জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

গাঁজা সেবনের অভিযোগে রাবির ৬ শিক্ষার্থী আটক

এসএসসি-এইচএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল ডিআরইউ

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন.

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের মো. সাদি হাসান, একই শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের আব্দুল্লাহ আল নোমান ও সামিউদ্দিন সাজিদ এবং একই বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের জাহিদুর রহমান জনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে চার শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আচরণ শিক্ষার্থীসুলভ নয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নীতির পরিপন্থি হওয়ায় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সভাপতি করা হয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনকে।

কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর ড. মোহাম্মদ আলী এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নাছির আহমাদ।

কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে চারজন শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাই আপাতত তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

এর আগে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত গ্রুপ ও সুমন সরদার গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১০ নভেম্বর) আস-সুন্নাহ পরিবহনের একটি বাসে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউদ্দিন সাজিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদি হাসানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় গেটের সামনে ওই ঘটনার জেরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে প্রথম দফা সংঘর্ষের পর শান্ত চত্বরে ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে সালিশের সময় আরো দুই দফা হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টর ড. মো. নঈম আক্তার সিদ্দিকী, ফেরদৌস হোসেন ও মাহাদী হাসান জুয়েলসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এছাড়া আহতদের মধ্যে দুই গ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী রয়েছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের সামিউদ্দিন সাজিদ, আল-আমিন, আশরাফুল, প্রত্যয়, ইব্রাহিম, জনি ও জাহিদ; রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদি এবং বাংলা বিভাগের ছাব্বীর।

আহত সাজিদ ও জনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত ও জাফর আহমেদ গ্রুপের অনুসারী। অপরদিকে সাদি, মাশফিক রাইন, আতাউল্লাহ আহাদ ও আশরাফুল ইসলাম সুমন সরদার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল উদ দ ন স কম ট র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদিন কোনো ধরনের মিছিল বা লোক জড়ো যেন না হতে পারে, কোনো ধরনের নাশকতা বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে-সেজন্য পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “১৩ তারিখকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম চলছে। কে পি আই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এখানে সেখানে খোলা তেল বিক্রি বন্ধসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউনে নিয়ে সতর্ক আছে সরকার। আশঙ্কার কারণ নেই। কোনো ধরনের সন্ত্রাস সহ্য করা হবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।”

আরো পড়ুন:

মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১

চট্টগ্রামে সারোয়ার হত্যাসহ তিন ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সন্দেহজনক বিভিন্ন বাসা বাড়ি আবাসিক হোটেল ম্যাচসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র‌্যাব পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন পেজ ও আইডি থেকে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো দেশের বাইরে থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে তথ্য যাই হোক আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির কোনো কার্যক্রম করার সুযোগ নাই।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণসমাবেশ, লকডাউন ঘোষণা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো নানা গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট হুমকির তথ্য না থাকলেও, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের আশঙ্কা থাকায় মাঠ প্রশাসনকে যেকোনো উসকানিমূলক তৎপরতা প্রতিরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে গুজবে কান না দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “সোমবার রাজধানীতে বিভিন্ন যানবাহনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল আগুন দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই। নাশকতাকারীদের দমনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন।”

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা কমসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোর প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিজিবি মোতায়েন
এদিকে জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর‌তে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সাংবা‌দিক‌দের এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অতিরিক্ত ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস, আদালত প্রাঙ্গণ, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় এবং এর আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সড়কে থাকবে জামায়াতসহ ৮ দল
নাশকতা রোধে সারা দেশে সড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮টি দল। বুধবার দলগুলোর পক্ষে জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, আটদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির নাশকতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে' সড়কে অবস্থান নেবেন।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ