জাতীয় সরকার ছাড়া রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরবে না: নুরুল হক
Published: 12th, November 2025 GMT
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশের জনগণ যে স্বপ্ন দেখেছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সামনে আমাদের জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার ছাড়া এ দেশে রাজনীতিতে কোনো শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।’
আজ বুধবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ শহরের পৌরসভা মাঠে গণঅধিকার পরিষদের জেলা কমিটি আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
দেশে ফ্যাসিবাদের আলামত আবারও উঁকি দিচ্ছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা যা দেখেছি, তাতে ফ্যাসিবাদের আলামত আবারও উঁকি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে যাঁরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, মজলুম ছিল, আজকে বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে তাঁরাই এখন মূল আলোচনায়। কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না।’
দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক আরও বলেন, ‘যে দেশে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেখানে গণতন্ত্র মৃত। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই।’
গণঅধিকার পরিষদ সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন করেনি উল্লেখ করে নুরুল হক জানান, জোট করলেও অধিকাংশ আসনে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে গণঅধিকার পরিষদ। জনগণের উচিত নতুন কিছু পেতে হলে সামনের নির্বাচনে নতুন দলকে দেশের দায়িত্ব দেওয়া। তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ কারও পদলেহনকারী দল নয়। আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি। দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে, তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের রাজপথে নামতে হবে।’
সমাবেশে প্রস্তাবিত আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এখন আনুপাতিক হারে নির্বাচন চায়। এর মাধ্যমেই একটি কার্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ সংসদ গঠন করা সম্ভব। বর্তমান পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে ৩০০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই ৩০০ আসন নিয়ে হবে নিম্নকক্ষ, যাঁরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন। এর পাশাপাশি একটি উচ্চকক্ষ থাকবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল সারা দেশে মোট যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই হার অনুযায়ী উচ্চকক্ষে তাদের প্রতিনিধি থাকবে। এই ব্যবস্থায় ছোট দলগুলোও সংসদে তাদের কথা বলার সুযোগ পাবে, যা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।
সমাবেশ শেষে নুরুল হক হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জসদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী চৌধুরী আশরাফুল বারীর (নোমান) নাম ঘোষণা করেন এবং প্রার্থীকে পরিচয় করে দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির মিত্রদের মধ্যে অস্থিরতা
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড় নিয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে না আসায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, প্রার্থী ঘোষণায় যত দেরি হবে, ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচন প্রস্তুতিতে ততই বিপাকে পড়বেন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, শরিকদের আসন চূড়ান্ত করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবেন।
গত সোমবার রাতে বিএনটির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিএনপি ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। পরে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, কোন আসনে কে?০৩ নভেম্বর ২০২৫বিএনপি এখন পর্যন্ত আমাদের (গণতন্ত্র মঞ্চ) একজনকেও বলেনি যে আপনারা নমিনেশন পাবেন। তারা কাকে কোথায় ভাবছে, তার প্রস্তাব পেলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম।মাহমুদুর রহমান মান্না, সভাপতি, নাগরিক ঐক্যশরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, এখন নভেম্বর মাস চলছে। নির্বাচনের আগে সময় আছে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মনোনয়ন নিশ্চিত না করায় তাঁরা অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন। অনেকে নির্বাচনী এলাকায় সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। আবার জোটের প্রধান দল হিসেবে সম্ভাব্য আসনগুলোতে শরিক দলের নেতারা স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সে রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাঁরা বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের আসন নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। যাঁরা শরিকদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছেন, তাঁদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বসবেন। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলোর কাছ থেকে বিএনপি যে প্রার্থী তালিকা পেয়েছে, সেটি বেশ বড়। জোট ও দলগুলোকে তালিকা সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়েছে। সে আলোকে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের ১৪২ জনের প্রার্থী তালিকা সংক্ষিপ্ত করে ৫০ জনের নাম দিয়েছে। এভাবে অন্য দলগুলোও প্রার্থী তালিকা ছোট করে জমা দিয়েছে। সে তালিকা ধরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীর জিতে আসার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছেন।
আরও পড়ুন কিছু আসনে বিএনপির মনোনীতদের নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, বাদ পড়েছেন উল্লেখযোগ্য অনেকে০৫ নভেম্বর ২০২৫বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা নিজেরা শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রার্থিতার বিষয়টি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন।শরিকদের জন্য ২৩ আসন প্রায় চূড়ান্তবিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা নিজেরা শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রার্থিতার বিষয়টি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। বিগত আন্দোলনে শরিক দলগুলোর নেতাদের ভূমিকা, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজনীয়তা—এ বিষয়গুলো প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিচ্ছেন। সে হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের জন্য অন্তত ২৫টি আসন ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। এই হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেই।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির এমন একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে তাঁরা ২৩টি আসন চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ছয়টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের পাঁচটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে পাঁচটি, ১২–দলীয় জোটকে তিনটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (বিজেপি) দুটি, গণ অধিকার পরিষদকে দুটি ও এলডিপিকে দুটি আসন দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণফোরামকে একটি করে আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। তাদের কাউকে কাউকে প্রার্থিতার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হলেও এখনো নাম ঘোষণা করা হয়নি।
আরও পড়ুনমিত্রদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে হিসাব কষছে বিএনপি ১৫ অক্টোবর ২০২৫তবে প্রার্থিতা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে অভিযোগ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, নিজ এলাকা বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে তাঁকে ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আবার বগুড়ায় সেখানকার বিএনপির নেতারা নানা কথা ছড়াচ্ছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি তো এখন পর্যন্ত আমাদের (গণতন্ত্র মঞ্চ) একজনকেও বলেনি যে আপনারা নমিনেশন পাবেন। তারা কাকে কোথায় ভাবছে, তার প্রস্তাব পেলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম। এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না।’