১২ নভেম্বর উপকূলের জন্য একটি দিবস— উপকূলের অধিকার ও ন্যায্যতার কথা বলা যায়, উপকূলের সংকট ও সম্ভাবনার কথা বলা যায়, এমন একটি দিবস। প্রচলিত দিবসের তালিকায় পাখি দিবস, পানি দিবস, শকুন দিবস, হাতি দিবস, শিক্ষা দিবস, স্বাস্থ্য দিবস, জনসংখ্যা দিবস, নারী দিবস, গ্রামীণ নারী দিবস, মানবাধিকার দিবস, ভালোবাসা দিবস এবং আরো অনেক দিবস আছে; কিন্তু উপকূল দিবস নেই। উপকূলের পথে পথে হেঁটে এই প্রশ্নটা আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল অনেক বছর ধরে। উপকূলের কথা, উপকূলের মানুষের কথা আরো জোরালোভাবে বলতে, প্রান্তিকের কণ্ঠস্বর আরো জোরালো করতে ‘উপকূল দিবস’ খুবই প্রাসঙ্গিক। উপকূলের জন্য একটি দিবস হলে এগিয়ে যায় উপকূল, এগিয়ে যায় উপকূল সাংবাদিকতা। 

অনেক দিবসের ভিড়ে আরেকটি দিবসের প্রস্তাব করছি শুধুমাত্র উপকূলের জন্যে। যে দিবস উপকূল সুরক্ষার কথা বলবে, উপকূলের সংকট-সম্ভাবনার কথা বলবে, উপকূলকে এগিয়ে নেওয়া কথা বলবে। যে দিবসে উপকূলবাসীর কণ্ঠস্বরে ধ্বনিত হবে। আর এভাবেই উপকূল এগিয়ে যাবে বিকাশের ধারায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূল আরো বেশি সংকটাপন্ন। সেই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে উপকূলের প্রতি নজর বাড়াতে, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করা খুব জরুরি। একটি দিবসের মাধ্যমে উপকূলের প্রতি নজর বাড়ানো সম্ভব। একই সাথে আন্তর্জাতিকভাবে উপকূলের গুরুত্ব বিবেচনায় ১২ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক উপকূল দিবস হিসাবে স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি। 

কীভাবে এলো একটি দিবসের চিন্তা?

উপকূল দিবসের দাবির পক্ষে নিজেই দাঁড়াই। উপকূলের জন্য একটি দিবস চাই। উপকূল অঞ্চল ঘুরে খবরের খোঁজ করতে গিয়ে এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছিল কয়েক বছর আগে থেকেই। খবর লেখার মধ্য দিয়ে আমি প্রতিদিন উপকূলের কথা বলি। কিন্তু একটি দিবস থাকলে অন্তত সবাই মিলে একযোগে একটি দিনে উপকূলের কথা বলার সুযোগ পাই! দিন ঠিক করার আগে নিজের কাছে নিজের আরেকটা প্রশ্ন- কেন উপকূল দিবস চাই? যে কোনো দিবস দাবির পেছনে রয়েছে যুক্তি-তর্ক। একটি দিবস কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে, দিবস অধিকার আদায়ের কথা বলতে পারে, দিবস পারে জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে। কেন উপকূল দিবস চাই- প্রশ্নটির সহজ জবাব হলো, উপকূলের মানুষের কণ্ঠস্বর জোরদার করার মধ্য দিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে প্রতিবছর একটি সুনির্দিষ্ট দিনে উপকূল দিবস পালিত হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়বে। তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত হবে। কেন্দ্রের কাছে পৌঁছাবে উপকূলের কণ্ঠস্বর। 

নিজের কাছে দ্বিতীয় প্রশ্ন, কোন দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’চাই? উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত বহুমূখী দুর্যোগের সঙ্গে বাস করেন। কেবল দুর্যোগ এলেই এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও তাদের জীবন যে কতটা অস্বাভাবিক, সে বিষয়ে খুব একটা খোঁজ রাখা হয় না। উপকূলের দিকে গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের নজর বাড়িয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটানোই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য। উপকূলের প্রান্তিকের তথ্য যেমন কেন্দ্রে পৌঁছায় না, ঠিক তেমনি কেন্দ্র মাঠে পৌঁছাচ্ছে না বহুমূখী কারণে। উপকূলের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে খুঁজে পাই ১২ নভেম্বর। এটাই উপকূলবাসীর কাছে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়। কেননা, ১৯৭০ সালের এই দিনে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল গোটা উপকূল। এদিন বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’। 

১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস প্রস্তাব করে বিভিন্ন পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ শুরু করেছিলাম ২০১৬ সালে। সমগ্র উপকূল থেকে এ বিষয়ে ব্যাপক সাড়া মেলে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ১২ নভেম্বর বেসরকারিভাবে ‘উপকূল দিবস’ হিসাবে পালন শুরু হয়। উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটির আহবানে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রায় ১০০ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিবস পালনে এগিয়ে এসেছিল। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, গণমাধ্যকর্মীদের সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, কিশোর-তরুণদের ফোরাম ইত্যাদি। উপকূল অঞ্চলে কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুগণ প্রথম বছর থেকে উপকূল দিবস পালনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। প্রথম বছর উপকূল দিবস পালনের খবর নিয়ে আগ্রহ ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার। এই দুই সংবাদমাধ্যম সেদিন এই উদ্যোগ বিষয়ে সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিল। উপকূলবাসীর জন্য সবচেয়ে শোকের দিন হিসাবে পরিচিত ১২ নভেম্বর ‘উপকূল দিবস’হিসাবে স্বীকৃত হোক। আমি দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রত্যাশা করছি। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এই দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড কোস্টাল ডে’ হওয়া উচিত। 

বহু মানুষের কান্না জড়িত দিন

’৭০-এর ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল বাংলাদেশের গোটা উপকূল। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন। এই ঘূর্ণিঝড় গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয়। ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই উপকূলে আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে মারা যায় প্রায় দশ লাখ লোক।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ থেকে উপকূলের জন্য এই দিনটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতি আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে চলতি বছরের ১৮ মে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতি ঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) উপকূল অঞ্চলে সর্বকালের প্রাণঘাতি ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। অন্যদিকে উইকিপিডিয়ার সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড় সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে বাংলাদেশের ভোলা এবং তৎকালীন নোয়াখালী (নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর) উপকূলে।

বাংলাদেশের সমগ্র উপকূল অঞ্চল ঘুরে আমি বহুজনের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, যারা ’৭০-এর ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়েছেন। গ্রামের পর গ্রাম বিরাণ হয়ে গিয়েছিল। বহু পরিবার পথে বসে গিয়েছিল। আমি এমন অনেকের সাথে কথা বলেছি, যারা শুরু করেছিলেন শুন্য থেকে। অনেকের স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়েছিল, জীবনের গতিপথ বদলে গিয়েছিল। সময় গড়িয়েছে অনেক, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা হাজারো সংকট মাথায় নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ’৭০-এর ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ঘিরে বড় কোন পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর কথা আলোচনায় আসে সামান্যই। ১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের স্বীকৃতি পেলে উপকূলবাসী অন্তত কথা বলার সুযোগ পাবে। 

ইস্যুটি আন্তর্জাতিক  

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উপকূল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এতদিন উপকূলের জন্য কোনো ‘দিন’ ছিল না। 2016 সাল থেকে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে উপকূল দিবস পালিত হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উপকূলবাসীরা আন্তর্জাতিক উপকূল দিবসের দাবি জানিয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, উপকূলীয় ফ্রন্টলাইনারদের সংকটকে টেবিলে আনা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক আলোচনায় তাদের দুর্দশা তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক উপকূল দিবসের প্রস্তাব করা হয়েছে। আজকের দাবি বাস্তবায়ন হলে উপকূলবাসীর জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ মসৃণ হবে।

আন্তর্জাতিক উপকূল দিবস বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা জরুরি। বছরে অন্তত একদিন আমরা উপকূলের পক্ষে জোরালো কথা বলতে পারি। আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার জন্য উপকূলীয় সমস্যাগুলি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবে উপকূলীয় মানুষ বহুমুখী সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। উপকূলীয় সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিশ্বের অনেক দেশই জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করছে। তাই আন্তর্জাতিক উপকূল দিবসের দাবি সময়োপযোগী। উপকূলীয় ইস্যুতে গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় করতে আন্তর্জাতিক উপকূল দিবসের প্রয়োজন রয়েছে। উপকূলীয় জলবায়ু সম্পর্কিত বিষয়গুলি মিডিয়াতে আরও নথিভুক্ত করা দরকার। আন্তর্জাতিক উপকূল দিবসের বাস্তবায়ন সরকারগুলিকে উপকূলীয় ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করবে। উপকূলীয় সংকট নিরসনে এবং সম্ভাবনার বিকাশে সরকার আরও বেশি কিছু করতে পারে।

উপকূল, এক বিপন্ন জনপদ

বাংলাদেশের সমুদ্ররেখার এক বিপন্ন জনপদের নাম উপকূল। যেখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে। কৃষকের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে কোন বছর মাঠে ভালো ফসল হলে প্রকিৃতর বৈরিতায় সে ফসল আর ঘরে তোলা সম্ভব হয় না। কষ্টের জমানো অর্থের সঙ্গে ঋণের টাকা যোগ করে নতুন ঘরখানা হয়তো এবছর মাথা তুলেছে, ঠিক পরের বছরই ঝড়ের ঝাপটায় মাটির সঙ্গে মিশে যায় সে ঘর। জলোচ্ছ্বাস, নদী-ভাঙন, লবণাক্ততার প্রভাব প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে মানুষগুলোকে। সে তো উপকূল! নোনাজলের ঝাপটায় ক্ষত-বিক্ষত হবে সে, এটাই স্বাভাবিক! উপকূলবাসীর দিকে বছরে অন্তত একটি দিন বিশেষভাবে নজর ফেলার জন্য, উপকূলের সংকট-সম্ভাবনার কথা বছরে অন্তত একটিবার সবাই মিলে বলার জন্যে একটি বিশেষ দিন চাই। যেদিন সবাই মিলে একযোগে উপকূলের কথা বলবে। 

উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ঘুরেফিরে একই চিত্র আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তথ্যশূন্যতা, মানুষের অসচেতনতা, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা, সিগন্যাল বিভ্রান্তি ইত্যাকার নানান বিষয়। প্রান্তিক জনপদের মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা চিরাচরিত। শখের হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু এবং অন্যান্য সম্পদ ছেড়ে তারা অন্য কোথাও যেতে চান না। অনেক স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও সেখানে যাওয়ার রাস্তা ভালো নয়। অধিকাংশ স্থানে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পরিবেশ নেই ইত্যাদি। কোনো কোনো স্থান থেকে শুনেছি, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার নেই, পানি নেই, টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। শত চেষ্টার পরেও ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলের একেবারে প্রান্তিকের সব খবর কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে চর কিংবা দ্বীপাঞ্চলে গণমাধ্যমকর্মীদের যাওয়া দুরূহ ব্যাপার। সড়ক পথে যেখানে যাওয়া সম্ভব সেখান থেকেই টেলিভিশন লাইভ প্রতিবেদন দেখানো হয়। 

ঝড়ের সময় অধিকাংশ চরের, দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানকার বিপদের খবরগুলো তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয় না। পরে হয়তো সব খবর জানা যায়, কিন্তু তাৎক্ষণিক খবরাখবর পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ খুবই নাজুক। শক্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় ছোট ধাক্কাতেই অনেক স্থানে বড় ক্ষতি হয়। 

উপকূল দিবস এবং উপকূল সাংবাদিকতা

উপকূলে গণমাধ্যমের নিবিড় নজরদারির কথা আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। গণমাধ্যম কেন শুধু জরুরি সময়ে আসবে? ঘূর্ণিঝড়ের বাইরে উপকূলে কী আর কোনো খবর নেই? এই আশ্রয়কেন্দ্রের কথা বলছি, বাঁধের কথা বলছি, সিগন্যালিং কিংবা সচেতনতার কথা বলছি, এগুলো নিয়ে তো বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশের কিংবা প্রচারের সুযোগ আছে। একেবারে যে প্রচার হচ্ছে না, তা নয়। তবে মাত্রাটা আরও বাড়ানো দরকার। ফলে মানুষ সচেতন হতে পারে। অসংলগ্নতা দূর হতে পারে। এর ফল হয়তো আমরা বিশেষ সময়ে অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় এলে পেতে পারি। এভাবে গণমাধ্যম উপকূলের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। উপকূলের উন্নয়ন, সংকটের উত্তরণ, সম্ভাবনা বিকাশসহ উপকূলের অন্ধকারকে প্রকাশের আলোয় আনতে ‘উপকূল দিবস’ প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি। 

উপকূল দিবসের সাথে উপকূল সাংবাদিকতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দিবস পালনের মধ্যদিয়ে প্রতি বছর অন্তত একটি দিনে সবাই মিলে উপকূলের কথা বলা যাবে। প্রকাশের আলো উঠে আসবে উপকূলের অনেক ইস্যু। দিবস পালনের মধ্য দিয়ে উপকূলের ইস্যুসমূহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারবে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলের নতুন নতুন দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতেও একটি দিবসের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আমাদের প্রত্যাশা, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনার ভিত্তিতে সরকার উপকূল দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিবেন। একটি দিবস হলে এগিয়ে যায় উপকূল, এগিয়ে যায় উপকূল সাংবাদিকতা। 
 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র উপক ল র র ঘ র ণ ঝড় উপক ল র প র র উপক ল র য য় উপক ল জনগ ষ ঠ র উপক ল র স দ বস র প প রস ত ব দ বস চ ই সব ই ম ল উপক ল য উপক ল স ব সরক র ন উপক ল ই উপক ল প রক শ ব দ কত দ বস হ জলব য র খবর সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

অনার্সের ফল প্রকাশের আগেই বিসিএস ক্যাডার হলেন ঢাবির খাদিজা

৬৬৮ জন প্রার্থীকে সাময়িকভাবে মনোনয়ন দিয়ে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ ফলাফল প্রকাশ করে।

আরো পড়ুন:

জবিতে সংঘর্ষ: ৪ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

গাঁজা সেবনের অভিযোগে রাবির ৬ শিক্ষার্থী আটক

ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। খাদিজা তার অনার্স পরীক্ষা শেষ করেছেন, কিন্তু ফল প্রকাশিত হয়নি। এই কারণে তিনি নিয়ম অনুযায়ী ‘অ্যাপিয়ার্ড’ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন।

খাদিজা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগরে। 

তিনি বলেন, “আমাদের অনার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি। তবে আমরা শেষ সেমিস্টারের রিসার্চ, সেমিনার প্রেজেন্টেশন ও ফিল্ডওয়ার্ক শেষ করেছি। থিওরিটিক্যাল কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় আগেই নিয়েছে, যাতে আমরা ‘অ্যাপিয়ার্ড’ দেখিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারি। সেই পরীক্ষার পরই আমি আবেদন করি, আর সফল হই।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ