ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, “অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে মামুন আবার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আরেক সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মামুনকে গুলি করে হত্যা করেন ফারুক ও রবিন।”

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

আরো পড়ুন:

চাঁদপুরে বাড়ি ফেরার পথে বিক্রয়কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ঘুমন্ত বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে আটক

মামুন হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন শুটার—ফারুক ও রবিন। অন্য ৩ জন হলেন শামীম, রুবেল ও ইউসুফ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, অস্ত্র, অব্যবহৃত গুলি ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই টাকা রবিন ও ফারুককে হত্যার পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়েছিলেন রনি।”

ডিএমপির ডিবির প্রধান বলেন, “গতকাল রাতে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তারা ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সিলেট থেকে ভারত প্রবেশ করতে না পেরে তারা সাতক্ষীরা হয়ে সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সিলেট থেকে আসার পথে নরসিংদীতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।”

শফিকুল ইসলাম বলেন, “হত্যার পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের হেফাজতে রাখেন। রুবেল ভাড়ায় গাড়ির ব্যবসা করেন। পরে রুবেল অস্ত্র ও গুলি ইউসুফের হেফাজতে দেন। রুবেলকে ধরার পর তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজারে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ইউসুফ গ্রেপ্তার হন। ইউসুফ পেশায় একজন দরজি। পরে তার ঘরের মেঝে থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৬টি গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।”

হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, “এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। কিছুদিন ধরে রনি একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ফারুকের সহযোগিতায় করা এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রনি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজামুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ। সবশেষ গত সোমবার হিমেল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসেন মামুন। মামুনকে হত্যার জন্য এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়।”

হত্যার বর্ণনা দিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে রনি তার বাসায় রবিনকে ডেকে নেন। রনি তাকে জানান, তার সঙ্গে ফারুক, সুমন, কামালসহ আরো কয়েকজন থাকবেন। তারা মামুনকে মেরে ফেলবেন। তিনি রবিনকে সঙ্গে থাকতে বলেন। তাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রবিন রাজি হন। ঘটনার দিন সকালে রনি ফোন দিয়ে সবাইকে আদালত এলাকায় যেতে বলেন। রবিন তার বন্ধু শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে আদালত এলাকায় গিয়ে হত্যায় অংশ নেন। অন্যরাও সে সময় আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সুমন ও ফারুকের গুলি করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফারুক ও রবিন গুলি করেন।”

শফিকুল ইসলাম বলেন, “মামুনের গতিবিধি অনুসরণ করে ফারুক ও রবিনকে খবর দেন কামাল। সংকেত পেয়ে তারা গুলি ছুড়ে মামুনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজার যান। সেখানে রনির নির্দেশে অস্ত্র ও গুলি ইউসুফের কাছে রাখা হয়। পরে রনির নির্দেশে ফারুক ও সুমনকে দুই লাখ টাকা দেন রুবেল। ফারুক ও সুমন এক লাখ টাকা করে ভাগ করে নেন।”

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য অপর ধ ফ র ক ও রব ন রন র ন র দ শ হত য র প ব যবহ ত ড এমপ ইউস ফ

এছাড়াও পড়ুন:

মামুন হত্যার পেছনে কি অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নাম আসছে যে কারণে

২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা। তখন ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সিটি পেট্রলপাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি এলাকার মূল সড়কে ছিল তীব্র যানজট। ওই যানজটে তখন আটকে ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈফ মামুন। প্রকাশ্যে ১০–১২ জনের একটি দল মামুনের ওপর হামলা চালায়। প্রথমে মামুনের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে মামুন গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তাঁকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মামুন তখন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তাঁকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে ভুবন চন্দ্র শীল নামে একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।

এ ঘটনার প্রায় দুই বছর দুই মাস পর আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে আবারও ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এবার আর তিনি প্রাণে বাঁচতে পারেননি। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আজকের ঘটনাটি ঘটেছে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে। সেখানে দুজন মুখোশধারী ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। মামুন ২৪ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ২০২৩ সালে ওই হামলার শিকার হয়েছিলেন।

প্রায় দুই যুগ কারাবাস শেষে মুক্ত হওয়ার পর মামুনকে হত্যায় কারা, কেন এত মরিয়া হয়ে উঠলেন, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। প্রথমবার হামলার ঘটনার সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের নাম এসেছিল। যদিও তখন ইমন কারাগারে ছিলেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই ইমন কারাগার থেকে মুক্ত হন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০২৩ সালে মামুনের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় কারাগারে থাকলেও ওই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। একসময় ইমন ও মামুন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ঢাকার হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার অপরাধজগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন ইমন ও মামুন। তাঁদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। ওই সময় এই বাহিনী রাজধানীর এসব এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছিল। তাঁরা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি। ২০২৩ সালে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কারাগার থেকেই মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ইমন।

আরও পড়ুনপ্রকাশ্যে এসেই তৎপর সুব্রত বাইন, ‘পিচ্চি হেলাল’, ‘কিলার আব্বাস’সহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ১১ অক্টোবর ২০২৪সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, তারিক সাইফ মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন (বাঁয়ে)। দুই ব্যক্তি খুব কাছে থেকে তাঁকে গুলি করছেন (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপরাধজগতের দ্বন্দ্বে মামুন খুন, দুই লাখ টাকার বিনিময়ে গুলি করেন দুজন: পুলিশ
  • মামুন হত্যার পেছনে কি অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নাম আসছে যে কারণে