আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে রুখে দেবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, তিনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন যে স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে তারা এটা বলছে।

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এখন বাইরে যেগুলো (বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরিত প্রভৃতি) হচ্ছে, এগুলো কি থ্রেট টু জাস্টিস (ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি)?

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, তিনি থ্রেট টু জাস্টিস মনে করেন না। তবে তারা এই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য করছে, এটুকু বলতে পারেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় কবে হবে, তা জানা যাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বৃহস্পতিবার কি রায়ের তারিখ পাওয়া যাবে, নাকি আবার অপেক্ষায় থাকতে হবে? এ রকম একটা গুঞ্জন আছে।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, রায় দেওয়া, রায়ের দিন নির্ধারণ করার এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে বৃহস্পতিবার রায়ের তারিখ পাওয়া যাবে।

এই মামলার আসামি শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এটাকে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশি কোনো গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। তবে তাদের (সাক্ষাৎকার নেওয়া বিদেশি গণমাধ্যম) উচিত এই প্রশ্ন করা যে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে এবং তারা বিশ্লেষণ করেছে। এটা তাঁরই (শেখ হাসিনা) কণ্ঠস্বর। কাজেই তাদের এই প্রশ্নগুলো করা উচিত এবং যারা এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদেরই উত্তরটা দেওয়া উচিত।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল কোনোভাবেই কোনো বৈদেশিক ট্রাইব্যুনাল বা সংস্থা বা সরকার কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকেরা স্বাধীন। এমনকি কোনো প্রসিকিউশনের কোনো বক্তব্য শুনতে বা প্রসিকিউশন যদি বলেন এটা করেন, তা করতে বিচারকেরা করতে বাধ্য নন।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার মামলায় রায়ের দিন ধার্য হবে। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে এবং জাতিসংঘে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে যে এই বিচারের প্রক্রিয়াটা ঠিকভাবে হচ্ছে না। সার্বিকভাবে তারা অর্থের খরচ করছে। এটা নিয়ে প্রসিকিউশনের কোনো বক্তব্য আছে কি না?

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে যে বিষয়টি তাঁদের রেকর্ডের বাইরে। তারপরও তাঁরা যেহেতু এই সমাজেরই মানুষ, এই বিষয়গুলো তাঁদের নজরে আসে। জাতিসংঘে যে আবেদন করা হয়েছে, সেই বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের একটা বক্তব্য তুলে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোহেল তাজ বলেছেন, (আওয়ামী লীগ সরকার) জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। জনগণকে হত্যা করে বিদেশে চলে গেছে। তারপর বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিতে সেই টাকা দিয়ে জনগণকে লেলিয়ে দিচ্ছে। যে নেতা-কর্মীদের তাঁরা ফেলে পালিয়ে গেছে, তাঁদের আবার নির্যাতনের শিকারে পরিণত করছে।

এরপর মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জাতিসংঘে একটা আবেদন করেছে। তাতে তারা অভিযোগ করেছে, এই আদালতের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। কেন ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তা তাঁর (মিজানুল ইসলাম) কাছে বোধগম্য নয়।

কারণ ব্যাখ্যা করে মিজানুল ইসলাম বলেন, এই আইন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) তৈরি করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ের সংসদে। ওই সময় বিখ্যাত তিনজন আইনজীবী এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ড.

কামাল হোসেন, মনোরঞ্জন ধর এবং আরেক ভদ্রলোক ছিলেন। পরে এই আইনের সংশোধন করে ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছিল, যদিও এই আইন ১৯৭৩ সালের। এটি তাদের তৈরি করা আইন। আসামির অনুপস্থিতিতে কীভাবে বিচার চলবে, সেই প্রক্রিয়া তারাই তৈরি করেছে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এখন এই ক্ষেত্রে অনিয়ম কী হচ্ছে, সেটা যদি ধরাতে হয়, তাহলে আসামিকে উপস্থিত হতে হবে। উপস্থিত হয়ে আবেদন করে বলতে হবে যে এখানে এই অনিয়ম হচ্ছে। শুধু রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। তাঁর পক্ষে (শেখ হাসিনা) এখানে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে আমির হোসেনকে। তিনি (মিজানুল) যতটুকু জানেন, শেখ হাসিনার আমলের কোনো একটা কোর্টের স্পেশাল পিপির দায়িত্বে ছিলেন আমির; অর্থাৎ উনি তাঁরই (শেখ হাসিনার) লোক ছিলেন। কাজেই এখানে ভিন্ন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে এখন যাঁরা স্পেশাল পিপি হিসেবে কাজ করছেন, তাঁরা কার লোক?

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তিনি তা বলেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন, অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে যে উপযুক্ত লোককে দেওয়া হয়নি। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) যাকে উপযুক্ত বিবেচনা করে একজন স্পেশাল পিপি নিয়োগ করেছিল একটা পদে, তাঁকে এখন এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মানে, তাঁর (আমির হোসেন) অযোগ্যতা নেই। এটা বলেছেন। তারপরও যদি কোনো রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তাহলে যিনি প্রশ্ন উত্থাপন করবেন, তাঁর এই মামলায় কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। তো অধিকার কার আছে? যাঁরা পলাতক আসামি। তাঁদেরকে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে। আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে অথবা আইনজীবী নিয়োগ ছাড়া নিজেরাই বক্তব্য দেওয়ার অধিকারী রাখেন তাঁরা। তাঁরা হাজির হোক। হাজির হয়ে কথা বলুন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য একজন স আইনজ ব সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

রাজধানী ঢাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ইনচার্জ ছাড়া অন্য পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত

টাঙ্গাইলে নির্বাচন অফিসে হামলা-ভাঙচুর, কর্মকর্তাসহ আহত ৩

সোমবার (১০ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সই করা এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দায়িত্বরত অবস্থায় অনেক পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন। এতে তাদের সতর্ক নজরদারি ব্যাহত হচ্ছে এবং দায়িত্ব পালনে শিথিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে পুলিশ দৃশ্যমান থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না।”

আদেশে আরও বলা হয়, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।”

এতে বলা হয়েছে, “দায়িত্বরত অবস্থায় ইনচার্জ ছাড়া অন্য কোনও পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হিসেবে গণ্য হবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

একইসঙ্গে, ডিউটিতে মোতায়েনের আগে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে এই নির্দেশনার বিষয়ে সচেতন ও বাধ্যতামূলকভাবে অবহিত করতে ইউনিট ইনচার্জদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার
  • ‘লকডাউন’ ঠেকাতে কঠোর সরকার, সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান: স্বরাষ্ট্র উপদে
  • ট্রাইব্যুনাল ফেস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না: প্রসিকিউটর
  • রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপ
  • ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সতর্ক পুলিশ
  • ঢাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা