‘ঠান্ডায় জমে’ ভূমধ্যসাগরে দুজনের মৃত্যু, ২১ দিন পর খবর পেল পরিবার
Published: 12th, November 2025 GMT
অবৈধভাবে ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় মাদারীপুরের দুই ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পরিবার। স্বজনেরা জানান, তাঁরা ২১ দিন আগে মারা গেলেও গতকাল মঙ্গলবার রাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চর বাজিতপুর এলাকার জাফর ব্যাপারী (৪০) ও সিরাজুল হাওলাদার (৩৫)। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে তাঁরা ১ সেপ্টেম্বর বাড়ি ছাড়েন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও মৃত দুই ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ঢাকা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান জাফর ব্যাপারী ও সিরাজুল হাওলাদার। লিবিয়ার উপকূল থেকে ইতালি যেতে গত ১৪ অক্টোবর ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় ওঠেন জাফর-সিরাজুলসহ অর্ধশত ব্যক্তি। ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি এলাকায় যাওয়ার পর নৌকার তেল শেষ হয়ে যায়। পরে সাগরে ভাসতে থাকে নৌকাটি। এক সপ্তাহ পর ২১ অক্টোবর তীব্র শীতে ঠান্ডায় জমে সাগরেই জাফর, সিরাজুলসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি দালাল চক্র গোপন রাখলেও গতকাল দুজনের মৃত্যুর খবর পান স্বজনেরা।
স্বজনদের অভিযোগ, মাদারীপুর সদরের চর বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য লোকমান সরদার নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওই দুজনের পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নেওয়ার আগে তাঁদের জাহাজে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের ছোট্ট একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠানো হয়। দুজনের মৃত্যুর পর গা–ঢাকা দেন লোকমান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান সরদার মুঠোফোনে দাবি করেন, তিনি মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত নন। ওই দুই যুবকের মৃত্যুর বিষয়েও তিনি কিছুই জানেন না।
লোকমানের ভাবি ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাশুর কোনো দালাল নন। তাঁর দুই ছেলে ইতালি যাওয়ার পর এলাকার অনেকেই তাঁর কাছে আসেন। এতে তাঁর কোনো দোষ নেই। অন্য এক বড় দালাল আছে, তিনিই সব জানেন। তাঁর পরিচয় আমরা জানি না। তবে লোকমান ভাই জানেন।’
সিরাজুল হাওলাদার ও জাফর ব্যাপারী (ডানে).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন র ম ত য দ জন র ল কম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বসতঘরের ঋণ শোধের আগেই চলে গেলেন বাসচালক জুলহাস মিয়া
বছরখানেক আগে মায়ের কেনা একখণ্ড জমিতে নতুন বাড়ি করেন জুলহাস মিয়া (৩০)। এ জন্য তিনটি এনজিও থেকে তিন লাখ ও স্বজনদের কাছ থেকে আরও তিন লাখ টাকা ধার করেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। এর আগেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে এই চালকের।
জুলহাসের এমন মৃত্যু শোকের সঙ্গে দুর্ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ঋণ। বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাঁর মা সাজেদা আক্তার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার এই ঋণ এহন কেরা বহন করব গো। আনহেগো (আপনাদের) কাছে বিচার চাই গো।’
আরও পড়ুনভিডিও ফুটেজে দেখা গেল পেট্রল ঢেলে আগুন দিলেন ৩ ব্যক্তি২ ঘণ্টা আগেজুলহাস মিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের আবদুল বারেক ও সাজেদা আক্তার দম্পতির ছেলে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে ফুলবাড়িয়া-কেশরগঞ্জ সড়কের ভালুকজান এলাকায় দুর্বৃত্তদের আগুনে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই সময় তিনি আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাসটির ভেতরে থাকা যাত্রী মা ও ছেলে ওই সময় দগ্ধ হন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামে ফসলি জমির মাঝে জুলহাস মিয়ার বাড়ি। কাছে যেতেই মা ও স্বজনদের আহাজারি ভেসে আসতে থাকে। আজ দুপুরে বাড়িটিতে প্রবেশ করে দেখা গেল, ঘরের ভেতরে চিৎকার করে কান্না করছেন তাঁর মা সাজেদা আক্তার ও ছোট বোন ময়না আক্তার। আশপাশের মানুষ ও স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
জুলহাস মিয়া