডার প্রার্থী নিয়োগ পাবেন।

অন্যদিকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। মূল্যায়ন শেষ হলেই মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে। এতে ১০ হাজার ৬৪৪ প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি প্রার্থী। পরীক্ষা ঢাকাসহ আট বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুনমানবিক বিভাগ থেকে পড়েও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শাহীন আক্তারের গল্প যেন অনুপ্রেরণার ৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৪তম বিসিএস: তৃতীয়বার চূড়ান্ত ফল, সুপারিশপ্রাপ্ত ১৬৭৬, যোগ্য প্রার্থী নেই ৩৪ পদে
  • ৪৯তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ, ৬৬৮ জন উত্তীর্ণ
  • ৪৯তম বিসিএস: শিক্ষা ক্যাডারের জন্য চূড়ান্ত ফল শিগগিরই