মানুষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ইলা মিত্রকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছিল। তিনি যে সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাস করতেন, তা নিজের জীবনাচরণে পরিণত করেছিলেন। যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের জন্য, তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকব বলে আলোচকেরা মন্তব্য করেছেন।

আজ বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রর জন্মশতবর্ষ পালন’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এ মন্তব্য করেন। মহিলা পরিষদ তাদের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহিলা পরিষদের নেত্রীরা ইলা মিত্রের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তাঁর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র রানিমা প্রদর্শন করা হয়। সেখানে ইলা মিত্র এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, জীবনের যত নির্যাতন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করেছেন, এসব নিয়ে তাঁর কোনো আফসোস নেই। একটা বড় আদর্শের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো বড় কথা নয়; মানুষের জন্য কাজ করতে পারাই তাঁর জীবনের সার্থকতা।

আলোচনা পর্বে ইলা মিত্রের বলা ওই কথাগুলোই বারবার উদ্ধৃত ও ব্যাখ্যা করেছেন বক্তারা। বলেছেন কী কঠিন সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। অভিজাত পরিবারে জন্ম। কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন। তুখোড় ক্রীড়াবিদ। জমিদার বধূ। অথচ এসে থেকেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিভৃত গ্রামে। সাঁওতালদের আস্থা লাভের জন্য তাঁদের সঙ্গে বসবাস করেছেন।

নিজেরা করির প্রধান সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, ইলা মিত্র আক্ষরিক অর্থেই নিজের শ্রেণিগত অবস্থান ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। সত্তর দশকে তিনি যখন গ্রামে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তখন ইলা মিত্রের এই আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ঈষানী চক্রবর্তী বলেন, ইতিহাসে নাচোল, তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র অভিন্ন হয়ে আছেন। তিনি জীবনে যখন যে কাজই করেছেন, সেখানেই বিশিষ্টতার ছাপ রেখেছেন। ভালো ক্রীড়াবিদ, ভালো সংগঠক, ভালো শিক্ষক, রাজনীতিক—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত সাহসিকতাকে তিনি সমষ্টির মধ্যে সঞ্চারিত করতে পরেছিলেন। কৃষকের অধিকার, বিশেষত উত্তরবঙ্গের যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে তিনি সংগঠিত করেছিলেন, সেই সাঁওতালরা এখনো তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কাজেই তাঁর প্রাসঙ্গিকতা এখনো প্রবলভাবে রয়েছে।

তেভাগা আন্দোলনের সংগ্রামী ইলা মিত্রের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। মঞ্চে (বাঁ থেকে) ঈষানী চক্রবর্তী, মাখদুমা নার্গিস, খুশী কবির, সীমা মোসলেম ও আলমগীর হোসাইন। মহিলা পরিষদ মিলনায়তন, ঢাকা। ১২ নভেম্বর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত কর ছ ল অন ষ ঠ ন কর ছ ন র জন য ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের প্রতি গভীর আস্থা ছিল ইলা মিত্রের, ত্যাগ ছিল নিঃস্বার্থ

মানুষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ইলা মিত্রকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছিল। তিনি যে সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাস করতেন, তা নিজের জীবনাচরণে পরিণত করেছিলেন। যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের জন্য, তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকব বলে আলোচকেরা মন্তব্য করেছেন।

আজ বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রর জন্মশতবর্ষ পালন’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এ মন্তব্য করেন। মহিলা পরিষদ তাদের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহিলা পরিষদের নেত্রীরা ইলা মিত্রের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তাঁর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র রানিমা প্রদর্শন করা হয়। সেখানে ইলা মিত্র এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, জীবনের যত নির্যাতন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করেছেন, এসব নিয়ে তাঁর কোনো আফসোস নেই। একটা বড় আদর্শের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো বড় কথা নয়; মানুষের জন্য কাজ করতে পারাই তাঁর জীবনের সার্থকতা।

আলোচনা পর্বে ইলা মিত্রের বলা ওই কথাগুলোই বারবার উদ্ধৃত ও ব্যাখ্যা করেছেন বক্তারা। বলেছেন কী কঠিন সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। অভিজাত পরিবারে জন্ম। কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন। তুখোড় ক্রীড়াবিদ। জমিদার বধূ। অথচ এসে থেকেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিভৃত গ্রামে। সাঁওতালদের আস্থা লাভের জন্য তাঁদের সঙ্গে বসবাস করেছেন।

নিজেরা করির প্রধান সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, ইলা মিত্র আক্ষরিক অর্থেই নিজের শ্রেণিগত অবস্থান ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। সত্তর দশকে তিনি যখন গ্রামে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তখন ইলা মিত্রের এই আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ঈষানী চক্রবর্তী বলেন, ইতিহাসে নাচোল, তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র অভিন্ন হয়ে আছেন। তিনি জীবনে যখন যে কাজই করেছেন, সেখানেই বিশিষ্টতার ছাপ রেখেছেন। ভালো ক্রীড়াবিদ, ভালো সংগঠক, ভালো শিক্ষক, রাজনীতিক—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত সাহসিকতাকে তিনি সমষ্টির মধ্যে সঞ্চারিত করতে পরেছিলেন। কৃষকের অধিকার, বিশেষত উত্তরবঙ্গের যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে তিনি সংগঠিত করেছিলেন, সেই সাঁওতালরা এখনো তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কাজেই তাঁর প্রাসঙ্গিকতা এখনো প্রবলভাবে রয়েছে।

তেভাগা আন্দোলনের সংগ্রামী ইলা মিত্রের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। মঞ্চে (বাঁ থেকে) ঈষানী চক্রবর্তী, মাখদুমা নার্গিস, খুশী কবির, সীমা মোসলেম ও আলমগীর হোসাইন। মহিলা পরিষদ মিলনায়তন, ঢাকা। ১২ নভেম্বর

সম্পর্কিত নিবন্ধ