নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান
Published: 12th, November 2025 GMT
চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনকে দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো.
আরো পড়ুন:
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন পেছাল
আমি মনে করি না, অর্থনৈতিক স্যাংশন আসবে: এফবিসিসিআই সভাপতি
সভায় এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মো. আবদুর রহিম খান বলেন, “সরকারের একার পক্ষে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত এবং গণমাধ্যমকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।”
সভার শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজার সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআই এর মহাসচিব মো. আলমগীর। প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময় দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ, নিয়ন্ত্রণের উপায়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে চিনি ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে আগামী রমজানে এসব পণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
মিল মালিকদের প্রতিনিধিরা জানান, এ বছর চিনির বাজার অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো। চিনির দাম কম আন্তর্জাতিক বাজারেও। তবে প্রতি বছর শীতকালে কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এমন হলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা জানান তারা।
তবে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন এবং পামওয়েল। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে আগামী রমজানে তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
বাজার স্বাভাবিক রাখতে কিছু কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক পুনর্বিবেচনার কথাও জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও ভোজ্যতেল আমদানির পরামর্শ দেন তারা।
রমজানকে সামনে রেখে প্রতি বছরই নিত্যপণ্যের বাজার তদারকি জোরদার করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিকভাবে হয়রানি করা হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এফবিসিসিআই প্রশাসকের সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা।
এফবিসিসিআই এর প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান জানান, সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযানের উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা প্রদান। কাউকে অযথা হয়রানি করা তাদের লক্ষ্য নয়।
এ সময় ব্যবসায়ীদেরও সরকারের আইন-কানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করে ব্যবসা করার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ি ও প্রতিনিধিদের মূল্যবান পরামর্শ এবং মতামতগুলো দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান এফবিসিসিআই এর প্রশাসক।
ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত যপণ য র ব জ র স ব ভ ব ক র খত ব যবস য় দ র সরক র র সরবর হ আহ ব ন
এছাড়াও পড়ুন:
আদানিকে বকেয়ার ৩ কোটি ডলার পরিশোধ, আরও ৭ কোটি দেবে এ মাসেই
ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া শোধে উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার তিন কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসে আদানিকে মোট ১০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হতে পারে। পিডিবির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, গতকাল সোমবার বিকেলে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আদানিকে তিন কোটি ডলার (১২২ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা) বিল শোধের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। আজ আদানির ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা স্থানান্তর করা হয়। এর আগে বকেয়া শোধে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছিল আদানি। তা না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দেয় তারা।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আদানির বকেয়া বিলের মধ্যে তিন কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর নতুন করে আদানির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে নির্মিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি বলছে, এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। পিডিবির তথ্য বলছে, চাহিদা কম থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে এখন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
আদানির জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আজ প্রথম আলোয় পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিলম্ব সুদসহ তাদের পাওনা ৩৫ কোটি ডলার, যা নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ নেই। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ধরে রাখতে তারা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়ে আদানির সঙ্গে পিডিবির বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। আদানি কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল করছে। পিডিবি বাজারদরে বিল পরিশোধ করছে। বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পেশাদার মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল আদানি। যদিও তাতে রাজি হয়নি পিডিবি। দেশের উচ্চ আদালতে আদানির চুক্তির বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা চলমান। আদালতের আদেশের পর করণীয় নির্ধারণ করবে পিডিবি।
গত ২৭ অক্টোবর পাঠানো আদানির চিঠিতে দাবি করা হয়, ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাওনা তাদের। এর মধ্যে ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওনা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। বিরোধের বাইরে থাকা এ পাওনা পরিশোধে পিডিবি ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার আছে আদানির। প্রসঙ্গত, বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। অবশ্য গত এপ্রিলে বকেয়ার প্রায় পুরোটা শোধ করে দিয়েছিল পিডিবি। এরপর গত কয়েক মাসে আবার বকেয়া জমেছে আদানির।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৩ সাল থেকে আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে সরকার। তখন থেকে আদানির বিল বকেয়া বাড়ছিল। তা বাড়তে বাড়তে ৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিল শোধে কয়েক দফা তাগাদা দেয় আদানি গ্রুপ। পিডিবির দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা গত মাসে জানিয়েছিলেন, গত জুনে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার বকেয়া শোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনকয়লার বাড়তি দাম ধরেই আদানির বকেয়া হিসাব, পরিশোধে শীর্ষ পর্যায়ে চিঠি১৯ অক্টোবর ২০২৫