সংকেতটা ক্রমে জোরালো হচ্ছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান। তিনি তা এমনভাবে করতে চান, যাতে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে কোনো যুদ্ধ শুরু না হয়।

এ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ সীমিত রয়েছে এক ডজনের বেশি নৌকায় হামলার মধ্যে। হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, এসব নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দশে মাদক বহন করা হচ্ছিল। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এ মাদক আমাদের গোটা দেশের পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে।’ তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘এর মানে কি যুদ্ধ?’ উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার তা মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেছে।’ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় অন্তত ৬৯ জন নিহত হয়েছেন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। একটি বিমানবাহী রণতরিসহ সেনাসদস্যরা ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে পারে। গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন গোপনে সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে।

আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা সিরিয়া নয়, মাদুরো আসাদ নন২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ মাদক পাচার হয়ে আসে, তাতে ভেনেজুয়েলার ভূমিকা নগণ্য। এরপরও কারাকাসের প্রতি ওয়াশিংটনের এমন কঠোর অবস্থানের কারণ হলো ট্রাম্পের ‘মাগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) আন্দোলনের সমর্থক গোষ্ঠী ও লাতিন আমেরিকান পৃষ্ঠপোষকেরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার মাদুরোর মতো বামপন্থী নেতাদের প্রতি খুব নরম আচরণ করছে। ২০১৩ সালে হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর থেকে মাদুরো ক্ষমতায় আছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে।

এসব কারণেই ভেনেজুয়ালার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এ চাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মহলকে এটি মানতে বাধ্য করা যে এই শক্তিশালী নেতার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার মূল্য অনেক বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সংঘাত এড়াতে তাঁকে ভেতর থেকেই সরিয়ে দেওয়া উচিত। এ কৌশল যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি মাদুরোকেই লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতর থেকে মাদুরোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে আলোচনার পথ খুলে যেতে পারে। সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে আসা কোনো নতুন প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করতে পারেন।

আরও পড়ুনভেনেজুয়েলায় মাদুরো টিকবেন কি?১২ জানুয়ারি ২০১৯

সেনাবাহিনীর ভেতরে বিরোধী দলের প্রতি গভীর অবিশ্বাস রয়েছে, সে কারণে কম সম্ভাবনাময় আরেকটি দৃশ্যপটের কথাও চিন্তা করা যেতে। সেনাবাহিনীর কিছু অংশ বিরোধী নেতা মারিয়া মাচাদো ও এদমুন্দো গোনসালেসের পাশে দাঁড়াতে পারে অথবা নতুন নির্বাচনের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

কিন্তু মাদুরোর লোকদের সঙ্গে আপসরফা করাটাই যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র উপায়। শাসক দল ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টি অব ভেনেজুয়েলা দেশটির সব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। মাদুরোকে আলাদা করতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী এমন নিশ্চয়তা দাবি করবে, যাতে তাদের নিরাপত্তা, দেশের ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ ও সম্পদে প্রবেশগম্যতার অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

ভেনেজুয়েলার পদস্থ সামরিক নেতৃত্ব জানেন, মাদুরো কিউবার গোয়েন্দাব্যবস্থাকে তাঁর নিজ দেশের জেনারেলদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহার করেন। ফলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেকোনো পদেক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টার মানেই মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি। ফলে তাঁদের রাজি করাতে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মাদুরো সরকারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করতে পারে, যাতে অন্যদের ওপর চাপ তৈরি করা যায়।

আরও পড়ুনডেমোক্র্যাটরা সাবধান! ট্রাম্প প্রতিশোধের ছক কষছেন০৯ নভেম্বর ২০২৫

ট্রাম্প জানেন, মাদুরোকে সরাতে ব্যর্থ হলে সেটি তাঁর জন্য লজ্জার কারণ হবে। আর যদি মাদুরোকে সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপে সরানো হয়, ভেনেজুয়েলার ভেতরের পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা তিনি সহজে নিতে চাইবেন না।

এটি ধরে নেওয়া হচ্ছে যে মার্কিন সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলে ভেনেজুয়েলায় শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের গভীর অনাস্থা আছে। ভেনেজুয়েলায় গৃহযুদ্ধ হলে তাতে যে রক্তগঙ্গা বইবে, তার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করা হবে। সিনেটে যেহেতু ট্রাম্পের যুদ্ধের ক্ষমতা সীমিত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই নিতে হবে। এখন পর্যন্ত তিনি এমন কৌশল বেছে নিতে পারেননি, যা তাঁকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ফল এনে দেবে।

ইয়ান ব্রেমার টাইম–এর পররাষ্ট্রবিষয়ক কলাম লেখক

টাইম থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র ভ তর ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি, ‘ষড়যন্ত্র’ বললেন শিক্ষক

নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ওই শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। তবে এসব অভিযোগকে ‘বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে দাবি করেছেন ওই শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য করে আসছেন। পাশাপাশি অনৈতিক প্রস্তাব, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন।

বিভাগটির তৃতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘উনি (শিক্ষক) নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। যেমন তোমার কোমর তো ভালো দোলে, রাতের রানী, রাতের গার্ড ইত্যাদি। আমাদের প্রথম ব্যাচ থেকে সপ্তম ব্যাচ পর্যন্ত অনেকেই তাঁর এমন আচরণের শিকার হয়েছেন। আগের এক ঘটনায় তিনি শিক্ষার্থীদের মারতে গিয়েছিলেন, সেটির ভিডিও আছে।’

ওই শিক্ষার্থীর দাবি, কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নম্বর কমিয়ে দেন ওই শিক্ষক। এমনকি তাঁর তাকানোর ভঙ্গিতেও ভয় লাগে। তাঁরা শ্রেণিকক্ষে যেতে এখন ভয় পাচ্ছেন।

মেহেদী হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মারতে যাওয়া ও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

তবে এসব অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে বিষয়গুলো অস্বীকার করেছেন ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘ঘটনার শুরু আমাদের প্রথম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে। এক ট্যুরে ওই শিক্ষার্থী মেয়েদের রুমে কয়েকজন ছেলে নিয়ে মাদক সেবন করছিল। আমি গিয়ে বাধা দিই। সেই ঘটনার পর থেকে সে আমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগের বাকি শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব করছে।’

শিক্ষার্থীদের মারমুখী হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি শুধু বলেছিলাম, যদি আমার স্ত্রীর কিছু হয়, তাহলে মামলা করব। এর বাইরে কিছু নয়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ফাঁসাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’
  • দস্তয়েভস্কি: মানব-অস্তিত্বের নিখুঁত দ্রষ্টা
  • জাতীয় নির্বাচনে দল ও প্রার্থীরা পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাইলেন রাকসুর প্রতিনিধিরা
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রারের অপসারণ চায় রাকসু
  • সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা
  • যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি, ‘ষড়যন্ত্র’ বললেন শিক্ষক
  • রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় আম্মার বললেন, ‘আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস’
  • ন্যূনতম ঐক্য না হলে নির্বাচন শঙ্কায় পড়বে