আয়ারল্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’
Published: 12th, November 2025 GMT
সাদমান ইসলাম মন খারাপ করতেই পারেন! একেবারে মনের মতো ২২ গজ পেয়েও একটা সেঞ্চুরি করতে পারলেন না। সেই পথেই তিনি ছিলেন। কিন্তু ৮০ রানে থমকে যায় তার ইনিংস। সাত মাস পর দলে ফেরা মাহমুদুল হাসান জয় সঙ্গীর মতো ভুল করলেন না। আয়নার মতো স্বচ্ছ উইকেটে একেবারে ঢিলেঢালা বোলিংয়ের বিপক্ষে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। সাত মাস পর দলে ফিরে সেঞ্চুরিতে প্রত্যাবর্তন রাঙিয়ে ১৬৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রানের ইনিংস খেলার পথে মুমিনুল হক করেছেন ৮০ রান। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল নিজেকে আরেকধাপ এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায়।
ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড দৌড়াল। আয়ারল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে আটকে বাংলাদেশ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করলো ১ উইকেটে ৩৩৮ রানে। স্কোরবোর্ডে লিড ৫২ রানের। এই রান উৎসব তৃতীয় দিন কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার। নিজেরা ভুল না করলে থামানো কষ্টকর। একে তো আয়ারল্যান্ডের বোলিংয়ে সেই তেজ নেই। বাড়তি এক্স-ফ্যাক্টর নেই। সঙ্গে উইকেটের আচরণ। একেবারেই ফ্ল্যাট উইকেট। স্পিনে হুটহাট বল ছোবল দিলেও বাকিটা সময় নিরাপদ আচরণ করছে। একটু একটু ভাঙতে শুরু করেছে। যা তৃতীয় দিন থেকে প্রভাব রাখতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
সেঞ্চুরিতে জয়ের ফেরা
জয়-সাদমান-মুমিনুলে দাপুটে দিন পার করল বাংলাদেশ
তবে খুব বেশি যে প্রভাব রাখতে পারবে তা নিশ্চিন্তে বলা যায়। কারণ আয়ারল্যান্ডের স্পিনারদের তেমন বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি। দুই স্পিনার হ্যারি টেক্টর ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন সারাদিন হাত ঘুরিয়েও তেমন কিছু করতে পারেননি। এছাড়া তৃতীয় স্পিনার হিসেবে ম্যাথু হ্যাম্পরেইস এসেছিলেন। বোলিংয়ে তেমন কোনো জোর নেই। পেসাররা বাড়তি সুবিধা করতে না পারায় বাংলাদেশের রান বড় হয়েছে। বিশেষ করে নতুন বলে সাদমান ও জয় ছিলেন দারুণ। উইকেটের চারিপাশে দুজন বেশ সাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করেছেন। বাউন্ডারি পেয়েছেন নিয়মিত। ঝুঁকি তেমন নেননি। তাতেই কাজ হয়েছে।
তবে সেঞ্চুরির আক্ষেপ সাদমানের নিশ্চিয়ই আছে। ১০৪ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮০ রান করে উইকেটের পেছনে টেক্টরের হাতে ক্যাচ দেন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় আইরিশরা। তাদের পুরো দিনের সাফল্য ওই সাদমানই। ১৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়ে। যা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। এরপর মুমিনুল ক্রিজে এসে নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে সহজেই রান তুলে নেন।
জয় যত সময় কাটাচ্ছিলেন ততই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন। তৃতীয় সেশনে মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। ২০২২ সালে ডারবানে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ৩ বছর পর পেলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ফেরার ম্যাচ সেঞ্চুরিতে রাঙিয়ে হাল ছাড়েননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যাম্পারের পায়ের উপরের বল মিড উইকেট দিয়ে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন বোঝা গেছে বড় কিছুর খোঁজে আছেন। হতে পারে দুইশ! তিনশই বা কেন নয়? এমন সুযোগ বারবার তো পাবেন না।
মুমিনুল ২০ রান পূর্ণ করে সেঞ্চুরি পান কিনা সেটাও দেখার। তাদের দুজনের ব্যাট তৃতীয় দিনে কতটা আলো ছড়ায় সেটাই দেখার।
এর আগে ২৭০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল আয়ারল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে ১৬ রান যোগ করতে অবশিষ্ট ২ উইকেট হারায় অতিথিরা। এজন্য বাংলাদেশকে করতে হয়েছে ১৪ বল। হাসান মাহমুদ ও তাইজুল একটি করে উইকেট নিয়ে সাত সকালেই তাদের গুটিয়ে দেন।
৩.
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন উৎসব স দম ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
নদীতে ডিটারজেন্ট দূষণ কমাবে দুই খুদে বিজ্ঞানীর কৌশল
বর্তমানে সারা বিশ্বে পানিতে ডিটারজেন্ট দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১ হাজার ২২০ কোটি লিটার ডিটারজেন্ট ব্যবহৃত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এর মধ্যে শুধু ২৫-৩০ শতাংশ পানি পরিশোধিত হয়। এ সমস্যা সমাধানে দুই খুদে বিজ্ঞান আরীব বিন ফারুক ও সাইম ইবনে সারোয়ার ‘দ্য সল্টিং আউট সিস্টেম ২.০’ প্রকল্প বানিয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ডিটারজেন্ট ও তেলের কারণে দূষিত পানিকে লবণাক্ত হলেও পরিষ্কার পানিতে পরিণত করা। এই পানি পরে শিল্প ও কৃষি খাতে ব্যবহার করা সম্ভব।
আরীব ও সাইমের নকশা করা পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের লবণ পানিতে দ্রবীভূত করে দূষণকারী উপাদান, যেমন তেল ও ডিটারজেন্টকে কার্যকরভাবে পৃথক করা হয়। উচ্চমাত্রায় আয়নিত লবণ পানিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো কাজ করে ডিটারজেন্ট, তেল ও প্রোটিনের মতো পদার্থকে অদ্রবণীয় করে তোলে। এর ফলে পানি অধঃক্ষিপ্ত হতে বাধ্য হয়। আরীব ও সাইম এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দূষিত পানি থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ডিটারজেন্ট পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।
দুই খুদে বিজ্ঞানীর গল্পঢাকা বিএএফ শাহীন কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র দুই খুদে বিজ্ঞানী আরীব ও সাইম। তাদের প্রকল্প ‘দ্য সল্টিং আউট সিস্টেম ২.০’-এর মাধ্যমে ২০২৫ সালের বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবে সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। তাদের এই আবিষ্কার পরিবেশদূষণের এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে। আরীব বিন ফারুক নিজেকে পানিগবেষক পরিচয় দিতে ভালোবাসে। সে জানায়, ‘আমি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পানিদূষণ নিয়ে কাজ শুরু করি। কাপড় ধোয়ার জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানি ডিটারজেন্ট দিয়ে দূষিত হচ্ছে। এই পানি সরাসরি নদী, খাল ও বিলকে দূষিত করছে। এ সমস্যা সামনে রেখে আমরা সল্টিং আউট নামে একটি প্রোটিন পৃথক্করণ প্রক্রিয়া ও বালি ব্যবহার করে ডিটারজেন্ট পানিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছি। সল্টিং আউট হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে উচ্চমাত্রায় আয়নিত পদার্থ, যেমন লবণ নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করে পানিতে থাকা অন্য পদার্থ অদ্রবণীয় হয়। ফলে দূষণ সৃষ্টিকারী পদার্থ অবক্ষেপিত হয়ে জমা হয়। এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ডিটারজেন্ট থেকে পানি পরিষ্কার করতে পেরেছি, যা এটিকে একটি সফল প্রক্রিয়া করে তোলে। সাধারণভাবে অবক্ষেপণ একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বায়ু, পানি বা হিমবাহের মতো বাহকের মাধ্যমে পরিবাহিত শিলা, পলি বা মাটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয় এবং নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।
উদ্ভাবন যাত্রাআরীব প্রথম ‘সল্টিং আউট প্রসেস’ ব্যবহার করে ডিটারজেন্ট পরিশোধনের একটি সফল ব্যবস্থা তৈরি করে স্টকহোম জুনিয়র ওয়াটার প্রাইজ থেকে পুরস্কৃত হন। এটি ছিল তার প্রথম সাফল্য। এরপরই তার সঙ্গে যুক্ত হয় সাইম ইবনে সারোয়ার। দুজন মিলে তাদের এই উদ্ভাবনকে আরও উন্নত করে সল্টিং আউট সিস্টেম ২.০ তৈরি করে এবং বিজ্ঞান উৎসবে জমা দেয়। বিপুল পরিমাণ ডিটারজেন্ট দূষণ মোকাবিলায় আরীব ও সাইমের পদ্ধতি একটি কম খরচের, কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব সমাধান বলা যায়। দুই খুদে বিজ্ঞানী এই কৌশল ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে বলে জানিয়েছে। ‘সল্টিং আউট সিস্টেম ২.০’ কৌশল ব্যবহার করে দেশে পানির পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে চায় তারা। দুই খুদে বিজ্ঞানী জানায়, টেক্সটাইল, ডাইং এবং অন্য শিল্পগুলোতে যেখানে প্রচুর পরিমাণে ডিটারজেন্ট ও রাসায়নিক মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই সিস্টেমটি বসানো যেতে পারে। পরিশোধিত লবণাক্ত পানিকে সহজেই আবার ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া, বয়লারে ব্যবহার অথবা অন্যান্য শিল্পকারখানায় কাজে লাগানো সম্ভব। যেহেতু এই পদ্ধতিতে পানি থেকে ডিটারজেন্ট এবং ক্ষতিকর তেল প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত অপসারিত হয়, তাই পরিশোধিত লবণাক্ত পানিকে লবণ-সহনশীল ফসল বা নির্দিষ্ট সেচব্যবস্থায় ব্যবহার করা যেতে পারে, যা স্বাদু পানির ওপর চাপ কমাবে।
খুদে বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যবাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলার স্কুলে পড়াশোনা করেছে আরীব বিন ফারুক। ছোটবেলা থেকে তার বিজ্ঞানকে জানার প্রবল আগ্রহ। গণিত অলিম্পিয়াড ও পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মতো নিয়মিত আয়োজনে অংশ নেয় সে। আরীব বিন ফারুক বলে, ‘২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আমি পানিদূষণ নিয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের কাপড় ধোয়াঁর জন্য প্রতিদিন প্রচুর পানি ব্যবহৃত হয়। ডিটারজেন্ট দিয়ে দূষিত হয় পানি। ডিটারজেন্ট পানি প্রতিদিনই আমাদের নদী-নালা, খাল-বিলকে দূষিত করে। তখন থেকেই চিন্তা করছি ডিটারজেন্ট দূষণ নিয়েই কাজ করব। যে কথা, সে কাজ। বন্ধু সায়েম ইবনে সারোয়ারকে নিয়ে আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা তৈরি করে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণ করি।’ আর সাইম ইবনে সারোয়ার ভবিষ্যতে স্থপতি হতে চায়। সে বলে, ‘আমি এমন সব নকশা এবং কাঠামো নির্মাণ করতে চাই, যা সুন্দর, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হবে।’ দুই খুদে বিজ্ঞানী তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে লন্ড্রি বা বড় আবাসিক এলাকার পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থার শেষে এই প্রযুক্তি স্থাপন করে দূষিত ডিটারজেন্ট পানি পরিশোধন করতে চায়। এর ফলে নদী, খাল এবং ভূগর্ভস্থ পানি ডিটারজেন্ট ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক থেকে সুরক্ষিত থাকবে।