Prothomalo:
2025-11-12@14:07:33 GMT

নিউমোনিয়া ঠেকাতে যা করবেন

Published: 12th, November 2025 GMT

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর ২৫ লাখের বেশি মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যার অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। বাংলাদেশে এখনো শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।

নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি সংক্রমণ। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের মাধ্যমে হয়। সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের ছোট বায়ুথলিগুলো তরল বা পুঁজে ভরে যায়, ফলে অক্সিজেন গ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয়। নিউমোনিয়া শুধু একটি রোগ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিফলন। টিকাদান, সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সচেতনতা—এই তিনটি উপায়ে রয়েছে প্রতিরোধের চাবিকাঠি।

কীভাবে ছড়ায়, কারা ঝুঁকিতে

বাতাসে থাকা জীবাণু নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করলে এর সংক্রমণ ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আর দূষিত বস্তু বা হাতের মাধ্যমে মুখ-নাক স্পর্শ করলেও হয়।

পাঁচ বছরের কম বয়সী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণেরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। এ ছাড়া দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ব্যক্তি, ধূমপায়ী ও অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তি, দূষিত পরিবেশে বসবাসকারী মানুষদেরও নিউমোনিয়া বেশি হতে পারে।

উপসর্গ ও চিকিৎসা

নিউমোনিয়ার উপসর্গ বয়স ও সংক্রমণের ধরনভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত হঠাৎ জ্বর ও কাঁপুনি, কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা বা শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ায় অনীহা, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি বা মানসিক অস্থিরতা পর্যন্ত হতে পারে।

নিউমোনিয়ায় গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের। চিকিৎসা নির্ভর করে সংক্রমণের কারণের ওপর। ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।

রোগের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে সেটি মুখে খাওয়ার বা ইনজেকশন হতে পারে। ভাইরাল নিউমোনিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। বিশ্রাম, তরল খাবার ও উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করলে এটি ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে পানিশূন্যতা থাকলে শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে।

আরও পড়ুনশীতে মধু খেলে যেসব উপকার পাবেন১১ নভেম্বর ২০২৫প্রতিরোধের উপায়

নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। এটি প্রতিরোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের একটি টিকা গ্রহণ। নিউমোকোক্কাল টিকা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কার্যকর। বিশেষত, যাঁরা ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের অবশ্যই নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুষম খাদ্য গ্রহণে নিউমোনিয়াসহ সব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। হাত নিয়মিত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে, যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি, সেখানে মাস্ক পরে যেতে হবে। করতে হবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার অভ্যাস। ধূমপান পরিহার করতে হবে।

আরও পড়ুনশিশুর নিউমোনিয়া১২ নভেম্বর ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক রমণ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফুসফুস ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব

ফুসফুস ক্যানসার—শুনলেই ভয় লাগে। অথচ অনেক সময় এটি নীরবে শরীরের ভেতর বেড়ে ওঠে কোনো বড় উপসর্গ ছাড়াই। যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফুসফুস ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।

এসকেএফ অনকোলোজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন ডা. তুষার দাস।

নভেম্বর মাস ‘ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতার মাস’। ফুসফুস ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনার এ পর্বে অতিথি ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. তুষার দাস। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন।

এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘ফুসফুস ক্যানসার বার্তা’। বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. তুষার দাস। পর্বটি শনিবার (৮ নভেম্বর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

ফুসফুস ক্যানসারের ধরন

ফুসফুস ক্যানসার মূলত দুই ধরনের বলে উল্লেখ করেন ডা. তুষার। এই দুই ধরন হলো—প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। তিনি বলেন, প্রাইমারি ক্যানসার ফুসফুসের নিজস্ব কোষ থেকে উৎপন্ন হয় আর সেকেন্ডারি ক্যানসার শরীরের অন্য অংশ থেকে ছড়িয়ে ফুসফুসে আসে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি আবার দুভাগে ভাগ করা হয়—নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার এবং স্মল সেল লাং ক্যানসার। প্রথম ধরনের রোগী বেশি দেখা যায়।

ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ কী

ধূমপান না করলেও কি ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. তুষার দাস বলেন, অনেকের ধারণা, কেবল ধূমপায়ী হলেই ফুসফুস ক্যানসার হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ধূমপান অবশ্যই প্রধান কারণ, তবে বায়ুদূষণ, পরোক্ষ ধূমপান এবং জিনগত বিষয়ও বড় ভূমিকা রাখে। পরোক্ষ ধূমপান মানে হচ্ছে অন্যের ধোঁয়া নিজের অজান্তে শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা।

রান্নাঘরের কয়লা বা লাকড়ির ধোঁয়া থেকে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বিষয়ে উপস্থাপক জানতে চাইলে ডা. তুষার দাস বলেন, রান্নাঘরের কয়লা বা লাকড়ির ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে যে নারীরা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে এই ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করেন, তাঁদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ধোঁয়ার মধ্যে এমন সব রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের কোষে ক্ষতি করে। শুধু ক্যানসার নয়, এই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা ফুসফুসের সংক্রমণও হতে পারে।

তুষার দাস বলেন, ফুসফুস ক্যানসারের পেছনে কিছু জিন মিউটেশন ভূমিকা রাখে। তাই যেসব পরিবারের কারও এ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স ৩০ পেরোলেই নিয়মিত স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। বাংলাদেশে বেশির ভাগ রোগী দেরিতে অর্থাৎ স্টেজ-৩ বা স্টেজ-৪ পর্যায়ে হাসপাতালে আসেন। এর মূল কারণ হলো অসচেতনতা, ভুল চিকিৎসা কিংবা উপসর্গকে সাধারণ ঠান্ডা-কাশি ভেবে অবহেলা করা।

কাশির সঙ্গে রক্ত এলে দ্রুত ডাক্তার দেখান

ডা. তুষার দাস বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার পরামর্শ হলো, যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকে, বিশেষ করে কাশির সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’

সাধারণ কাশি আর ফুসফুস ক্যানসারের কাশির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে ডা. তুষার দাস বলেন, পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম, সচেতন থাকলেই তা বোঝা সম্ভব। সাধারণ সর্দি-কাশি ভাইরাস ও অ্যালার্জিজনিত কারণে হয়ে থাকে এবং সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়।

ডা. তুষার বলেন, যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পরও না কমে, কিংবা কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে তা আর হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এ সময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা যেমন এক্স-রে বা লো-ডোজ সিটি স্ক্যান করানো উচিত। কারণ, ফুসফুস ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. তুষার দাস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ফুসফুস ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব