কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদিন কোনো ধরনের মিছিল বা লোক জড়ো যেন না হতে পারে, কোনো ধরনের নাশকতা বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে-সেজন্য পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “১৩ তারিখকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম চলছে। কে পি আই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এখানে সেখানে খোলা তেল বিক্রি বন্ধসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউনে নিয়ে সতর্ক আছে সরকার। আশঙ্কার কারণ নেই। কোনো ধরনের সন্ত্রাস সহ্য করা হবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।”

আরো পড়ুন:

মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১

চট্টগ্রামে সারোয়ার হত্যাসহ তিন ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সন্দেহজনক বিভিন্ন বাসা বাড়ি আবাসিক হোটেল ম্যাচসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র‌্যাব পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন পেজ ও আইডি থেকে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো দেশের বাইরে থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে তথ্য যাই হোক আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির কোনো কার্যক্রম করার সুযোগ নাই।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণসমাবেশ, লকডাউন ঘোষণা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো নানা গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট হুমকির তথ্য না থাকলেও, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের আশঙ্কা থাকায় মাঠ প্রশাসনকে যেকোনো উসকানিমূলক তৎপরতা প্রতিরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে গুজবে কান না দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “সোমবার রাজধানীতে বিভিন্ন যানবাহনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল আগুন দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই। নাশকতাকারীদের দমনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন।”

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা কমসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোর প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিজিবি মোতায়েন
এদিকে জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর‌তে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সাংবা‌দিক‌দের এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অতিরিক্ত ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস, আদালত প্রাঙ্গণ, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় এবং এর আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সড়কে থাকবে জামায়াতসহ ৮ দল
নাশকতা রোধে সারা দেশে সড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮টি দল। বুধবার দলগুলোর পক্ষে জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, আটদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির নাশকতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে' সড়কে অবস্থান নেবেন।

ঢাকা/এমআর/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত দ র কর ন শকত

এছাড়াও পড়ুন:

আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ঢাকার আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চারটি কারখানার শ্রমিকেরা। কারখানাগুলো ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) অবস্থিত এবং একই মালিকানাধীন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সাড়ে তিন মাসের বেতন আটকে (বকেয়া) আছে। বারবার বেতন দিবে বইলা তারিখ দিলেও বেতন দেওয়া হয় নাই। খালি তারা সময় নেয়। ফ্যাক্টরি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করছে। বেতনও দেওয়া হয় না, ফ্যাক্টরিও খোলে না। বেতন ও বন্ধ ফ্যক্টরি খোলার জন্য বিক্ষোভ করলে পুলিশ টিয়ার শেল মারছে, গরম পানি মারছে।’

বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, ২২ অক্টোবর চারটি কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করার আগে তাঁদেরকে গত তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি। একাধিকবার বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলে দেওয়ার দাবিতে ডিইপিজেডের মূল ফটকের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা মূল ফটকের সামনে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান দিয়ে পানিয়ে ছিটিয়ে শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সকালে জড়ো হয়ে ডিইপিজেটের মূল ফটক অবরোধ করে রাখেন সাময়িক বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা। পরে বেপজা কর্তৃপক্ষ তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে গেলে শ্রমিকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বাধ্য হয়ে জলকামান দিয়ে পানিয়ে ছিটিয়ে তাঁদেরকে সরিয়ে দিতে হয়। পরে শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করলে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাঁদের সড়ক থেকে সরাতে হয়েছে।

ডিইপিজেডের কর্মকর্তারা জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি কারখানা গোল্ডটেক্স লিমিটেডের মালিকানাধীন। এর মধ্যে দুটি গার্মেন্ট ও দুটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা, আর্থিক সংকটের কারণে বন্দরে কাঁচামাল আটকে থাকা, ব্যাংকের সহায়তা না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ডিইপিজেড নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সাউথ চায়না ব্লিচিং অ্যান্ড ডায়িং ফ্যাক্টরি লিমিটেড, গোল্ডটেক্স লিমিটেড, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস ও এক্টর স্পোর্টিং লিমিটেড সাময়িকভাবে বন্ধ। এ চারটি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে এ তিন কারখানার এক মাসের বেসিক বেতন পরিশোধ থাকায় মূলত আড়াই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া এক্টর স্পোর্টিং লিমিটেডের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত সভা করে এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানানো হচ্ছে।
শরীফুল ইসলাম বলেন, বন্ধ কারখানাগুলো চালুর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্তৃপক্ষ। যদি তাঁরা ব্যর্থ হন তবে নির্দিষ্ট সময় পর সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লকডাউন’ ঠেকাতে কঠোর সরকার, সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান: স্বরাষ্ট্র উপদে
  • ট্রাইব্যুনাল ফেস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না: প্রসিকিউটর
  • রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপ
  • ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সতর্ক পুলিশ
  • ঢাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
  • আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ