ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে ককটেল বিস্ফোরণের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্রশক্তি ও বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের নেতা–কর্মীরাও ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

এর আগে বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণে জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার (৪৮) নামের এক পথচারী আহত হন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টিএসসি–সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটের বিপরীতে একটি চায়ের দোকানের সামনে ককটেল দুটি বিস্ফোরিত হয়। এতে পাশের একটি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেলের মালিক নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমি পাশে বসে চা খাচ্ছিলাম, হঠাৎ ককটেল এসে পড়ে। পরে দেখি বাইকের তেলের ট্যাংক ফেটে গেছে।’

বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাতে টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসনকে বলেছি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নিতে। আজ রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে অবস্থান নেবে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের উপস্থিতি পেলেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা–কর্মীরা।

ককটেল হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় ছাত্রশক্তি। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দেশবিরোধী চক্র আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ১৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট এসস

এছাড়াও পড়ুন:

আমদানি হয় ওষুধের ৮৫% কাঁচামাল

দেশে প্রয়োজনের ৯৫ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হয়। ১৫০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। অথচ ওষুধের ৮৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ওষুধনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই তৈরি করতে হবে। এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দরকার।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলা হয়। ‘এপিআই শিল্পের উন্নয়নে নীতি ও বাস্তবায়ন কৌশল’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে নাগরিক সংগঠন অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)। এতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) নেতা, শিল্পমালিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, ওষুধবিজ্ঞানী, গবেষক অংশ নেন।

মূল উপস্থাপনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ওষুধের ৮৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর জন্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যায়। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশে তৈরি করা সম্ভব না হলে দেশের ওষুধনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। তিনি বলেন, ‘সরকার পোশাকশিল্পকে যে সুযোগ দিয়েছে, তা যদি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) শিল্পকে দেয়, তা হলে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।’

ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি আবদুল মুক্তাদির বলেন, সরকার হচ্ছে ওষুধ শিল্প সমিতির সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাংলাদেশ ওষুধ বা তৈরি পোশাকশিল্পে যে সাফল্য দেখিয়েছে, ওষুধের কাঁচামালের ক্ষেত্রেও সেই সাফল্য দেখানোর সামর্থ্য রাখে। বাংলাদেশ এখন যেকোনো মলিকিউল তৈরি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ৩০ থেকে ৩৫টি দেশ। ওষুধ বা ওষুধের কাঁচামালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী শুধু চীন–ভারতের মতো দু–তিনটি দেশ।

সমিতির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, সরকারের নীতি সহায়তা ছাড়া এপিআই শিল্প উঠে দাঁড়াতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে একাধিক শিল্পোদ্যোক্তা তাঁদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। কেউ বলেন, সরকার ওষুধের কাঁচামাল শিল্পের জন্য প্লট বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ দেয়নি। কেউ বলেন, ছোট কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। কেউ বলেন, সরকারের নীতি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা নানা গড়িমসি করেন। সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওষুধের কাঁচামালবিষয়ক একটি কমিটি করেছে। প্রতি মাসে কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। কমিটির প্রথম বৈঠক হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। গতকাল পর্যন্ত আর কোনো বৈঠক হয়নি।

ওষুধ কোম্পানি হেলথকেয়ার ফার্মার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাপির কোষাধ্যক্ষ মো. হালিমুজ্জামান বলেন, সরকারের কাছ থেকে প্লট নিয়ে কাঁচামাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ব্যাংক থেকে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। সরকার তার কারখানায় গ্যাস দিচ্ছে না। তিনি ব্যাংকে নিয়মিতভাবে ২০ লাখ টাকা করে সুদ গুনে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে অনেকেই মতামত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ এপিআই ও ইন্টারমিডিয়েটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাইমা) সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান বলেন, এপিআই শিল্পের জন্য ভারতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি আছে। দেশে একটি টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক আজহারুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সেলিম রেজা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ