জাদুকরের তাঁবু ১.
আধো আলো-আধো অন্ধকার
ফুল আঁকা শান দেওয়া চকচকে ছুরি হাতে
ইশারা করেছে জাদুকর—
শব্দহীন হও, ভুলে যাও সব স্বর।
হাওয়ায় কয়েকবার ঘুরিয়ে
নিজের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দিল
জাদুকরের বুকে রক্ত নেই কোনো
রক্তের বদলে বেরোচ্ছে
অজস্র নীল পাপড়ির ফুল
সেই ফুল উড়ে উড়ে এসে
পড়ছে মায়ের বুকের মাঝে।
ম্যাজিক হচ্ছে ভেবে হেসে কুটি কুটি আমরা।
অথচ সামান্য ফুলের ভারে
বাবার শুকনো চোখের দিকে
তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলছে
ক্ষুধাপেট মা.
প্রেম থেকে সরিয়ে নিয়ো না সহজ
এত অবহেলা রেখো না মনে
নিরন্ন দুপুরে যে প্রেমের নামে
লিখে রাখি কদমের ঘোর
লিখে রাখি চালতা ফুলের গভীর
লিখে রাখি জবা ফুলের লাল ও ছাতিমের ঘ্রাণ
সে প্রেমের হোক তুমুল সম্বোধন
নইলে জানো তো
আমিও শিখেছি কিছু
ম্যাজিকবিদ্যা—ঝুমঝুম হাওয়ার মন্ত্র
দেখবে, তুমুল হাততালির ভেতর দিয়ে
পাখি হয়ে তুমি কীভাবে উড়ে যাচ্ছ দূরে।
শূন্যের ভেতর বসে ভাবি তোমার চলে যাওয়ার কথা। বলা ও না বলা কথার মাঝে সেতু হয়ে থাকা দ্বিধা পেরিয়ে ফিরে এসো। প্রেম নাও। গভীর করো তাকে। ভুলে থাকার মন্ত্রের কথা বোলো না আর। অবজ্ঞা রেখো না মনে। দেখবে, হয়তো আক্ষেপে একদিন ঘর এঁকে মুছে দেব তা। তুমুল শীতে, পথে নেমে তুমি আর কিছুতেই খুঁজে পাবে না ঘরে ফেরার রাস্তা।
বন্ধ করো তোমার পলাতক মানুষের মতো চোখ। কারণ, তোমার পালানোর সমস্ত পথ এঁকে দেব এই আমার ভেতর। যত দূর যেতে পারো, যাও। দেখি, এই প্রেম ছেড়ে তুমি কোথায় পালাও!
থাকো না, জানি। তবু তোমার পুরোনো ঠিকানার আশপাশে ঘুরঘুর করি। মনে হয়, না গাওয়া কোনো গানের কাছে আমাকে রেখে সাঁকো পেরিয়ে তুমি সুর খুঁজতে গেছ। খুঁজে পাওয়া সুর ধরে গাইতে গাইতে তুমি ফিরে আসবে সন্ধ্যার আগে, এই ভাবনায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মোড়ে। তোমার তবু ফেরা নেই। অপেক্ষায় শুধু আমাদের মধ্যবর্তী সাঁকো ভেঙে বৃষ্টি নেমে আসে। দিগ্বিদিক হাওয়া বয়, ঠান্ডা—তোমার অরব স্পর্শের মতো। এ হাওয়া নয়নপথগামী। চোখ মুদে আসে।
হাওয়া থেমে গেলে দেখি—এই চোখের ভেতর থেকে বেরিয়ে ভেঙে যাওয়া সাঁকোর কাছে বসে আছে একটি ছেলে। উসকোখুসকো চুল। কেউ খেলায় নেয়নি তাকে। এই ব্যথা নিয়ে আনমনে বসে প্রজাপতির দিকে একের পর এক ছুড়ে দিচ্ছে ঝরে পড়া লাল পাপড়ির ফুল।
একদিন পেরিয়ে যাবে সাঁকো, আর প্রজাপতিও ডানায় গেঁথে নেবে ছুড়ে দেওয়া ফুল—এমন পাগলামির ওপর আস্থা রেখেছে সে। একা উপশম হয়ে তার এই পাগলামির পাশে শান্ত হয়ে বসে আছি। মনে হয়, তোমার হয়ে একই ভঙ্গিমায় তাকে জড়িয়ে ধরে বলি—জেনো, সমস্ত ব্যথার পাশে চির উপশম হয়ে থাকে আর সব ব্যথা। যেমন জলের ভেতরে জল। তাকে প্রেম দাও, ভিন্ন ঠোঁটের অভাব ভুলে তুলে আনো হাসি; তাকে বলো, ভালোবাসি।
সপ্তম ঋতু পেরিয়ে তোমাকে জানি। দেখি, কে যেন অচিন অন্ধকার থেকে চোখের ভেতর ফেলে যাচ্ছে বুকচেরা আলো। আলোর ভেতর দেখি ভোর, জবাকুঁড়ি; দেখি পিউকাঁহা মুখ। বলছে, গলে যাও। সমস্ত সুন্দরের চোখে জল হও; নদী হও। পেরিয়ে যাও। জলের ওপর আরও স্বচ্ছ জল হয়ে পেরিয়ে যাও আনমনা মন। আর চারপাশ করে রাখো বিভূতিভূষণ।
ওই মুখে মুখর হয়ে গলে গলে যাই। নদী হয়ে জলমুলুকে ভাসিয়ে দিই সন্ধ্যামণি, শজনের ফুল। পেরিয়ে যাচ্ছে ফুল, জল পেরিয়ে যাচ্ছে জল। আর ভেজা চোখে ফুল কুড়োতে এসে তুমি ভাসিয়ে দিলে নৌকা টলমল।
জলের মতো আনমনা নরম মনের মানুষ তোমার সুন্দর চোখের ভেতর জল হয়ে, তোমার যত্নের ভেতর নিবিড় আশ্রয়ে দেখি—আকাশে উঠেছে স্কুলফেরত প্রথম শ্রেণির চাঁদ। ওই আলোয় শুধু চোখ মুদে আসে; ঘুমিয়ে পড়ি। আর দেখি, ঘুমের ভেতর দিয়ে পা ফেলে ফেলে নৌকা পেরিয়ে কীভাবে বড় হয়ে উড়ছে যৌথ ময়ূর আদর...
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ভ তর
এছাড়াও পড়ুন:
লিখে রাখি চালতা ফুলের গভীর
জাদুকরের তাঁবু ১.
আধো আলো-আধো অন্ধকার
ফুল আঁকা শান দেওয়া চকচকে ছুরি হাতে
ইশারা করেছে জাদুকর—
শব্দহীন হও, ভুলে যাও সব স্বর।
হাওয়ায় কয়েকবার ঘুরিয়ে
নিজের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দিল
জাদুকরের বুকে রক্ত নেই কোনো
রক্তের বদলে বেরোচ্ছে
অজস্র নীল পাপড়ির ফুল
সেই ফুল উড়ে উড়ে এসে
পড়ছে মায়ের বুকের মাঝে।
ম্যাজিক হচ্ছে ভেবে হেসে কুটি কুটি আমরা।
অথচ সামান্য ফুলের ভারে
বাবার শুকনো চোখের দিকে
তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলছে
ক্ষুধাপেট মা...
প্রেম থেকে সরিয়ে নিয়ো না সহজ
এত অবহেলা রেখো না মনে
নিরন্ন দুপুরে যে প্রেমের নামে
লিখে রাখি কদমের ঘোর
লিখে রাখি চালতা ফুলের গভীর
লিখে রাখি জবা ফুলের লাল ও ছাতিমের ঘ্রাণ
সে প্রেমের হোক তুমুল সম্বোধন
নইলে জানো তো
আমিও শিখেছি কিছু
ম্যাজিকবিদ্যা—ঝুমঝুম হাওয়ার মন্ত্র
দেখবে, তুমুল হাততালির ভেতর দিয়ে
পাখি হয়ে তুমি কীভাবে উড়ে যাচ্ছ দূরে।
শূন্যের ভেতর বসে ভাবি তোমার চলে যাওয়ার কথা। বলা ও না বলা কথার মাঝে সেতু হয়ে থাকা দ্বিধা পেরিয়ে ফিরে এসো। প্রেম নাও। গভীর করো তাকে। ভুলে থাকার মন্ত্রের কথা বোলো না আর। অবজ্ঞা রেখো না মনে। দেখবে, হয়তো আক্ষেপে একদিন ঘর এঁকে মুছে দেব তা। তুমুল শীতে, পথে নেমে তুমি আর কিছুতেই খুঁজে পাবে না ঘরে ফেরার রাস্তা।
বন্ধ করো তোমার পলাতক মানুষের মতো চোখ। কারণ, তোমার পালানোর সমস্ত পথ এঁকে দেব এই আমার ভেতর। যত দূর যেতে পারো, যাও। দেখি, এই প্রেম ছেড়ে তুমি কোথায় পালাও!
থাকো না, জানি। তবু তোমার পুরোনো ঠিকানার আশপাশে ঘুরঘুর করি। মনে হয়, না গাওয়া কোনো গানের কাছে আমাকে রেখে সাঁকো পেরিয়ে তুমি সুর খুঁজতে গেছ। খুঁজে পাওয়া সুর ধরে গাইতে গাইতে তুমি ফিরে আসবে সন্ধ্যার আগে, এই ভাবনায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মোড়ে। তোমার তবু ফেরা নেই। অপেক্ষায় শুধু আমাদের মধ্যবর্তী সাঁকো ভেঙে বৃষ্টি নেমে আসে। দিগ্বিদিক হাওয়া বয়, ঠান্ডা—তোমার অরব স্পর্শের মতো। এ হাওয়া নয়নপথগামী। চোখ মুদে আসে।
হাওয়া থেমে গেলে দেখি—এই চোখের ভেতর থেকে বেরিয়ে ভেঙে যাওয়া সাঁকোর কাছে বসে আছে একটি ছেলে। উসকোখুসকো চুল। কেউ খেলায় নেয়নি তাকে। এই ব্যথা নিয়ে আনমনে বসে প্রজাপতির দিকে একের পর এক ছুড়ে দিচ্ছে ঝরে পড়া লাল পাপড়ির ফুল।
একদিন পেরিয়ে যাবে সাঁকো, আর প্রজাপতিও ডানায় গেঁথে নেবে ছুড়ে দেওয়া ফুল—এমন পাগলামির ওপর আস্থা রেখেছে সে। একা উপশম হয়ে তার এই পাগলামির পাশে শান্ত হয়ে বসে আছি। মনে হয়, তোমার হয়ে একই ভঙ্গিমায় তাকে জড়িয়ে ধরে বলি—জেনো, সমস্ত ব্যথার পাশে চির উপশম হয়ে থাকে আর সব ব্যথা। যেমন জলের ভেতরে জল। তাকে প্রেম দাও, ভিন্ন ঠোঁটের অভাব ভুলে তুলে আনো হাসি; তাকে বলো, ভালোবাসি।
সপ্তম ঋতু পেরিয়ে তোমাকে জানি। দেখি, কে যেন অচিন অন্ধকার থেকে চোখের ভেতর ফেলে যাচ্ছে বুকচেরা আলো। আলোর ভেতর দেখি ভোর, জবাকুঁড়ি; দেখি পিউকাঁহা মুখ। বলছে, গলে যাও। সমস্ত সুন্দরের চোখে জল হও; নদী হও। পেরিয়ে যাও। জলের ওপর আরও স্বচ্ছ জল হয়ে পেরিয়ে যাও আনমনা মন। আর চারপাশ করে রাখো বিভূতিভূষণ।
ওই মুখে মুখর হয়ে গলে গলে যাই। নদী হয়ে জলমুলুকে ভাসিয়ে দিই সন্ধ্যামণি, শজনের ফুল। পেরিয়ে যাচ্ছে ফুল, জল পেরিয়ে যাচ্ছে জল। আর ভেজা চোখে ফুল কুড়োতে এসে তুমি ভাসিয়ে দিলে নৌকা টলমল।
জলের মতো আনমনা নরম মনের মানুষ তোমার সুন্দর চোখের ভেতর জল হয়ে, তোমার যত্নের ভেতর নিবিড় আশ্রয়ে দেখি—আকাশে উঠেছে স্কুলফেরত প্রথম শ্রেণির চাঁদ। ওই আলোয় শুধু চোখ মুদে আসে; ঘুমিয়ে পড়ি। আর দেখি, ঘুমের ভেতর দিয়ে পা ফেলে ফেলে নৌকা পেরিয়ে কীভাবে বড় হয়ে উড়ছে যৌথ ময়ূর আদর...