দুনিয়ার প্রতিটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যেন আমাদের ভবিষ্যতের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যায়। কয়েক বছর আগেও ৪জির অভিজ্ঞতা ছিল এক বিস্ময়। তারপর এল ৫জি, যা আমাদের যোগাযোগকে দ্রুততর, বাস্তবসম্মত ও আরও সম্ভাবনাময় করে তুলল। অথচ যেখানে ৫জির যাত্রা এখনো পূর্ণতা পায়নি, বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নীতিনির্ধারকেরা এরই মধ্যে নজর দিয়েছেন আরও দূরে-৬জির দিকে।

কেন ৬জি বা সিক্স–জি?

প্রশ্নটা এখানেই; যেখানে বিশ্বের বড় অংশ এখনো ৫জি নেটওয়ার্কের গতি বা স্থিতিশীলতাও পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছে না, সেখানে ৬জির কী প্রয়োজন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজন শুধু গতি বাড়ানো নয়; মানুষের জীবনযাপন, কর্মপদ্ধতি ও শিল্প খাতকে আরও গভীরভাবে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে যুক্ত করা। ৬জি সেই আন্তসংযোগকে আরও বাস্তব, নির্ভুল ও গতিময় করে তুলবে।

ভাবুন তো, একটি ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হলোগ্রাফিক আকারে উপস্থিত, শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে তাঁকে ঘিরে বসে আছে। কিংবা চিকিৎসায় জরুরি অবস্থায় কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বসে লাইভ থ্রি–ডি চিত্র দেখে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এমন দৃশ্য আর কল্পনা নয়; ৬জি এসে এমন দৃশ্যকে বাস্তবে পরিণত হতে পারে।

গতির সীমা ছাড়িয়ে অভিজ্ঞতার জগতে

৬জির গতি নিয়ে আলোচনাই সবচেয়ে বেশি। প্রতি সেকেন্ডে কয়েক টেরাবিট। ‘প্রতি সেকেন্ড’ শব্দটা শুনলেই ভবিষ্যতের একটা ঝলক পাওয়া যায়। কিন্তু গতি নয়, এর আসল আকর্ষণ হবে অভিজ্ঞতা। টেরা–স্তরের ব্যান্ডউইডথ, ন্যানোসেকেন্ড ল্যাটেন্সি ও শক্তিশালী ডেটা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা ৬জিকে এমন এক বাস্তবতায় নিয়ে যাবে, যেখানে বাস্তব ও ভার্চ্যুয়ালের সীমারেখা প্রায় মুছে যাবে। সংগীত অনুষ্ঠান, খেলাধুলা বা বড় কোনো আয়োজন—সবই দেখা যাবে ইন্টারঅ্যাকটিভ হলোগ্রাফিক আকারে। দর্শক যেন মিলনায়তনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পুরো পরিবেশটাকে অনুভব করতে পারবেন।

নেটওয়ার্ক নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে

৬জির আরেকটি নতুন মাত্রা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–চালিত নেটওয়ার্ক। এখনকার নেটওয়ার্কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা বিশ্লেষণ, ব্যান্ডউইডথ বণ্টন—এসব কাজ মূলত মানুষের তত্ত্বাবধানে হয়। কিন্তু ৬জি–তে নেটওয়ার্ক নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

কোন এলাকায় ডেটার চাপ বেশি, কোথায় নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ছে, কোন ব্যবহারকারী বেশি ব্যান্ডউইডথ চাইছেন, নেটওয়ার্ক নিজেই এসব বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেবে। এতে দক্ষতা বাড়বে, সময় বাঁচবে এবং নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

সব সুবিধার সঙ্গে আছে চ্যালেঞ্জ

৬জির সম্ভাবনা যত উজ্জ্বল, বাস্তবায়ন ততই কঠিন। বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবকাঠামো। টেরাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করতে হলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অসংখ্য ছোট ছোট সেল স্থাপন করতে হবে। বিনিয়োগ লাগবে বড়, বিদ্যুতের খরচও বাড়বে। সাইবার নিরাপত্তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডিজিটাল বৈষম্য। উন্নত দেশগুলো দ্রুত ৬জিতে প্রবেশ করলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো পেছনে পড়ে যেতে পারে। প্রযুক্তির মূলধারায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তাই সমান না–ও হতে পারে।

বাংলাদেশ: সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি

বাংলাদেশে ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু হয়েছে। ৬জির গবেষণা বা নীতিমালা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’–এর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে হলে উন্নত যোগাযোগপ্রযুক্তি অগ্রসর ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন থেকেই গবেষণায় বিনিয়োগ, তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়–শিল্প সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তাকাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে ৬জির মতো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

৬জি প্রযুক্তি শুধু দ্রুত ইন্টারনেটের প্রতিশ্রুতি নয়; এটি ভবিষ্যৎ সমাজের রূপকল্প। সংযোগ হবে আরও জীবন্ত, আরও বাস্তব, আরও স্বয়ংক্রিয়। আমরা যেখানে আজ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল, আগামী দশকে সেই নির্ভরতা আরও গভীর হবে—কাজ, শিক্ষা, বিনোদন থেকে শুরু করে স্মার্ট শহর ও শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। ৫জি থেকে ৬জির যাত্রা শুধু প্রযুক্তির বিবর্তন নয়, মানব–অভিজ্ঞতার নতুন দিগন্ত।

সাদিয়া ইসলাম ইরা: সেক্রেটারি, ইরা টেক লিমিটেড, আয়ারল্যান্ডের গ্রিফিথ কলেজ থেকে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক

এছাড়াও পড়ুন:

৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, অপহরণের পর মিলল শিক্ষার্থীর মরদেহ

রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে এক কলেজছাত্রকে অপহণের পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ছাত্রের নাম সুদীপ্ত রায়। সে ভাটারার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। 

গতকাল তুরাগের দিয়াবাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে, গত ৭ নভেম্বর ভাটারার শহীদ আব্দুল আজিজ সড়কে অবস্থিত কলেজ হোস্টেল থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ওইদিন রাতেই সুদীপ্তের পরিবারকে ফোন দিকে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরদিন ৮ নভেম্বর এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের বাবা হিমাংশু কুমার রায়।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় ময়মনসিংহ থেকে অভিযুক্ত যোবায়ের ও আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের একজন সুদীপ্তের এলাকার আরেকজনের বাড়ি নেত্রকোনায়। একটি আইফোন ছিনিয়ে নিতে সুদীপ্তকে অপহরণ করে তারা। আইফোন না দেওয়ায় ঘটনার দিন রাতেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনই পরিকল্পনা করে সুদীপ্তকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

জানা গেছে, সুদীপ্তের বাড়ি দিনাজপুরে। গ্রেপ্তার দুজনই ভাটারা এলাকায় থাকতো এবং সুদীপ্তের পূব পরিচিত ছিল।

নিহতের বাবা হিমাংশু কুমার রায় অভিযোগ করেন, ভাটারার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জগন্নাথপুর শাখায় একাদশ শ্রেণিতে পড়তো সুদীপ্ত। শহীদ আব্দুল আজিজ সড়কে কলেজের হোস্টেলে থাকতো। ৭ নভেম্বর বিকাল ৫টার দিকে মাকে ফোন করে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হেস্টেল থেকে বের হয় সুদীপ্ত। রাত ১০টার দিকে সুদীপ্ত তার মাকে ফোনে জানায়, সে মিরপুরে আছে এবং রাতেই হোস্টেলে ফিরবে। রাতে অজ্ঞাতনামা একজন সুদীপ্তের ফোন থেকে তার মাকে ফোন দেয়। অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায়, সুদীপ্ত তাদের জিম্মায় রয়েছে এবং ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই টাকা ৮ নভেম্বর বিকেল ২টার মধ্যে তাদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে। টাকা নিয়ে না আসলে সুদীপ্ততে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে পুলিশসহ অন্যান্য যে কাউকে জানানো যাবে না বলেও হুমকি দেয়। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুদীপ্তকে মেরে ফেলবে বলে ফোনটি কেটে দেয়। এরপর থেকে সুদীপ্তের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ৮ নভেম্বর সকালে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দেয় এবং সুদীপ্তের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। সুদীপ্তকে আমি পুরো ঘটনা ও মুক্তিপণের কথা জানাই। কিন্তু আমার ছেলে এসব অস্বীকার করে এবং বলে, সে হোস্টেলে যাচ্ছে। এরপর থেকে সেই নম্বরটিও বন্ধ পাই। বেলা আড়াইটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং টাকা রেডি রাখার কথা জানিয়ে আবার ১ ঘণ্টা পর ফোন দিবে বলে। এরপর সেটিও বন্ধ পাই।

নিহতের ভগ্নিপতি অনিল সেন বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ ও যোবায়ের সুদীপ্তকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ির একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। ঘটনার দিন রাতেই তার মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার পর আইফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। না দেওয়ায় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে টয়লেটের মধ্যে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে তারা আইফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাদেরকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।

বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এইচ এম শফিকুর রহমান বলেন, “সুদীপ্তকে অপহরণের পর মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাতেই দিয়াবাড়িতে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। সেখানেই সুদীপ্ততে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।”

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে-স্কেলের কাঠামো নির্ধারণ করবে: অর্থ উপদে
  • অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের
  • ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, অপহরণের পর মিলল শিক্ষার্থীর মরদেহ
  • দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু বৃহস্পতিবার
  • চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ চালু করবে ওপেনএআই
  • স্থলমাইনে সেনা আহত, কম্বোডিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা থাইল্যান্ডের
  • তিন দফা দাবিতে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে