গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও এর প্রতিকারে করণীয়
Published: 14th, November 2025 GMT
অংশগ্রহণকারী
অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম
প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
অধ্যাপক ডা. মুসাররাত সুলতানা
সদস্যসচিব, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম
সাবেক প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
অধ্যাপক ডা.
মো. আবদুল হালিম
অধ্যক্ষ, কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজ। সদস্য, ওজিএসবি
ডা. নুরুন নাহার বেগম
সিনিয়র উপদেষ্টা, আইপাস বাংলাদেশ। সাবেক লাইন ডিরেক্টর (সিসিডিপি), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সদস্য, ওজিএসবি
অধ্যাপক ডা. এস কে জিন্নাত আরা নাসরিন
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সদস্য, ওজিএসবি
অধ্যাপক ডা. সেহরিন এফ সিদ্দিকা
বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভিন
চেয়ারম্যান, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য, ওজিএসবি
ডা. মাহফুজা আসমা
সহকারী অধ্যাপক, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সদস্য ওজিএসবি
ডা. সানজিদা মাহমুদ
সহকারী অধ্যাপক, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সদস্য, ওজিএসবি
ডা. সাদেকা চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক , নিওনেটোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ফাহমিদা মাহমুদ
সিনিয়র নিউট্রিশন অফিসার, সিজিএইচআর (CGHR), ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
আলোচনাঅধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম
প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
অনেক নারী গর্ভধারণের আগে নিজের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন না। অথচ গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরামর্শ ও জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ মা ও শিশুর জটিলতা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। যদি গর্ভধারণের আগে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে জন্মগত ত্রুটি, প্রসবজনিত জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়। যেসব নারীর ডায়াবেটিস রয়েছে, গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই তাঁদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। গর্ভধারণের আগে অন্তত একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যাঁরা স্থূলতায়, উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন বা আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁরা যেন ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীদের সচেতন করতে প্রসূতিবিদেরা এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। আমাদের দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেশি। তাই সরকার কমিউনিটি পর্যায়ে শনাক্তকরণ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবে। প্রেগনেন্সিতে তিন ধরনের ডায়াবেটিক রোগী থাকতে পারেন—টাইপ-ওয়ান, টাইপ-টু এবং জেস্টেশনাল। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না থাকলে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, গর্ভকালীন সময় অনুযায়ী বাচ্চার ওজন বেশি বা কম হওয়ার ঝুঁকি দেখা যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী পরবর্তী সময়ে টাইপ-টু ডায়াবেটিসে ভোগেন। তাঁদের হৃদ্রোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম ও ক্যানসারের (ব্রেস্ট, ওভারি ও জরায়ু) ঝুঁকিও বাড়ে। তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধুই গর্ভাবস্থার সমস্যা নয়, এটি এক আজীবনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম বা তিন বেলা খাবারের পর ২০-৩০ মিনিট হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এতে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধু গর্ভাবস্থার সমস্যা নয়, এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
অধ্যাপক ডা. মুসাররাত সুলতানা
সদস্যসচিব, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
কারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন, এটা সবারই জানা দরকার। গর্ভধারণের শুরু থেকেই অ্যান্টিনেটাল চেকআপ খুব জরুরি। কারণ, নিয়মিত চেকআপে এলে মায়েদের মধ্যে সচেতনতা অনেক বাড়ানো সম্ভব।
আমি দেখেছি, কিছু ব্যক্তিগত কারণ, কিছু পারিবারিক ইতিহাস এবং কিছু শারীরিক সমস্যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মায়েদের মধ্যে যাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের বেশি, তাঁদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়, তাই তাঁদের সচেতন থাকতে হবে। যেসব মায়ের বিএমআই ২৫-এর ওপরে বা যাঁরা অতিরিক্ত ওজনের, তাঁদের জন্য ঝুঁকি বেশি।
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে ওজন কিছুটা বাড়ে, কিন্তু অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যাঁদের পরিবারে টাইপ–টু ডায়াবেটিস আছে—বাবা, মা বা ভাইবোনদের মধ্যে—তাঁদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। আবার আগের গর্ভধারণে যদি কোনো মায়ের চার কেজির বেশি ওজনের শিশু জন্মে থাকে, তবে ধরে নেওয়া যায়, আগেও তাঁর ডায়াবেটিস ছিল। তাই তাঁকে এই গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। যেসব মায়ের আগে পেটে শিশু মারা গেছে (আইইউডি), প্রসবের সময় শিশুমৃত্যু (স্টিল বার্থ) হয়েছে অথবা জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন শিশু জন্মেছে, তাঁদের উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে শনাক্তকরণ করা প্রয়োজন। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
সম্ভবত জেনেটিক কারণেই আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে, ডায়াবেটিসের প্রকোপ অনেক বেশি। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এখন প্রায় মহামারির মতো বিস্তার লাভ করছে।
তাই আগেভাগেই সচেতনতা তৈরি করতে পারলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, আর এর ফলে মাতৃমৃত্যু ও গর্ভকালীন জটিলতাও অনেকাংশে কমে যাবে।
অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম
সাবেক প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এই রোগে ভুগছে এবং এর বিস্তার ক্রমেই বাড়ছে। ১০ বছর আগের সমীক্ষায় যেখানে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার প্রায় ১০ শতাংশ ছিল, এখন তা প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের প্রভাব শুধু মায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে।
অনেক মা তুলনামূলক বেশি বয়সে সন্তান নিচ্ছেন। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। সমাজে শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে, শিশুরা ঘরে বসে থাকে, স্ক্রিনের সামনে সময় কাটায়—নড়াচড়া প্রায় নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন—সবজি কম খাওয়া, ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্তি—এসব মিলেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাড়াচ্ছে। এই সমস্যা শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া, মাত্রাতিবিক্ত বড় শিশু, নবজাতকের এনআইসিইউতে ভর্তি, সিজারিয়ান ডেলিভারি, মানসিক চাপ ও পরিবারের আর্থিক বোঝা—সবই যুক্ত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ইস্যুর সঙ্গে।
এ ছাড়া যেসব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়, তাঁদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাত গুণ বেশি। তাঁদের হৃদ্রোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, এমনকি স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাঁদের সন্তানদের মধ্যেও স্থূলতা ও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য শুধু চিকিৎসা নয়, জনসচেতনতা ও প্রতিরোধও জরুরি। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ, শিশুর খেলাধুলার সুযোগ, পুষ্টিকর খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আমরা ওজিএসবি থেকে মা, পরিবার ও সরকারের সঙ্গে মিলেই এই প্রতিরোধ ও প্রতিকার কার্যক্রমে সহায়তা করি। সবাই মিলে শুধু চিকিৎসা নয়, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল হালিম
অধ্যক্ষ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
পরিচালক, আরসিএইচ বিভাগ, সিআইপিআরবি এবং সদস্য, ওজিএসবি
বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। গর্ভাবস্থায় অনেক নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও তা নির্ণয় করা হয় না বা অজ্ঞাত থেকে যায়, যা আমাদের দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্তের হার অনেক কম, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আমাদের দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ গর্ভবতী নারী অ্যান্টিনেটাল সেবার (এএনসি) জন্য আসেন। তবে পরবর্তী সেবাগুলো গ্রহণের হার পর্যায়ক্রমে কমে যায় এবং দেখা গেছে যে চতুর্থবার এএনসি সেবা গ্রহণের হার মাত্র ৪২ শতাংশে নেমে আসে। যখন একজন গর্ভবতী নারী এএনসি সেবা নিতে আসেন, তখন তাঁদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ সময়েই যদি গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে এ রোগের শনাক্তের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
আমরা অর্থাৎ সিআইপিআরবি, সরকারের সহযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ের ডাক্তার, নার্স, মিডওয়াইফ, সিএসসিপি ও অন্য সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে কুইক মেথডে সুগার মাপার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা স্ট্যান্ডার্ডগুলো নিয়ে একটি প্রটোকল তৈরি করেছি। এই প্রটোকল অনুযায়ী, গর্ভাবস্থার ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিনেটাল সেবা গ্রহণ করতে আসলে গ্লুকোমিটার দিয়ে তাৎক্ষণিক রক্তে সুগার মেপেছি। এই পদ্ধতিতে প্রথমবার আসা মায়েদের মধ্যে প্রায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ নারীকে জিডিএম হিসেবে শনাক্ত করেছি। ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের পরবর্তী সাক্ষাতে আমরা আবার পরীক্ষা করে মোট ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ মাকে জিডিএম হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সব জিডিএম চিহ্নিত মায়েদের প্রটোকল অনুযায়ী পরামর্শ, সেবা ও উপযুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করেছি। আমরা গর্ভবতী নারীদের উদ্বুদ্ধ করেছি, বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করেছি, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং কমিউনিটি ওয়ার্কশপ করেছি। গ্রামীণ পর্যায়ে অজ্ঞতা, দারিদ্য ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থাকা সত্ত্বেও এই কাজ করা সম্ভব হয়েছে।
ডা. নুরুন নাহার বেগম
সিনিয়র উপদেষ্টা, আইপাস বাংলাদেশ। সাবেক লাইন ডিরেক্টর (সিসিডিপি), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
সদস্য, ওজিএসবি
আমরা প্রথম থেকেই বলছি, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শনাক্তকরণ জরুরি। কারণ, অনেক মায়ের গর্ভাবস্থায় কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। এ জন্য প্রি–প্রেগন্যান্সি প্ল্যান, প্রেগন্যান্সি স্ক্রিনিং ও এক্সপেক্টেন্ট ডেলিভারির জন্য নিয়মিত চেকআপ করা অপরিহার্য। যদি মা গর্ভাবস্থার আগেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকেন বা গর্ভের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ও মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে।
তাই প্রি–প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং ও ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের চিহ্নিত করা জরুরি। সঠিক সময়ে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে জানা যায়, কোন মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ছোট ছোট সমস্যা থেকেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে, যেমন গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত পিপাসা, চুলকানি, যৌনাঙ্গে ইনফেকশন, প্রস্রাবে ইনফেকশন, বাচ্চার অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা পেটে অতিরিক্ত পানি, যার কারণে মায়ের শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় ডায়াবেটিস কন্ট্রোল না থাকলে অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই গর্ভে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। ছোট ছোট সমস্যা থেকে বড় বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মা যদি সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে আসেন ও পরিকল্পিতভাবে ডেলিভারি করা হয়, তাহলে নরমাল ডেলিভারিও সম্ভব, তবে সেটি অবশ্যই হাসপাতালে ডেলিভারি হতে হবে। কারণ, প্রসব–পরবর্তী সময়েও শিশু ও মায়ের অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। অনেকেই গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের ঝুঁকি বা বাচ্চার ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন না।
এই ঝুঁকিগুলো চিন্তা করে যদি মায়েরা স্ক্রিনিংয়ের জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন না–ও হতে পারেন। আমরা বলছি, গর্ভাবস্থা চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম স্ক্রিনিং করুন ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে, ৩২ সপ্তাহে অথবা ডাক্তার যেভাবে বলেন। উদ্দেশ্য একটাই, যত দ্রুত সম্ভব রোগনির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া। প্রসবের পর জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস সাধারণত চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও কিছুদিন চলতে পারে বা পরবর্তী সময় আবারও ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চেকআপ একটি সুযোগ—স্ক্রিনিং করে মায়ের ঝুঁকিগুলো বোঝানো ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
অধ্যাপক ডা. এস কে জিন্নাত আরা নাসরিন
অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সদস্য, ওজিএসবি
আমরা চাইলেই রোগীকে সচেতন ও সাবধান করতে পারব। সচেতন করার কাজটি আমরা তখনই করতে পারব, যখন একজন নারী বা দম্পতি সন্তান গ্রহণের আগে আমাদের কাছে এলে আমরা তাঁর ইতিহাস নিয়ে এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখে নিতে পারব তিনি কেমন আছেন। গর্ভবতী হলে তাঁর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না বা ঝুঁকি থাকলে সেটি কতটুকু আছে।
আমি একটি ছোট উদাহরণ দিতে পারি। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার আগে আমরা যেমন টেস্ট পরীক্ষা নিই, দেখে নিই সে কেমন আছে—ভালো হলে তো সে ভালো করবে, আর যদি খারাপ হয় তবে আমরা তাকে প্রস্তুত করি। ঠিক তেমনি গর্ভধারণের আগে আমরা স্ক্রিনিং করে দেখে নেব তাঁর ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কতটুকু রয়েছে।
ঝুঁকি থাকলে আমরা সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করব এবং কীভাবে এগোতে হবে, সেটির একটি বার্তা দেব। এইভাবে আমি একজন গর্ভবতী নারীকে উপদেশ দেব যে আপনি গর্ভধারণ করার আগেই আমাদের কাছে আসবেন (প্রি-প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং)।
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা স্ক্রিনিং করব? স্ক্রিনিং করার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। তবে যেটি আমাদের দেশে সবচেয়ে সহজলভ্য এবং যেটি আমরা সবাই করে থাকি সেটি হলো, আমরা একটি ফাস্টিং ব্লাড সুগার করি। এরপর আমরা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়াই এবং দুই ঘণ্টা পর আবার পরীক্ষা করে দেখে নিই। মাপের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে।
সেই পরিমাণ ছাড়িয়ে গেলে আমরা তাঁকে শনাক্ত করি যে তিনি ডায়াবেটিসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তখন আমরা তাঁকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে বিশেষ পরিচর্যা দেব, যাতে তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাঁর গর্ভকালীন অবস্থা যেন সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়। একজন সুস্থ মা যেন একটি সুস্থ শিশু প্রসব করতে পারেন।
অধ্যাপক ডা.সেহেরীন এফ সিদ্দিকা
বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে—‘আমার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তার মানে কি আমার সিজারিয়ান করতেই হবে?’ উত্তর: একেবারেই না।
আমাদের কাজ হলো ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও সুস্থভাবে ডেলিভারি নিশ্চিত করা। এই প্রসবব্যবস্থা হবে মা-শিশুর স্বাস্থ্য নিরাপদের জন্য আমাদের পরিকল্পিত প্রসবব্যবস্থা থাকা জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন গর্ভাবস্থায় সচেতনতা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে গর্ভকালে বাচ্চা এবং মায়ের কোনো জটিলতা না হয়।
গর্ভাবস্থায় ৩৬ সপ্তাহ পূর্ণ হলে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রসব পরিকল্পনার জন্য রোগীকে পরামর্শ দিই।
যদি বাচ্চা বা মায়ের কোনো জটিলতা ধরা পড়ে, তাদের জন্য সিজারিয়ান ডেলিভারি আবশ্যক। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, বাচ্চার ওজন ও অবস্থান স্বাভাবিক থাকে সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেও নরমাল ডেলিভারিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
যেহেতু গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মায়েদের শেষের তিন সপ্তাহে নানা জটিলতা হতে পারে, তাই অন্তত দুই সপ্তাহও আগে ডেলিভারি করানো নিরাপদ। ওই সময়ে স্বাভাবিক ব্যথা না উঠলে ওষুধ প্রয়োগ করে ব্যথা ওঠানো হয়ে থাকে, যাকে বলা হয় ইনডাকশন অব লেবার। মোটাদাগে বলা যায় জটিলতা না থাকলে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। ডায়াবেটিক মা ও নন-ডায়াবেটিক মায়ের অ্যান্টিনেটাল কেয়ার এক রকম নয়। শেষ ত্রৈমাসিকে ঘন ঘন চেকআপ জরুরি। বাচ্চা অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়া, গর্ভে পানি বেড়ে যাওয়া, বাচ্চা নড়াচড়া কমে যাওয়া, বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বা গর্ভের ফুল নিচে নেমে গেলে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না। আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে, রোগীকে কাউন্সেলিং করা হয়। যাঁদের জন্য নরমাল ডেলিভারি সম্ভব, তাঁদের আমরা সময়সীমা জানাই। কিন্তু তারিখ পার হয়ে ডেলিভারি করার সুযোগ নেই। কারণ, ফিটাল ডিস্ট্রেস বা পেটে বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে মা ও শিশুর পরিণতি ডায়াবেটিক ও নন-ডায়াবেটিক মায়ের প্রায় সমান একই রকম হতে পারে। এ জন্য নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যা অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় পরিপূর্ণ অবস্থায় এলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্তত এক-দুই সপ্তাহ আগে ডেলিভারি করাতে হবে। প্রসবব্যবস্থা অবশ্যই এমন হাসপাতালে হবে, যেখানে প্রসবের সুব্যবস্থা বিশেষ করে নবজাতকের টারশিয়ারি কেয়ার, নিওনেটাল ফ্যাসিলিটিজ এবং নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আছে। সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য পরিবারকে সময়মতো প্রস্তুতি হিসেবে মা ও নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সম্ভাব্য অর্থ ব্যয় হবে, তা সঞ্চয় করে রাখতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—স্বাভাবিক প্রসব সব মায়ের জন্য কাম্য। তবে ডায়াবেটিস প্রেগন্যান্সিতে সিজারিয়ান রেট কিছুটা বেশি হতে পারে, কিন্তু নিরাপদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মা ও শিশুর ঝুঁকি কমানো যায়। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ডায়াবেটিক প্রেগন্যান্সি নিরাপদ ও সুস্থভাবে সম্পন্ন করা। যাতে পেতে পারি সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু।
অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন
চেয়ারম্যান, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সদস্য, ওজিএসবি
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কেবল গর্ভকালীন সময়ের সমস্যা নয়, এটি মা ও নবজাতকের জন্য তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে শক্তিশালী গবেষণা সীমিত, যেখানে আমাদের অনেক কাজ করা উচিত। বিদ্যমান গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে এর হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা আগের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। শুধু তা–ই নয়, বাংলাদেশে এই বৃদ্ধির হার শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে তিন গুণ বেশি। কাজেই বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধু বাড়ছে না, উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শহরাঞ্চলের নারীদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি—খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন এর বড় কারণ। প্রায় ৯০ শতাংশ নারী গর্ভকালীন পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি গ্রহণ করেন না এবং ১৫ শতাংশ নারী পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপে অংশ নেন না। এ ছাড়া ২৫ বছরের পর গর্ভধারণকারীদের মধ্যে এর হার দ্বিগুণ, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও বাড়ে। আজ অনেক নারী তুলনামূলক বেশি বয়সে গর্ভধারণ করছেন—এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি। স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকির গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু হয় সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত হালকা ব্যায়াম দিয়ে, যেখানে রোগীর সক্রিয় অংশগ্রহণ চিকিৎসার সফলতার মূল চাবিকাঠি। এর মাধ্যমে ৭০–৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি তাতে নিয়ন্ত্রণ না আসে, ইনসুলিনই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ। তবে ইনসুলিন ব্যবস্থাপনা কঠিন হলে যেমন রোগী যদি রোজ ইনজেকশন না নেন বা নিতে রাজি না হন, তখন মুখে খাওয়ার ওষুধ মেটফর্মিন ব্যবহার করা যেতে পারে, যদিও এটি শিশুর রক্তে পৌঁছাতে পারে। তবে সবটাই হতে হবে চিকিৎসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে।
ডা. মাহফুজা আসমা
সহকারী অধ্যাপক, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগ,
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। সদস্য, ওজিএসবি
ডায়াবেটিস আসলে একটি নীরবঘাতক। আমাদের দেশে এটি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২৭ শতাংশ। মানে, প্রায় এক–চতুর্থাংশ গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এটা গর্ভাবস্থার আগে থেকে বা গর্ভাবস্থায় নতুনভাবে তৈরি হতে পারে।
এই পরিসংখ্যানটিতে আরও দেখানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থায় প্রায় ১৯ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী নতুনভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর গর্ভাবস্থার আগেই ৮ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকতে পারেন। গর্ভাবস্থায় যে ডায়াবেটিস নতুনভাবে হলো, তাকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ডায়াবেটিস আছে কি না, তা জানার জন্য রক্তের যে গ্লুকোজ পরিমাপ করা হয়, তার মাত্রার ওপর সেটি নির্ভর করে। একটিকে আমরা জিডিএম বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলে থাকি (খালি পেটে ৫.১–৬.৯ মিলি মোল/লিটার অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পানীয় খাবার দুই ঘণ্টা পর ৮.৫–১১ মিলি মোল/লিটার)। অন্য আরেকটিকে আমরা বলি, ডিআইপি বা ডায়াবেটিস ইন প্রেগন্যান্সি হিসেবে (খালি পেটে ৭ মিলি মোল/লিটার অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পানীয় খাবার পর ১১.১ মিলি মোল/লিটার অথবা তার বেশি)। আর যে ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থার আগে থেকেই আছে, তাকে প্রিজেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলা হয়।
সুতরাং ডায়াবেটিস প্রেগন্যান্সিতে তিনভাবে প্রকাশিত হতে পারে। একটা হচ্ছে জিডিএম, আরেকটা হচ্ছে ডিআইপি এবং অন্যটি হচ্ছে প্রিজেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলাইটাস। এখনই সচেতন না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। একজন সুস্থ মা মানেই একটি সুস্থ প্রজন্ম। গর্ভাবস্থার শুরুতেই রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাস করুন। আপনার সামান্য সচেতনতা নতুন প্রজন্মের জন্য এক বড় উপহার হতে পারে।
ডা. সানজিদা মাহমুদ
সহকারী অধ্যাপক, ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সদস্য, ওজিএসবি
ডায়াবেটিস চিকিৎসার প্রথম কাজই হলো তাকে শনাক্ত করা। যদি গর্ভের আগেই এটি নির্ণয় করা যায়, তাহলে সবচেয়ে ভালো। স্ক্রিনিং সাধারণত দুই ধাপে করা হয়। প্রথমে মায়ের ইতিহাস বা তথ্য জানা—যার মাধ্যমে কারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে, তা নির্ণয় করা। এটিই প্রাথমিক স্ক্রিনিং। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত স্ক্রিনিং করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি) পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়। এতে ৮-১২ ঘণ্টা খালি পেটে থাকার পর সকালে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়, তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ-পানি খাওয়ানোর এক ঘণ্টা পর এবং দুই ঘণ্টা পর আবার রক্ত পরীক্ষা করে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা হয়।
যদি প্রথম তিন মাসে ডায়াবেটিস ধরা না পড়ে, তাহলে প্রত্যেক মাকে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই ওজিটিটি করতে হবে। অন্য কোনো পরীক্ষা যেমন আরবিএস, ফাস্টিং ব্লাড সুগার বা টু-আওয়ারস আফটার ব্রেকফাস্ট দিয়ে নয়, শুধু ওজিটিটির মাধ্যমেই এই স্ক্রিনিং করতে হবে। তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মায়ের ক্ষেত্রে ৩২ থেকে ৩৪ সপ্তাহেও ওজিটিটি আবার করা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন যাঁদের বারবার ইউরিনারি ইনফেকশন (ইউটিআই), যোনিপথে ইনফেকশন (ভ্যাজাইনাইটিস) হচ্ছে, বাচ্চা গর্ভের বয়সের তুলনায় বড় হয়ে যাচ্ছে বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড-এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সময়ে আবারও স্ক্রিনিং করা উচিত। এভাবে ধাপে ধাপে স্ক্রিনিং করলে মায়ের ডায়াবেটিস সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব, যা পরবর্তী চিকিৎসা ও নিরাপদ প্রসবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধুই মায়ের সমস্যা নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তাই স্ক্রিনিং, সচেতনতা এবং নিয়মিত ফলোআপ—এই তিনটি দিকেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। মা যদি নিয়মিত চেকআপ করান, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন, তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং সুস্থ মা ও সুস্থ সন্তানের জন্মই হবে আমাদের সাফল্য।
ডা. সাদেকা চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, নিওনেটোলজি বিভাগ,
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা জানি, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের থেকে জন্ম নেওয়া নবজাতককে বলা হয় ইনফ্যান্ট অব ডায়াবেটিক মাদার (আইডিএম)। এটি মা ও নবজাতকের ঝুঁকিপূর্ণ সহ–অবস্থা।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ, শিশুর জন্মগত ত্রুটি, মায়ের অন্য অসুস্থতা গর্ভস্থ শিশুকে প্রভাবিত করে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের শিশুর জন্মগত ত্রুটির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। তাই গর্ভ–পূর্ববর্তী ডায়াবেটিক মায়েদের গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থায় এইচবিএ১সি করতে হবে।
গুরুতর ত্রুটি শনাক্ত হলে এমন হাসপাতালে প্রসব করাতে হবে, যেখানে জন্মের পরপরই নবজাতককে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কার্ডিয়াক বা সার্জিক্যাল ত্রুটিযুক্ত শিশুদের ক্ষেত্রে নবজাতক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অন্য বিশেষজ্ঞদেরও সম্পৃক্ত করা দরকার।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের ডেলিভারির সময় নবজাতকের শ্বাসরোধ, বার্থ ট্রমা ও আকারে অতিরিক্ত বড় শিশু প্রায়ই দেখা যায়। এসব জটিলতা নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
এই নবজাতকদের মধ্যে প্রধান সমস্যা হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া। অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই এটি ঘটে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়বিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তাই জন্মের পরপরই নিয়মিত গ্লুকোজ মনিটরিং জরুরি।
শিশুটি যদি স্বাভাবিক থাকে, তবে যত দ্রুত সম্ভব মাকে ব্রেস্টফিডিং শুরু করতে হবে—এটি তার গ্লুকোজ ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। আইডিএমদের পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেশি।
ফাহমিদা মাহমুদ
সিনিয়র নিউট্রিশন অফিসার, সিজিএইচআর
ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মূল অংশ হলো নিয়ন্ত্রিত খাদ্য ব্যবস্থাপনা। একজন সাধারণ গর্ভবতী ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতীর মূলত পুষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজনীতার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, শুধু শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণের ধরন ও পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য। একজন ডায়াবেটিক মায়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন রক্তে চিনি একধাপে বা একবারে না বেড়ে ধীরে ধীরে সরবরাহ হয়। সে জন্য জটিল শর্করাজাতীয় খাবার বেছে নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যব্যবস্থা নিরূপণ করার সময় গর্ভবতী মায়ের বয়স, উচ্চতা, গর্ভপূর্ব ওজন, গর্ভাবস্থায় ওজন, গর্ভপূর্ব ও গর্ভাবস্থায় শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য সমস্যা বিবেচনা করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বাড়তি ক্যালরি অনুযায়ী মা তাঁর সারা দিনের খাবার ছয়বারে ভাগ করে অর্থাৎ তিনটি মূল খাবার—সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার এবং দুই থেকে তিনটি হালকা নাশতা—মধ্যসকাল, বিকেল ও রাতে শোয়ার আগে ভাগ করে খাবেন। অবশ্যই এ সময় চিনি, গুড়, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বর্জন করবেন।
গর্ভাবস্থায় একজন ডায়াবেটিসের মা কীভাবে হিসাব করে খাবার খাবেন, তার জন্য ‘প্লেট মডেল’ একটি সহজ উপায় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি মাঝারি আকারের ৬ থেকে ৯ ইঞ্চি থালা হতে পারে, যার এক–চতুর্থাংশ ভরতে হবে শর্করাজাতীয় খাবার, যেমন ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়া, আলু, সাগু, বানরুটি, চিনি ছাড়া পাউরুটি, ওটস, নুডলস ইত্যাদি দিয়ে। এক–চতুর্থাংশ ভরতে হবে আমিষজাতীয় খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বিচিজাতীয় খাবার ইত্যাদি দিয়ে। বাকি অর্ধেকটা ভরতে হবে কম শর্করাযুক্ত বা পানিজাতীয় সবজি ও সব ধরনের শাক দিয়ে। যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পটোল, লাউ, চালকুমড়া, শিম, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি খাবার দিয়ে।
এ ছাড়া এ সময় একজন মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিডসহ আরও অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের চাহিদা একদিকে যেমন বাড়ে, পাশাপাশি উক্ত পুষ্টির অভাবে মা ও শিশুর বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি ও রোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আর এই চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে গর্ভাবস্থার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। তাই এ সময় গর্ভবতী মা প্রতিদিন অন্তত ১ গ্লাস ননি ছাড়া দুধ ও বিভিন্ন টক মৌসুমি ফল, যেমন আমড়া, জাম্বুরা, জলপাই, জামরুল, কালোজাম, পানিফল ইত্যাদি খাবেন; সঙ্গে অল্প তেল, কম লবণ, আর বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন।
এতে প্রতিদিন প্রতি বেলায় ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য উপাদান থেকে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন। একই সঙ্গে তাঁর পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রেখে অতিরিক্ত ক্যালরি বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সুপারিশগর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।
যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের অন্তত গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ প্রয়োজন; এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী নারী চিহ্নিত করতে পারিবারিক ইতিহাস, বয়স, বিএমআই, পূর্ববর্তী শিশুর ওজন এবং জন্মগত জটিলতা বিবেচনা করতে হবে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম অপরিহার্য।
গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে প্রসব করানো, যেখানে এনআইসিইউ ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ সুবিধা আছে।
গর্ভবতী মায়ের একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্য গ্রহণ করা দরকার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ট ম য ট রন ল ম ড স ন ব ভ গ স ত র র গ ও প রস ত ব দ য ৭৫ গ র ম গ ল ক জ নরম ল ড ল ভ র জনস ব স থ য আম দ র দ শ চ ক ৎসক র গ রহণ কর ইনফ কশন আম দ র ক দ র জন য ই আম দ র য সমস য র সমস য গ রহণ র প রজন ম র আশঙ ক ইনস ল ন প রসব র পরবর ত ক র পর এ জন য জন ম র পর ম ণ র র পর র আগ ই পর য য় ব র পর পর ব র ন র জন ন র পদ পর ক ষ র অন ক দ র পর সন ত ন জ ড এম অন য য় র পর ক দশম ক অবস থ চ কআপ সদস য সবচ য এ সময় ক সময় সরক র প রথম ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারে এই পাখি
পাখিদের মধ্যে অন্যতম বুদ্ধিমান পাখি হলো পাতিকাক। এরা শহর ও গ্রাম অঞ্চলে মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে। যেকোনো সমস্যার আভাস পেলেই কা কা কা করতে শুরু করে।
পাতিকাক দেখতে আকারে মাঝারি হয়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার বা ১৬ ইঞ্চি। এদের মাথার তালু, কপাল, গলা এবং বুকের উপরের অংশ চকচকে কালো রঙের হয়ে থাকে। ঘাড় এবং বুক ও পেটের সামনের দিকটা হালকা ধূসর বা ফ্যাকাসে ধূসর হয়। এদের শরীর, ঠোঁট, চোখ ও পা কালো।
আরো পড়ুন:
শীতকাল এলেই ‘স্নো ফেইরি’ হয়ে যায় বরফের বলের মতো
ময়ূর সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
পাতিকাকের ঠোঁট দাঁড়কাকের মতো, তবে একটু কম বাঁকা এবং ঠোঁটের গোড়ায় পালক বা গোঁফ দেখা যায়। পাতি কাক হলো সর্বভুক পাখি। এরা মূলত মাটিতে খাবার খোঁজে এবং মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট বা আবর্জনা খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়া এরা শিকারী পাখির ফেলে রাখা উচ্ছিষ্ট খায়। অনেক সময় দলবদ্ধভাবে শিকারী পাখিদের কাছ থেকে খাবার ছিনিয়েও নেয়।
এরা অত্যন্ত চতুর, কৌতূহলী এবং সামাজিক পাখি। বিপদের আশঙ্কা দেখলে দলবদ্ধভাবে কর্কশ ‘কা-কা-কা’ শব্দে সতর্কবার্তা দেয়। মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন ঋতু। স্ত্রী কাক সাধারণত আকাশি রঙের ৩-৬টি ডিম দেয় এবং স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কাকই ডিমে তা দেয়। কাককে পাখি জগতের অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী মনে করা হয়। তারা দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং মানুষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে শেখে।
কাকের গড় আয়ু সাধারণত পনের থেকে কুড়ি বছর। এদের গলায় স্বরথলি বা ভয়েস বক্স (Voice box) থাকায় এরা গায়ক পাখিও বলা হয়। তবে এই পাখি বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।
ঢাকা/লিপি