আবু সাঈদকে দুই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে গুলি
Published: 13th, November 2025 GMT
রংপুরের কোতোয়ালি অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফুজ্জামান এবং সেখানকার তাজহাট থানার তৎকালীন ওসি মো. রবিউল ইসলামের নির্দেশে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করা হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন দুজন সাক্ষী।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল বুধবার দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। তাঁরা হলেন এসআই (উপপরিদর্শক) মো.
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই তৎকালীন এসি আরিফুজ্জামান ও তৎকালীন তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে আমির হোসেন (সাবেক এএসআই) ও সুজন চন্দ্র রায় (সাবেক কনস্টেবল) শটগান ফায়ার করলে রাস্তায় দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগে। পরে বিকেল চারটার দিকে আরিফুজ্জামানের কাছে তাঁরা জানতে পারেন, গুলিবিদ্ধ ছাত্র আবু সাঈদ মারা গেছেন।
অপর দিকে জবানবন্দিতে এএসআই আবদুল্লাহ আল নাছির বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি দেখতে পান, তৎকালীন এসি আরিফুজ্জামান ও তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশে আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র রায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছাত্রের দিকে শটগানের গুলি ছোড়েন। সেই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যান।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ। গতকাল তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই মামলার বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
শাপলা চত্বরের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল
২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। শেখ হাসিনাসহ এ মামলায় আসামি ২১ জন।
চট্টগ্রামের মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল
গণ-অভ্যুত্থানের সময় চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল এই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এ মামলার আসামি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ফ জ জ ম ন তৎক ল ন ইসল ম র ল ইসল ম গতক ল অপর ধ সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসি নিয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকতে পারেনি সরকার
বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কোনো কর্মকর্তাকে আসন্ন নির্বাচনে রাখা হবে না, ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানে থাকতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। দুজন কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) করা হয়েছে, যাঁরা আগের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার (এআরও) দায়িত্বে ছিলেন।
এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাকে প্রমার্জনা করে ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে, যিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক পদে পুরোপুরি দুই বছর দায়িত্ব পালন করেননি। অথচ ২০২২ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রণীত পদায়ন নীতিমালায় বলা আছে, ডিসি হতে হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উল্লিখিত পদে দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
দুজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁরা আগের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। একজনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে পদায়ন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।নির্বাচনের সময় মূলত ডিসিরাই রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বাদ দিতে গিয়ে যোগ্য ডিসি খুঁজে পেতে বিপাকে পড়ে সরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগের তিনটি নির্বাচনের কাউকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না রাখার সিদ্ধান্তটি দূরদর্শী ছিল না। কারণ, বিগত তিনটি নির্বাচনে বেশির ভাগ কর্মকর্তাই এবারও ছিলেন। এ শর্ত প্রতিপালন করা কঠিন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনি ও রোববার দুই দিনে দেশের ২৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ন করে সরকার। এর মধ্যে রোববার ১৪ জেলায় এবং আগের দিন ১৫ জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়। এই ২৯ জেলার মধ্যে একেবারে নতুন ডিসি করা হয় ২১ কর্মকর্তাকে। বাকি আটজন ডিসিই ছিলেন, তাঁদের জেলা পরিবর্তন করা হয়েছে।
পদায়নে এ শর্ত বাতিলের পক্ষে মত জানাচ্ছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, কেউ ডিসি হবেন, আবার কেউ বঞ্চিত হবেন কেন?জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিসিএস ২৭তম ও ২৮তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের দুজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁদের একজন ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে, অন্যজন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন।
এ দুজনকে ডিসি করায় প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে থাকতে পারেনি। তাহলে কেউ ডিসি হবেন, আবার কেউ বঞ্চিত হবেন কেন? ডিসি পদে পদায়নে এ শর্ত বাতিল করা উচিত বলে মত দেন তাঁরা।
এ ছাড়া বিসিএস ২৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে ডিসি করা হয়েছে, যাঁর ইউএনও, এডিসি পদে পুরোপুরি দুই বছরের অভিজ্ঞতা নেই। এ ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাকে প্রমার্জনা করা হয়েছে।
গত তিন নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করার জোরালো অভিযোগ ছিল। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবারের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুনআগের ভোটের সবাই বাদ, ‘যোগ্য’ নতুন ডিসি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার০১ নভেম্বর ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মাঠ প্রশাসনে বিশেষ করে ডিসি, এডিসি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক), ইউএনওসহ (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) বিচারিক দায়িত্বে এমন কাউকে পদায়ন করা হবে না, যিনি গত তিনটি নির্বাচনের কাজে যুক্ত ছিলেন। ন্যূনতম ভূমিকা থাকলেও তাঁকে এই নির্বাচনে দায়িত্বে রাখা হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং নির্বাচন কমিশন একই কথা বলেছিল। এদিকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের তিনজন কর্মকর্তাকে ডিসি পদায়ন নিয়েও প্রশাসনে আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইকোনমিক ক্যাডার ২০১৮ সালে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হয়। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে (সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব পদে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁরা সরাসরি ইউএনও, এডিসি বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। মাঠ প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা না থেকেও ডিসি হওয়া নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে জনপ্রশাসনে।
নির্বাচনের আগে আরও অন্তত পাঁচ থেকে আট জেলায় ডিসি পদে পদায়ন হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সেসব ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।