আফগানিস্তানে প্রতি ১০টির মধ্যে ৯টি পরিবারই অনাহারে বা ঋণে জর্জরিত
Published: 12th, November 2025 GMT
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, আফগানিস্তানের প্রতি ১০ পরিবারের ৯টিই অনাহারে থাকছে বা টিকে থাকতে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে ফেরত আসা লাখো শরণার্থীর চাপ দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ আফগান নিজ দেশে ফিরে এসেছে।
আরো পড়ুন:
হাসপাতালে বোরকা পরার নির্দেশ তালেবান সরকারের
আজিজুলের সেঞ্চুরিতে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সিরিজ বাঁচাল বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান শাসিত আফগানিস্তান ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য হ্রাস, নিষেধাজ্ঞা এবং আগস্টে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পসহ বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত। এর মধ্যে পাকিস্তান ও ইরান আফগান শরণার্থীদের বহিষ্কারের প্রচেষ্টা জোরদার করায় চলতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক দেশে ফিরতে হয়েছে।
ফিরে আসা আফগানরা মারাত্মক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ফেরত আসা পরিবারের অর্ধেকের বেশি খাবার জোগাতে চিকিৎসা সেবা বাদ দিচ্ছে এবং ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবার ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এসব পরিবারের গড় ঋণের পরিমাণ ৩৭৩ থেকে ৯০০ ডলার পর্যন্ত, অথচ গড় মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার। ৪৮ হাজারের বেশি পরিবারের ওপর করা এক জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বাসা ভাড়া তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় ফেরত আসা লোকজন বাসস্থানের সমস্যাতেও ভুগছে। অর্ধেকের বেশি মানুষ জানিয়েছে যে, তাদের পর্যাপ্ত স্থান বা বিছানাপত্র নেই। পশ্চিম আফগানিস্তানের ইনজিল এবং গুজারা জেলায় ফেরত আসা বেশিরভাগ মানুষ শরণার্থী তাঁবুতে বা জরাজীর্ণ স্থাপনায় বসবাস করছে।
উচ্চ-প্রত্যাবর্তনকারী অঞ্চলে আফগানদের জীবিকা এবং পরিষেবা জোরদার করার জন্য ইউএনডিপি জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন রদ্রিগেস বলেন, “আঞ্চলিকভাবে আয়, বাসস্থান ও সামাজিক সংহতি জোরদার করে উচ্চ-প্রত্যাবর্তনের জেলাগুলোর ওপর চাপ কমানো সম্ভব।”
দীর্ঘ যুদ্ধ, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং পরবর্তী মানবিক সংকটের পর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জাতিসংঘ এ বছর আফগানিস্তানের জন্য ৩.
তালেবান সরকার চলতি বছরের ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে এবং পাকিস্তানের শরণার্থী বহিষ্কারের পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে।
ইউএনডিপি আরো সতর্ক করেছে যে, নারীদের কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় পরিবারগুলোর দুরবস্থা আরো বেড়েছে। দেশটিতে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ এখন মাত্র ৬ শতাংশ, যা বিশ্বের অন্যতম নিম্নতম। নারীদের চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নারীপ্রধান পরিবারগুলোর জন্য কাজ, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ইউএনডিপির আঞ্চলিক পরিচালক কানি উইগ্নারাজা বলেন, “কিছু প্রদেশে প্রতি চার পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হিসেবে নারীদের উপর নির্ভর করে, তাই যখন নারীদের কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়, তখন পরিবার, সম্প্রদায়, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন ইউএনড প পর ব র র শরণ র থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাচ্চারা পড়ালেখা করব, বড় হইব—এটাই আমাদের স্বপ্ন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ত জোয়ার এখন আরও ভেতরের দিকে ঢুকে পড়ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানিও ধীরে ধীরে নোনা হয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় টিউবওয়েল বসিয়েও মিঠাপানি মেলে না।
সুপেয় পানির সংকটে অনেকেই এই উপকূলে থাকতে চান না। দাকোপ উপজেলার দক্ষিণের শেষ জনপদ শিবসাতীরের কালাবগী ঝুলন্তপাড়া। নদীর চরে গাদাগাদি গড়ে ওঠা অসংখ্য ঝুলন্ত ঘরের সামনে দিয়ে চলার পথ। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর ঝুলন্তপাড়ায় বসতি গড়ে ওঠে। এরপর সাত-আটবার নদীভাঙনে শিবসা-সুতারখালীর পেটে চলে গেছে বসতঘরের জমি। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্পানের আঘাত সয়ে টিকে আছেন সাড়ে তিন হাজারের মতো বাসিন্দা। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে শিবসা-সুতারখালী নদীর কোলে দোল খাওয়া জনবসতি ‘ফকিরকোনা’ কালাবগী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে খাবার পানি যেন সোনার হরিণের মতো।
ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দা রুমা রানী বলছিলেন, আগে গ্রামীণ উৎস থেকে খাবারের পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। পানি মিলবে, সেই ভরসাও ছিল না। খাবাপ পানি খেলে পেটের অসুখ লেগেই থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছরে এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পর সহজে লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন তারা। রুমা রানী বলেন, ‘পানির অভাবে বাচ্চারা কষ্ট পাইত, স্কুলে যাইতে পারত না, পেটের অসুখ লাইগা থাকত। অখন তো ভালো পানি পাই। স্কুলে যাচ্ছে নিয়মিত, আর সমস্যা হয় না। বাচ্চারা পড়ালেখা করব, বড় হইব—এটাই আমাদের স্বপ্ন।’
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে লজিক প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। সেই সঙ্গে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন রুমা রানি।
রুমা রানীর মতো আরও অনেকের জীবন বদলের সঙ্গী হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিডিএফ) এবং ইউএনডিপির লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত লজিক প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউএনসিডিএফ ও ইউএনডিপির একটি যৌথ প্রয়াস।
পটুয়াখালীর মানুষের কাছে আশীর্বাদ। এখানে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম বা সিগন্যাল টাওয়ারগুলো কার্যকর সতর্কতা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে