১০ মাসে ৭৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতে ১১৭ জন নিহত
Published: 12th, November 2025 GMT
চলতি বছরের ১০ মাসে অন্তত ৭৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৯২ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলের কারণে অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
নিহতদের মধ্যে বিএনপির ৮০ জন, আওয়ামী লীগের ২৩ জন, জামায়াতের ৩ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন, ইউপিডিএফের ৬ জন ও চরমপন্থী দলের ১ জন। আর বাকি ৩ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আজ বুধবার ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারি-অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সেখানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ১৫টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং সংগঠনটির তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৫৬টি সংঘাতের ঘটনার মধ্যে ৪৩২টি ঘটেছে বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তঃকোন্দলের জেরে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭০ জন আর আহত অন্তত ৪ হাজার ৬৫ জন। আওয়ামী লীগের ১৩টি অন্তঃকোন্দলের ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ১৫৩ জন আহত হন। এ ছাড়া গত ১০ মাসে এনসিপির ১৪টি অন্তঃকোন্দলের ঘটনায় ৪৫ জন, জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে ৪টি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জন, পুলিশ ও গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন।
দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ১৩২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ৬৮৪ জন আহত হন। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ৪৯টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত, ৪৬২ জন আহত হন। বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ১৬টি সংঘর্ষে আহত হন ১৩৪ জন, আওয়ামী লীগ-এনসিপির মধ্যে ২০টি সংঘর্ষে নিহত হন ১ জন, আহত ৫৬ জন। আর আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে ৮টি সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০ জন আহত হন।
এই সময়ে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর ১২৮টি হামলার ঘটনায় অন্তত ৮৯ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহত হন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৯ জন, বিএনপির ৪৭ জন, জামায়াতের ৪ জন এবং বাকিরা অন্য দলের।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ মাসে দেশে গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও আগের মতোই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি।
মব ও গণপিটুনিতে ১৪০ জনের মৃত্যু
মব সহিংসতা ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ মাসে মব সহিংসতা ও গণপিটুনির অন্তত ২৫৬টি ঘটনায় ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩১ জন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীরা এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া এ সময়ে কারাগারে অন্তত ৬৮ জন আসামি মারা যান। তঁদের মধ্যে ২২ জন কয়েদি ও ৪৬ জন হাজতি।
সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ মাসে অন্তত ২৭০টি হামলায় অন্তত ৩৮৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন, হত্যা ও হয়রানির শিকার হন। এ সময়ে ২ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া অন্তত ২৩৪ জন আহত, ৪৭ জন লাঞ্ছিত, ৬৩ জন হুমকির শিকার ও ১৩ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন। পাশাপাশি ২৯টি মামলায় ১০৩ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ জনকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১০ জন নিহত
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে চলতি বছরে ১০ জন নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে, হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৮ জন বন্দুকযুদ্ধে, ৪ জন নির্যাতনে, ১০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আর ৩৪ জন আহত ও ৬০ জন গ্রেপ্তার হন। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩ হাজার ৩৯৯ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে আনসার সদস্যসহ ১২ জন আহত এবং ১ জন নিহত হন।
বিশেষ অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার গ্রেপ্তার
১০ মাসে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নামে ১৯০টি মামলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে বিভিন্ন মামলায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে অন্তত ৪৯ হাজার ২৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী। গত ১০ মাসে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের অন্তত ৪৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পারিবারিক সহিংসতায় নিহত ৩২৩ জন
গত ১০ মাসে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত ২৮ জন ও আহত হয়েছেন ২৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৪ নারী। পারিবারিক সহিংসতায় নিহত ৩২৩ জন, আহত হয়েছেন ৮৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৪৯ নারী। অ্যাসিড–সহিংসতার শিকার হয়ে ২ জন নিহত হয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ৭৪১ জন নারী
এই সময়ে ১ হাজার ৭৩২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৭৪১ জন, যাদের মধ্যে ৪৩০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু; যা মোট সংখ্যার ৫৮ শতাংশ। ১৬১ জন নারী ও কন্যাশিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জনকে ও আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন নারী।
এ ছাড়া এই সময়ে ২১১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৪৪ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৪০ জন শ্রমিক মারা গেছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ২৪টি হামলার ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি ৫টি মন্দির, ৩৭টি প্রতিমা ও ৩৮টি বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আর ৫০টির বেশি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ঘটন আহত হয় ছ ন ম নব ধ ক র র শ ক র হয় ধ ক র পর রক ষ ক র র জন ত ক র ঘটন য় এই সময় য় ন হত ২ জন ন জন ন র ১০ জন স গঠন ব এনপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
রাজধানী ঢাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ইনচার্জ ছাড়া অন্য পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
টাঙ্গাইলে নির্বাচন অফিসে হামলা-ভাঙচুর, কর্মকর্তাসহ আহত ৩
সোমবার (১০ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সই করা এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দায়িত্বরত অবস্থায় অনেক পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন। এতে তাদের সতর্ক নজরদারি ব্যাহত হচ্ছে এবং দায়িত্ব পালনে শিথিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে পুলিশ দৃশ্যমান থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না।”
আদেশে আরও বলা হয়, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।”
এতে বলা হয়েছে, “দায়িত্বরত অবস্থায় ইনচার্জ ছাড়া অন্য কোনও পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হিসেবে গণ্য হবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
একইসঙ্গে, ডিউটিতে মোতায়েনের আগে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে এই নির্দেশনার বিষয়ে সচেতন ও বাধ্যতামূলকভাবে অবহিত করতে ইউনিট ইনচার্জদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ