পঞ্চদশ সংশোধনী: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ‘যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি’, লিভ টু আপিল মঞ্জুরের আরজি
Published: 12th, November 2025 GMT
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদক ড.
চার বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও রিদুয়ানুল করিম। শুনানিতে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্টে পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট তার অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করেছেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত মূল বিধান ফিরে এসেছে। তবে আইনের আরও কিছু বিধান রয়েছে, যে কারণে যথাযথভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়নি।
কোন বিষয়গুলো পুনর্বহাল হয়েছে এবং কোনগুলো হয়নি—এসব দিক শুনানিতে তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ সংশোধনী আনা হয়। এ ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে পৃথক রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি আবেদন করেন।
সেই আবেদনে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয় রায়ে। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একটি লিভ টু আপিল করেন। লিভ টু আপিলগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠার পর আজ শুনানি শুরু হলো।
আরও পড়ুনপঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল০৩ নভেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ আইনজ ব আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে দুজনের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি রাখা হয়। পরে অস্বাক্ষরিত আদেশ রিকল করে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে।
মামলায় ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করেছিল। যা চেম্বার আদালত হয়ে আজ সোমবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানি নিয়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদালত লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। একই মামলায় মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন এক সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়।
বেলা ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কার্যতালিকায় গিয়ে দেখা যায়, মঞ্জুরুল আলমের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন বিষয়ে ফলাফলের ঘরে লেখা আনসাইড অর্ডার ইজ রিকলড (অস্বাক্ষরিত আদেশ প্রত্যাহার করা) অ্যান্ড ডিসমিসড (রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ)।
জানতে চাইলে মঞ্জুরুল আলমের আইনজীবী রমজান আলী শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিরতির আগে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি এক সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন। পরে স্ট্যান্ডওভার অর্ডার রিকল করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল রইল। তাঁর মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই।
এর আগে আদালতের আদেশের পর লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেলের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন।মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী।
লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া ও জাকির হোসেন মাসুদ।
আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেদিন দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
আরও পড়ুনলতিফ সিদ্দিকীর জামিন বহাল, মঞ্জুরুল আলমের বিষয়ে শুনানি এক সপ্তাহ মুলতবি১ ঘণ্টা আগে