বিদেশে থাকা নিজেদের একমাত্র সামরিক ঘাঁটি কেন নীরবে ছাড়ল ভারত
Published: 12th, November 2025 GMT
তাজিকিস্তানের আইনি বিমানঘাঁটি থেকে তিন বছর ধরে নীরবে একটু একটু করে নিজেদের সেনাসদস্য ও সামরিক সরঞ্জাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। খবরটি এত দিন গোপনই ছিল। মাত্র গত মাসে জানা যায়, মধ্য এশিয়ার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই বিমানঘাঁটিতে ভারতের সামরিক কার্যক্রম আর পরিচালিত হচ্ছে না।
দুই দশকের বেশি সময় আগে ভারত ওই বিমানঘাঁটি তৈরি করেছিল এবং এটি পরিচালনা করত। এটি ছিল বিদেশের মাটিতে ভারতের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিমানঘাঁটি।
শুধু বিদেশে পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে নয়; বরং মধ্য এশিয়ায় ভারতের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি, বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানের ওপর কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এনে দিয়েছিল এই ঘাঁটি।
এ ঘাঁটির মাধ্যমে রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিধর দেশের প্রভাববলয়ে থাকা অঞ্চলের ওপরও নিজেদের প্রভাব দেখাতে পারত ভারত।
আইনি ঘাঁটি থেকে ভারতের সরে আসার ফলে দেশটির ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক—
আইনি বিমানঘাঁটি
তাজিকিস্তানে একটি কৌশলগত স্থানে অবস্থিত এই বিমানঘাঁটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের লড়াইয়ের সময় তাদের সহায়তা করতে ভারত প্রথম আইনি বিমানঘাঁটিতে সেনা মোতায়েন করেছিল।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আবার কাবুল দখল করলে ভারত এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে এনেছিল।
এটি আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আফগানিস্তানের এই করিডর পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে।
এই বিমানঘাঁটি মূলত তৈরি করা শুরু হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত আমলে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেটি করুণ দশায় পড়ে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারত সেটির সংস্কার করেছে। এ জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় আট কোটি ডলার।
এই বিমানঘাঁটি মূলত তৈরি করা শুরু হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত আমলে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর সেটি করুণ দশায় পড়ে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারত সেটির সংস্কার করেছে। এ জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার।সংস্কারের মধ্যে ছিল ৩ হাজার ২০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে মেরামত ও উন্নয়ন। এ ছাড়া এই ঘাঁটিকে যুদ্ধবিমান ও ভারী মালবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামার উপযোগী করে গড়ে তোলা, উড়োজাহাজ রাখার হ্যাঙ্গার, জ্বালানি ডিপো এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছিল।
২০০২ সালের তাজিক সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এসব করা হয়েছিল। বিমানঘাঁটির অধিকাংশ সংস্কারকাজ করেছিল দ্য বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন।
একসময় ভারত সেখানে প্রায় ২০০ সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছিল। তাঁদের সঙ্গে ছিল কয়েকটি সুখোই–৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান।
তাজিক সরকারের সঙ্গে করা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালে। তার পর থেকে ভারত ধীরে ধীরে বিমানঘাঁটি থেকে তাদের লোকজন ও সামগ্রী প্রত্যাহার করা শুরু করে।
আরও পড়ুনবাগরামে কী আছে, কেন এই বিমানঘাঁটি ফিরে পেতে চান ট্রাম্প২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫‘একসময় ভারত সেখানে প্রায় ২০০ জন সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছিল। তাদের সঙ্গে ছিল কয়েকটি সুখোই–৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান।’বিমানঘাঁটি ছাড়ার কারণ
ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, বিমানঘাঁটির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য তাজিকিস্তানের সঙ্গে তাদের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছিল। কয়েক বছর ধরে এই চুক্তি কার্যকর ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালে অবকাঠামো তাজিকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভারত বুঝতে পারছিল, রাশিয়া ও চীনের চাপের কারণে তাজিকিস্তান সরকার বিমানঘাঁটি নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে অনিচ্ছুক।
এ কারণে ভারত সেখান থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নিতে থাকে। তাদের এ প্রত্যাহার কার্যক্রম নীরবে হয়েছে। মাত্র গত মাসে এ নিয়ে জানাজানি হয়।
আরও পড়ুন‘বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে না দিলে দেখবেন, আমি কী করি’, তালেবানকে হুমকি ট্রাম্পের২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ম্যাপে ওয়াখান করিডর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন হ র কর হয় ছ ল কর ছ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এফএম রেডিও নীতিমালা লঙ্ঘন করছে কি না দেখতে রেগুলেটরি কমিটি
বেসরকারি মালিকানাধীন বেতারকেন্দ্র (এফএম রেডিও) স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না-সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ‘জাতীয় রেগুলেটরি কমিটি’ গঠন করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
‘বেসরকারি মালিকানায় এফএম বেতারকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০২২’ অনুযায়ী এ কমিটি গঠন করে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
দিল্লির বোমা হামলায় বাংলাদেশকে জড়ানো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সাংবাদিক শামছুলের বিরুদ্ধে করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জিডি প্রত্যাহার দাবি
ছয় সদস্যের এ কমিটিরি সভাপতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সম্প্রচার) কমিটির সদস্য সচিব।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন-আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রুমেল, শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক ড্যানিয়েল আফজালুর রহমান, রেডিও ফূর্তির উপ-মহাব্যবস্থাপক রাহাত মাহমুদ খান ও বিআরটিসির একজন প্রতিনিধি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি মালিকানায় এফ এম বেতারকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০২২’ এর অনুচ্ছেদ ১৮(৫), (৬) ও (৭) অনুসারে ‘জাতীয় রেগুলেটরি কমিটি’ গঠন করা হলো।
কমিটি বেসরকারি মালিকানাধীন বেতার চ্যানেল স্থাপনে কারিগরি উপ-কমিটি থেকে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে সরকারের অনুমোদনের জন্য পেশ করবে।
সম্প্রচার সংক্রান্ত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা করা এবং বেসরকারি মালিকানাধীন বেতারকেন্দ্র পরিচালনায় সময়োপযোগী সংশোধনী সম্পর্কে পরামর্শ দেবে এ কমিটি।
এছাড়া কারিগরি উপ-কমিটি এবং মনিটরিং কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বেসরকারি মালিকানাধীন বেতারকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রেগুলেটরি কমিটি।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ